বহু নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে ব্ল্যাকমেইল: ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:০৭ অপরাহ্ন, ৬ই জুন ২০২৩


বহু নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে ব্ল্যাকমেইল: ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে
ছব: সংগৃহীত

‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে তার মাধ্যমে একাধিক নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে রাজধানীর রূপনগর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা মামলায় কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মো. মনির হোসাইন নামের একজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। 


সোমবার (৫ জুন) তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক আব্দুস সালাম রাশাদ ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো আশেক ইমামের আদালত।


মঙ্গলবার (৬ জুন) আদালতের রুপনগর থানার নিবন্ধন কর্মকর্তা সেলিম রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।


মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বাদীর ফেসবুকের মেসেঞ্জারে Mohammad Monir Hossain নামে ফেসবুক আইডি থেকে একটি মেসেজ আসে। বাদী মেসেজের রিপ্লাই করলে আসামী এসএসসি ব্যাচ ২০০১ সালের একটি ফেসবুক গ্রুপের (যার নাম- এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ) এডমিন বলে পরিচয় দেয়। এবং বাদীকে সে গ্রুপে সংযুক্ত হওয়ার জন্য ইনভাইট করে বাদীর মেসেঞ্জারে সরাসরি অডিও কল দেয় পরবর্তীতে বাদী তার গ্রুপে জয়েন করে। কিছুদিন পর বাদীকে সে গ্রুপের মডারেটর হওয়ার প্রস্তাব দিলে বাদী প্রস্তাব গ্রহণ করে মডারেটর হয় এবং আসামীর সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে শারীরিক সম্পর্ক করে। 


এর কিছুদিন পর বাদী বিভিন্নভাবে জানতে পারে আসামীর চরিত্র ভালো না ও আরও অনেক মেয়েকে তার গ্রুপের মডারেটর করে সুকৌশলে তাদের অনেকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। আসামীর সম্পর্কে এমন বিরূপ মন্তব্য শোনার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাদী আসামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করে। 


আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় কারাগারে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভিসি


কিন্তু আসামী মনিরের সাথে বাদীর অন্তরঙ্গ মুহুর্তের অনেক ছবি ও ভিডিও আসামী তার মোবাইলে সংরক্ষণ করে বাদীকে ব্লাকমেইল করে প্রতিনিয়ত তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করতো ও মারধর করতো। এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দিতো। ফলে বাদী বাধ্য হয়ে আসমীর সাথে প্রতিনিয়ত শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য হয়। 


এর আগে ২০২২ সালের শেষের দিকে বাদী আসামীর সাথে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব নাকচ করে। তারপর থেকে আসামী বাদীকে যেখানে পায় সেখানে খারাপ আচরণ করে এমনকি মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে। এছাড়াও বাদীর বাসায় গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আসামী ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ গ্রুপে’র বন্ধু জুবায়ের সানির মেসেঞ্জারসহ অনেকের কাছে বাদীর অন্তরঙ্গ মূহুর্তের অনেক ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে বাদীকে সামাজিকভাবে প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন করেছে।


গতকাল সোমবার সিআইডি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, মনিরের এসব কর্মকাণ্ড চলত রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তার গোপন ‘হেরেমখানায়’। বাইরে বাঁশের বেড়া, টিনের ঘর, দেখলে চোখে পড়ার মতো তেমন কিছু নয়। কিন্তু ভেতরে এসি রুম, উন্নত শয়নকক্ষ, অ্যাটাচ বাথ, ইয়াবা সেবনের ব্যবস্থা। মৌজ-মাস্তি করার সকল উপকরণ মজুদ সেখানে। ওই হেরেমখানায় ছিল একাধিক গোপন ক্যামেরাও। ওই ক্যামেরায় তার অনৈতিক কাজের সব কর্মকাণ্ড রেকর্ড করে রাখতেন মনির।


সিআইডি আরও জানায়,  ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে মনির অভিযোগকারী নারীসহ একাধিক নারীর সাথে গ্রুপের মডারেটর বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ভিডিও কলে কথা বলে তা স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখতেন। পরে সেই ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন। শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ভিডিও করে রাখেন মনির। অভিযোগকারীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী অফিসে চলে গেলে কখনো কখনো তিনি ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে হানা দিতেন। তার অত্যাচারে ওই নারীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হন। এছাড়াও বিভিন্ন নারীকে নিজের কব্জায় নিয়ে টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্য লোকদের কাছে পাঠাতেন মনির। ভুক্তভোগী নারীরা সামান্য টাকা পেলেও মনির ভাগ পেতেন মোটা অঙ্কের টাকা।


জেবি/ আরএইচ/