কালের সাক্ষী নতুন ভারেঙ্গা জমিদার বাড়ি


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৪২ অপরাহ্ন, ২রা জুলাই ২০২৩


কালের সাক্ষী নতুন ভারেঙ্গা জমিদার বাড়ি
ছবি: জনবাণী

প্রায় একশ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বুকে লালন করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নতুন ভারেঙ্গা জমিদার বাড়ি। 


পাবনার বেড়া উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে নতুন ভারেঙ্গা গ্রামে এ জমিদার বাড়িটির অবস্থান। সে আমলের জীবন -জীবিকা, চাল-চলন, আনন্দ-বিনোদন আর সৌখিনতার পরিচয় পাওয়া যায় এ জমিদার বাড়িটি দেখলে। মহলটির স্থাপত্য শৈলী অন্য জমিদার বাড়ির থেকে আলাদা। এর বাহারি নকঁশী কারুকার্য আর অপরুপ নকঁশা করা স্তম্ভগুলো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে আজো হাতছানি দিয়ে ডাকে। 


জমিদার বাড়টি দেখতে এসে মানুষ এখনো হারিয়ে যায়, পুরোনো দিনের সেই স্মৃতির সাগরে। এই জমিদার বাড়িটি নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানা লোককথা লোকস্মৃতি। তবে সংস্কারের অভাবে অযত্ন অবহেলায় বাড়িটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ক্রমাগত ভেঙে পড়েছে ইট পাথর সুড়কি। যা দেখে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করেন। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমিদার সন্তোষ কুমার রায় ছিলেন নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের জমিদার। তিনি ১৯৩৮ সালে সাফুল্লা মৌজায় সোনাপদ্ম গ্রামে ১০ একর জায়গা জুড়ে অপূর্ব নির্মাণ শৈলী  কারুকাজ সম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটির বামদিকে রয়েছে কাচারি ঘর, যেখানে বসে জমিদার প্রজাদের থেকে খাজনা আদায় করতেন। বাড়িটির সামনে এবং পিছনের অংশ জুড়ে রয়েছে মন্তবড় পদ্ম দিঘি। সে আমলে ছেলে- মেয়েদের লেখা- পড়ার  কোনো সুব্যবস্থা ছিলনা বলে তৎকালীন সময়ে স্কুল নির্মাণের জন্য জায়গাও দান করেছিলেন তিনি। যেটা এখন নতুন ভারেঙ্গা একাডেমি স্কুল নামে পরিচিত। 


আরও পড়ুন: রোজায় বেড়ার ঐতিহ্যবাহী ঘোল-মাঠা বিক্রির চাহিদা বেড়েছে


জমিদার বাড়ির সবাই  স্বাধীনতা পূর্ববর্তী দেশে যুদ্ধ শুরু হলে, এ দেশ ছেড়ে চলে যায়। পরে এই জমিদার বাড়ির দায়িত্ব নেয় জমিদার সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরীর ছেলে সুমিত কুমার রায় চৌধুরী। বেশ কয়েক বছর পর তিনিও লন্ডন প্রবাসী হয়ে যান। 


বর্তমান জমিদার বাড়িটি দেখাশোনা করেন  অসিত কুমার নামের এক ব্যক্তি। 


সরেজমিনে গেলে কথা হয় এ জমিদার বাড়ির পারিবারিক দর্জি গোলাম রহমানের সাথে তিনি বলেন, জমিদার সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরী বাবু ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী স্বভাবের বড় মনের মানুষ। আমি দীর্ঘ দুই দশক জমিদার বাড়ির সকলের ব্যবহারের কাপড়- চোপড় নিজ হাতে তৈরি করছি। জমিদার বাবু দেশ ছেড়ে চলে যাবার আগে আমাকে তার ব্যবহার করা একটি খাট (পালং) দিয়েছিল সেটা এখনো আমার ঘরে দিব্বি জলজল করছে। 


স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন জানান , নতুন ভারেঙ্গার ঐতিহ্য জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে জেনেছি। সরকারি ভাবে বাড়িটি সংস্কার করা হলে আগামী প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। কালের সাক্ষী এই জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য সরকারের প্রত্নতত্ত্ব হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।


জেবি/ আরএইচ/