কুষ্টিয়ায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় রোগীর স্বজনেরা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪৮ অপরাহ্ন, ৮ই জুন ২০২৩


কুষ্টিয়ায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় রোগীর স্বজনেরা
অ্যাম্বুলেন্স

কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গেট সংলগ্ন  বিভিন্ন  ফার্মেসির মালিকদের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কারনে প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছে হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা মুমূর্ষু রোগীর স্বজনেরা। 


অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা  এই সিন্ডিকেটের নামে তৈরি করে রোগীর স্বজনদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। 


কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সামনে সারি বেঁধে অলস দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুলেন্স। রোগী পরিবহনে চাহিদা যতটা, তার চেয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বেশি। কিন্তু রোগী পেলেই ভাড়া হাঁকা হয় অনেক বেশি। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স না নিয়ে অন্য কোথাও থেকে কম টাকায় ভাড়া করবেন, সে সুযোগ নেই। 


হাসপাতাল কেন্দ্রিক ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট’ রোগীকে বাইরের অ্যাম্বুলেন্সে তুলতেই দেবে না। তাদের এক কথা, অন্য অ্যাম্বুলেন্স নিতে হলে তাদের টাকা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকদের ঐক্য রয়েছে।


হাসপাতালকে কেন্দ্র করে অ্যাম্বুলেন্সের মতো একটি জরুরি পরিবহন সেবাকে ঘিরে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে বছরের পর বছর ধরে। সব কিছু জেনে ও বুঝেও প্রতিবাদ করার মত কেউ নেই এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। তার অন্যতম কারন তারা এই সেবামূলক পরিবহন পরিচালনা করেন। 


অথচ মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা সহজ করতে সরকার কর ছাড় দিয়ে রেখেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক তালিকা অনুযায়ী, দেড় হাজার সিসি (ইঞ্জিন ক্ষমতা) পর্যন্ত একটি পুরোনো বা রিকন্ডিশন্ড অ্যাম্বুলেন্স আমদানিতে মোট করভার ৩১ শতাংশ। একই ক্ষমতার একটি মাইক্রোবাস আমদানিতে কর দিতে হয় ১২৮ শতাংশের মতো। সরকার অবশ্য কর ছাড় দেওয়ার বাইরে আর কিছুই করেনি। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই।


সুত্রে জানা যায়,কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের গেটের সামনে মোট ৪৩ টি অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ১০ টি গাড়ির কাগজপত্র ফিটনেস ঠিক আছে। অন্য ৩৩ টি গাড়ি ফিটনেস বিহীনই চলছে। এসব ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশের কেউই কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেনা। প্রশাসন ম্যানেজ করেই এই পরিবহনগুলো রাস্তায় চলাফেরা করছে বলেও জানিয়েছেন একটি বিশ্বস্থ সুত্র। 


এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়া একজন রোগীর স্বজন জানান,মেহেরপুর থেকে আমার একজন মুমূর্ষু রোগীকে জরুরী চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহীতে রেফার্ড করা হয়। 


আমরা যেই অ্যাম্বুলেন্স মেহেরপুর থেকে নিয়ে এসেছিলাম সেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাজশাহী যেতে চাইলে কুষ্টিয়ার এই অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট আমাদের যেতে দেয়নি। তারা তাদের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাজশাহী যেতে বলে এবং আমাদের মেহেরপুরের অ্যাম্বুলেন্সের চাওয়া ভাড়ার চাইতেও অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে তারা আমাদের রাজশাহী পৌছে দেন।


আমরা গরীব মানুষ আমাদের সাথে এমন আচরন করা তাদের ঠিক হয়নি। আমার মত আরও অনেকেই এমন প্রতারনার শিকার যাতে না হয় আমি প্রশাসনের নিকট তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।  


এছাড়া আরও জানা যায়, কোন রুগী অ্যাম্বুলেন্স করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পথিমধ্যেও যদি মারা যায়।সেই মরা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে মৃত্যু সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য যদি আসে তখনও এই সিন্ডিকেট এখানে বানিজ্য করার জন্য লাশ নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সে যেতে দেয়না। লাশ আসবে এক অ্যাম্বুলেন্স আর লাশ নিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে এই সিন্ডিকেটের মধ্যে থেকে নেওয়া একটি গাড়িতে। শুধু তাই নয় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স সব সময় হাসপাতালের ভিতরেই রেখে দেয় এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।  যদিও হাসপাতাল কতৃপক্ষ এই অ্যাম্বুলেন্স গুলো হাসপাতালের গেটের বাইরে রাখার জন্য বারবার সতর্ক বার্তা জানিয়েছেন। 


এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার পালের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা  হলে তিনি বলেন, এই রকম অনেক অভিযোগ আমার কাছে আসার পরে আমি অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের কাছে চিঠি প্রেরন করেছিলাম। তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরেও যদি তারা এভাবেই কাজ চালিয়ে যায় তাহলে আগামী রবিবার কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মাসিক আইনশৃংখলা কমিটির মিটিংয়ে তুলে ধরবো। প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। তারা এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের আশ্বাস জানিয়েছেন। 



আরএক্স/