ঈদের ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে আসুন চায়ের রাজ্যে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:০৫ অপরাহ্ন, ২৭শে জুন ২০২৩


ঈদের ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে আসুন চায়ের রাজ্যে
চায়ের রাজ্যে

তানভীর চৌধুরী, কমলগঞ্জ মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য এক উপাখ্যান। এখানকার ছোট-বড় চা বাগানগুলো যেন সবুজের আচ্ছাদনে গড়ে তুলেছে এক প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ। চারদিকের এই সবুজের সমাহার হরহামেশাই প্রকৃতিপ্রেমীদের সম্মোহিত করে। অপরূপ স্থান দেখতে পর্যটকরা চলে যান মৌলভীবাজারে। এই অনন্য প্রাকৃতিক শোভা তাদের দারুণ আকর্ষণে টানে। আর তাই পর্যটকরা বারবার ফিরে যান চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারের বুকে। থাকার জন্য গড়ে উঠেছে দারুণ সব রিসোর্ট। আর এই রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে বাঁশ ও ছনের দৃষ্টিনন্দন অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্ট।


যারা সবুজ গাছপালা, নীরবতা,পাখির কিচিরমিচির, শুকনো পাতার মড়মড়ে শব্দ পছন্দ করেন এমনকি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সঁপে দিতে চান, সবই যেন একাকার হয়ে মিশে আছে অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টে। গ্রাম ঘোরার সুযোগ যাদের নেই, তারা সত্যিকারের আদর্শ গ্রামের অনুভূতি পাবেন এখানে। এটি গড়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বনগাঁও গ্রামে।


বাঁশ ও ছনের তৈরি ইকো রিসোর্টটি সহজেই চোখ জুড়াবে দর্শনার্থীদের। এখানে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে তৈরি ১৮টি ছোট বড় কটেজ। এর মধ্যে এসি নন এসি রয়েছে।


সরজমিনে অরন্যনিবাস ইকো রিসোর্ট গেলে দেখা যায়, প্রকৃতি ভিত্তিক ইকো রিসোর্ট এটি। ২০২১ সালে এর ভূমি উন্নয়ন এবং নির্মাণের পর্যায় শুরু হয় ও রিসোর্টটি ক্রমাগত উন্নয়নের অধীনে রয়েছে,তবে একই সময়ে এটি কয়েকটি কক্ষ এবং অন্যান্য সুবিধা সহ চালু রয়েছে।


রিসোর্টে থাকার ঘর, সুইমিং পুল, ডাইনিং স্পেস, বারবিকিউ জোন, ওয়টার লেক, ওয়াচ টাওয়ার,বাচ্চাদের খেলার মাঠ, ইনডোর এবং আউটডোর গেমস, তাঁবু, ট্রি হাউস,অ্যাম্ফি থিয়েটার এবং আরও অনেক সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া পর্যটকদের জন্য রয়েছে ঐতিহ্যবাহী খাবার ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে রিসোর্টে তাদের মানসম্পন্ন সময় কাটাতে বিভিন্ন জায়গায় থেকে আসছে। অরন্যনিবাস ইকো রিসোর্ট সর্বোচ্চ অতিথী পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।


সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। ভ্রমণ প্রিয় মানুষ বিভিন্ন দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসবে সুন্দরের টানে এই কমলগঞ্জে। ভ্রমন প্রিয় পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ও ঈদ আনন্দকে বহুগুন বাড়িয়ে দিতে নানা আয়োজন নিয়ে সেজে উঠছে। মুখোরোচক খাবার, থিমেটিক হবিট, কটেজ,পড হাউজ, সুইমিংপুল, বারবিকিউ ও কালচারাল নাইটসহ আরও অনেক আয়োজন থাকছে এবারের এই ঈদে।


ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্রী শারমিন আনাম তান্নী, তুবা ও তাহা জানান, ‘দেশে বিভিন্ন নামীদামি কটেজ আছে, তবে এই কটেজটা একটু ব্যতিক্রম। এই কটেজটার মধ্যে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খোঁজে পাওয়া যায়। তাই ফেইসবুকের মাধ্যমে এর লোকেশন খুঁজে এখানে আসছি।


এদিকে সিলেট পার্কভিউ নার্সিং কলেজের ছাত্রী বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রী জানান, ‘আমরা সিলেট থেকে কয়েকবার এখানে এসছি পরিবার পরিজনের সাথে।আমার মতে এ রিসোর্ট হওয়ার পর এলাকাটা এখন অনেক পরিচিতি লাভ করেছে। হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত এ এলাকায় আসছে জানতে পারছে গ্রামগঞ্জের ইতিহাস এতিহ্য।


অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টের পরিচালক মো. এহ্সান কবির সবুজ বলেন,‘ আমাদের সবগুলো কটেজের রুমগুলো স্পেশাল করে তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে প্রতিটা রুমে এসি। কটেজের রুমগুলোর ভাড়া ২ হাজার থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত। এখানে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ,যা গ্রাম বাঁশ ও ছনের দৃষ্টিনন্দন করার জন্য আমরা ব্যতিক্রম করে ঘরে তুলেছি এই ইকো রিসোর্টটি। তাছাড়া রয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা। এটা বাংলাদেশের অন্যান্য ইকো রিসোর্টের চেয়ে পুরোটাই ব্যতিক্রম।


অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টের পরিচালক আরও বলেন, প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও ছুটি কাটাতে চাইলে অরন্যনিবাস হবে আপনার জন্য দূর্দান্ত এক অপশন। চমৎকার গোছানো এবং গাছা গাছালিতে ভরা এই রিসোর্টে রয়েছে বড় পর্দায় খেলাও ছবি দেখার ব্যবস্থা, বোটিং, নিরিবিলি সময় বা গল্প করার জন্য রয়েছে বেশকিছু বসার স্থান।


কিভাবে যাবেন অরন্যনিবাস ইকো রিসোর্টে?

দেশের যে কোনো স্থান থেকে বাস, ট্রেন বা হেলিকপ্টার যোগে মৌলভীবাজার যাওয়া যাবে, সেখান থেকে এই রিসোর্টে যেতে পারেন। বাস বা রেলপথে এলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে করে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ বা শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে। দেশের সব আন্তঃনগর ট্রেন শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ ও শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। ফলে আগেই জেনে নিতে হবে কোথায় নামতে হবে। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে নামলে সেখান থেকে বাস ও সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যায়। সেখান থেকে অটোরিকশায় সহজেই ‘অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টে’ পৌঁছানো যায়। যাদের প্রচুর হাঁটার অভ্যাস আছে তারা ভানুগাছ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটেও যেতে পারেন সেখানে। আবার ভানুগাছ ও শমশেরনগর নামলে অটোরিকশা করে সেখানে পৌঁছাতে পারেন। ঢাকা বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে আসতে চাইলে মৌলভীবাজারগামী বাসে ওঠে নামতে হবে শ্রীমঙ্গলে। সেখান থেকে একইভাবে যাওয়া যায়। এ ছাড়া বিমানে এলে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেমে বাস বা ট্রেনে আসা যাবে শমসেরনগর, সেখান থেকেই আপনি এই অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টে আসতে পারেন। তাছাড়া আসার সময় দেখতে পারবেন চা-বাগান,সুপরিচিত মাধবপুর লেক,বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ,পদ্মছড়া লেক,পাত্রখলা লেক,লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম জলপ্রভাত।


আরএক্স/