বিএসএমএমইউতে মরণোত্তর দেহদানকারী ও অঙ্গীকারকারীদের সংবর্ধনা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:১৮ অপরাহ্ন, ১১ই জুন ২০২৩


বিএসএমএমইউতে মরণোত্তর দেহদানকারী ও অঙ্গীকারকারীদের সংবর্ধনা
ছবি: জনবাণী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মরণোত্তর দেহদানকারী ও দেহদানের অঙ্গীকারকারী দেশের অর্ধশত বিশিষ্ট বরেণ্য মহান ব্যক্তির মহতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। 


‘এমন মহৎ কাজে যারা নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, যারা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন এবং হচ্ছেন সত্যিই তাদের মৃত্যু নাই, তারা মরেও অমর, তাদের ক্ষয় নাই। 


বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এমন মহান কর্মকে উল্লেখ করেছেন, সদকায়ে জারিয়া হিসেবে। 


উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট, রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আঞ্জুমান বানুর নিরলস প্রচেষ্টা, শ্রম, প্রজ্ঞাময় ধ্যান, জ্ঞান, কর্মতৎপরতা বাংলাদেশে মরণোত্তর দেহদান কার্যক্রম, কর্ণিয়া দানে মানুষের উৎসাহ সৃষ্টি এবং ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। 


মরণোত্তর দেহদানে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ, আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। একই সাথে ব্রেনডেথ রোগীর অঙ্গদানের মাধ্যমে সফলভাবে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করায় দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে যোগ হয়েছে নতুন মাইলফলক। 


রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে অনুষ্ঠিত এমন মহতী আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যারা মরণোত্তর দেহ দান করেছেন বা করবেন অবশ্যই তাদের এই দান সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য বলে আমাদের বিশ্বাস। অঙ্গদানের মাধ্যমে অন্যকে জীবন দান যেনো সমগ্র মানজাতিকে জীবন দানের মতো, সমগ্র পৃথিবীকে জীবন দানের মতোই বিশাল ও উত্তম কর্ম। যারা এমন মহৎ কাজে যুক্ত হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়া হবে এবং তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ফান্ড সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হবে। একই সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে, রোবটিক সার্জারি চালু করা হবে। রোগীদের জন্য প্রয়োজন নতুন নতুন যা যা দরকার তা নিশ্চিত করা হবে।


আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউর রেসিডেন্টরাই সেরা: উপাচার্য


অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত যার মাতা প্রীতিতি দেবী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহ দান করেছেন তিনি বলেন, আমার মায়ের মতো আমিও মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করছি। তবে বাংলাদেশে এ ধরণের অনুষ্ঠান এই প্রথম ও বিরল। মরণোত্তর দেহ দানের মহৎ বিষয়টি যেমন গর্বের তেমন একটি মহৎ স্থানে নিজেকে পৌঁছানোর বিরাট সুযোগ।


তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রেরণাদায়ক ও এক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিরাট অবদান রাখবে।


মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, মৃত্যুর পরেও যদি এ নশ্বর দেহ গবেষণা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে লাগে, যদি নিজের চোখের কর্ণিয়া দান করে অন্যকে পৃথিবীর আলো দেখানো সম্ভব হয় সত্যিই তা পরম উৎকৃষ্ট বিষয়।


এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আঞ্জুমান বানুর সভাপতিত্বে এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমির সঞ্চালনায় ও  এনাটমি বিভাগের রেসিডেন্ট ছাত্রছাত্রীদের ‘আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা’ সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই মহতী আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার প্রমুখসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


জেবি/ আরএইচ/