রোগীর মুখের হাসির চাইতে আনন্দের আর কিছু নাই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:২৪ অপরাহ্ন, ৮ই জুন ২০২৩
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস-২০২৩ দিবস পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বেলা ১১ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসটি উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা ও শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশে ব্রেন টিউমার সার্জারী: সাফল্যের ৫২ বৎসর' শীর্ষক কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনস এর আয়োজন করে। এবারই প্রথম দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গণসচেতনতামূলক শোভা যাত্রা ও আলোচনা সভার শুভ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনস এর সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনস এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আতিকুর রহমান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নিউরো সার্জন ডা. ইসমে আজম জিকো, নিনস্ এর নিউরো সার্জন ডা. জিয়াউদ্দিন ব্রেন টিউমার এর উপর পৃথক তিনটি পেপার প্রেজেন্টেশন করেন।
সেমিনারে বলা হয়, উন্নত বিশ্বে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মাঝে ১৫ জন মানুষ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়। তবে তৃতীয় বিশ্বের প্রতি এক লক্ষ মানুষের মাঝে ৪ জন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন ধরণের রেডিয়েশনসহ বিভিন্ন কারণে ব্রেন টিউমার হতে পারে। সেমিনারে বক্তারা বলেন, তরুণ প্রজন্মের নিউরো সার্জনরাই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নেতৃত্বে দেবে বলে বক্তারা বিশ্বাস করেন। একই সঙ্গে তরুণ নিউরো সার্জনরা অনেক দক্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসা দিতে পারদর্শী। আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর ব্রেন টিউমার অপারেশনে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনস এর সাইন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. মোতাশিমুল হাসান শিপলু, প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ ফরিদ রায়হানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিউরোসার্জনস ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিএসএমএমইউর রেসিডেন্টরাই সেরা: উপাচার্য
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নিউরো সার্জনরা মানুষের জীবন বাঁচায়। ব্রেন টিউমার হলে মানুষ মারা যাওয়ার হাত থেকে নিউরো সার্জনরা জীবন বাঁচায়। বাংলাদেশের নিউরোসার্জনরা বিশ্বমানের। তারা বাংলাদেশে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে সেবা দিতে সক্ষম। চক্ষু অপারেশনের আগে রোগীরা আমাকে দেখে না। অপারেশনের পর রোগী যখন আমাকে দেখে হাসি দেন ওইটিই আমার জন্য দোয়া। রোগীর মুখের হাসির চাইতে আনন্দের মতো আর কিছু নাই।
তিনি আরও বলেন, আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকল শ্রেণির মানুষ সেবা নেন। আমাদের এখানে মাননীয় প্রধান বিচারপতি চিকিৎসা নেন, আমাদের এখানে মাননীয় স্পিকারের স্বামী চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিনিয়ত এমপি, মন্ত্রীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসা সেবা পেয়ে সবাই সন্তুষ্টও ।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউর অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ৯ হাজার রোগী, ভর্তি ২ হাজার রোগী সেবা নেন। আমার এখানে যদি সিঙ্গাপুরের মত চিকিৎসা দিতে চাই, একজনের জন্য একটি হাসপাতাল, সেই পরিবেশ তো আমি দিতে পারব না। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর খুলনা থেকে রোগী এসে সেবা নিয়ে বিকালে বাড়ি চলে যান। আগামীতে নিউরোসার্জারি বিভাগে গামা নাইফ সার্জারি চালু করতে চাই। সবাই সহযোগিতা করলে ২০৪১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট হেলথ ব্যবস্থা চালু করতে পারব।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৭ সালে বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিউরো সার্জারিতে এম এস কোর্স চালু করা হয়। দেশের ২০টি বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে নিউরোসার্জারী চালু আছে। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২০,০০০ মানুষ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০০০ ব্রেইন টিউমার সার্জারী হচ্ছে। নিউরোসার্জিক্যাল সেন্টারগুলোকে আধুনিক যন্ত্রপাতি সুসজ্জিত করলে এবং দেশের সকল জেলা হাসপাতালে নিউরোসার্জারী চালু করলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ব্রেন টিউমার, হেড ইনজুরী প্রভৃতি বিষয়ে চিকিৎসার সুযোগ পাবে। সময়মত ব্রেন টিউমার অপারেশন করলে ব্রেন টিউমার ভালো হয় এবং মৃত্যুঝুঁকি ও পঙ্গুত্ব কমে যায়।
জেবি/এসবি