কুষ্ঠ রোগের রেড জোন মৌলভীবাজার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:১১ অপরাহ্ন, ১৩ই জুন ২০২৩


কুষ্ঠ রোগের রেড জোন মৌলভীবাজার
ছবি: জনবাণী

মৌলভীবাজারকে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রোমাটোসিস ব্যাকটেরিয়া বা কুষ্ঠ রোগের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সচেতনতার ও অসাবধানতার অভাবে কুষ্ঠ রোগে বেশি আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা।


মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ৬৬০জন কুষ্ঠরোগী রয়েছেন মৌলভীবাজারে। সিলেট বিভাগে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৯৮ শতাংশ রোগী এ জেলার। তবে হীড বাংলাদেশের হিসাবে জেলার সাত উপজেলায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৪০ ও বর্তমান রোগী আছে ১২৬ জন।


কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত জেলার কুলাউড়া উপজেলার হিঙ্গাজিয়া চা বাগানের উপর লাইনের নারী চা শ্রমিক গীতা মৃধা বলেন, কাজে গেলে শরীর ঝিনঝিন করে। মে মাসে হাসপাতালে গেলে আমার কুষ্ঠ ধরা পড়ে।


একই বাগানের আরেক রোগী মুন্নি দাস (৩২) বলেন, ৮ মাস ধরে চর্মরোগ মনে করে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। বাগানের হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে কুষ্ঠ রোগ। এখন নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজে যেতে হচ্ছে। অনেকে আমাকে এড়িয়ে চলে। তখন খুব খারাপ লাগে।


জেলার রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের বানারসি কুর্মির (৮০) বলেন, ‘চিকিৎসা নিয়ে এখন পঙ্গুত্বের অভিশাপে জীবন কাটাচ্ছি। হাত ও পা বাঁকা হয়ে আছে। কোনো মতে চলাফেরা করি। আগে হীড বাংলাদেশের লোকজন এসে খোঁজ খবর নিত। এখন আর কেউ আসে না।


তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে আমি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিলাম। ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত শরীরে রোগের ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে। এরপর লক্ষণ দেখা দেয়। প্রথম লক্ষণ হলো শরীরের যেকোনো স্থানে সাদা অথবা বাদামী রঙের দাগ দেখা দেয়। আক্রান্ত স্থানের অনুভূতি থাকে না। শরীর ঝিনঝিন করে। হাত পা টানে গা ও ব্যথা হয়। অনেকেই অসচেতনতার কারণে নিয়মিত ঔষধ খায় না। আমার সাথের ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। লোক লজ্জার ভয়ে অনেকে প্রথম দিকে প্রকাশ করে না। পরে বড় ক্ষতিতে পড়তে হয়।


আরও পড়ুন: লন্ডনে মেয়র হলেন মৌলভীবাজারের জোৎস্না


বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চা শ্রমিক নেতা দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকরা অজ্ঞ তারা কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। তারা নিম্নমানের জীবনযাপন করতে হয়। এ কারণেই চা শ্রমিকরা কুষ্ঠ রোগে বেশী সংক্রমিত হচ্ছে।


হীড বাংলাদেশের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জিয়াউদ্দিন বলেন, মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানগুলোতে গড় হিসাবে প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের মধ্যে দুই জন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নতুনভাবে লেপ্রসি ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে জেলায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৪০ জন। এর আগে অসংখ্য রোগী পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।


তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে রোগী ছিলেন ১০৫ জন, ২০২১ সালে ২৫৭ জন, ২০২০ সালে ১৯১ জন ও ২০১৯ সালে ৩৫৪ জন। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম সীমিত থাকায় রোগীর তথ্য পরিপূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।


মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের পরিসংখ্যায় মৌলভীবাজার শীর্ষে। এই জেলায় কুষ্ঠ রোগী আছেন ৬৬০ জন। এদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্করাই বেশি। এই জেলাকে কুষ্ঠ রোগের রেড জোন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আক্রান্তের ৯৮ শতাংশই চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায়। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে।


জেবি/ আরএইচ/