কেন পড়বেন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:২৪ অপরাহ্ন, ৯ই জুলাই ২০২৩


কেন পড়বেন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে
ছবি অলংকরণ। জনবাণী

মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জনি: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাধিক পরিচিত অনুষদ হচ্ছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ। খুব অল্পসংখ্যক সরকারি প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ রয়েছে। মূলত এই অনুষদের অধীনে পড়ানো হয় বিবিএ এবং এমবিএ প্রোগ্রাম এবং এই ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অন্যতম প্রসিদ্ধ বিভাগ হচ্ছে ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ব্যবস্থাপনার সার্বিক নীতি, তত্ত্ব ও পদ্ধতি পড়ানোর মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতি জানতে পারে, পাশাপাশি সামাজিক ও ব্যক্তি জীবন পরিচালার ক্ষেত্রে নানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। একজন শিক্ষার্থী  অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে কেন ‘ব্যবস্থাপনা’ বিষয়টিকে পছন্দ করবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জনি।


একের অধিক বিষয়ে জ্ঞানার্জন-


ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়লে যে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে বিষয়টা ঠিক তা নয়। ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ এবং তা নিজের জীবনে প্রয়োগের সুযোগ। এই বিভাগটিতে নিজ বিভাগের বাইরেও পড়ানো হয় হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার এপ্লিকেশন, ব্যবসায় আইনসহ আরও বেশি কিছু বিষয় যা একজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীর জ্ঞানকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করবে।


কী পড়ানো হয় এই বিভাগে?


একজন শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনার সার্বিক নীতি, মনস্তাত্ত্বিক আচরণ পদ্ধতি, মডেল ও তত্ত্ব অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে যেমন প্রশাসনিক বিজ্ঞান, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও নীতিমালা, সংস্থার ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদের উৎকৃষ্ট ব্যবহার ও যথাযথ পরিচর্যা এবং বিশ্লেষনধর্মী জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, তেমনি জানতে পারেন ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা পদ্ধতি—যা থেকে নিশ্চিতভাবে উপকৃত হচ্ছে দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র। এছাড়াও এই বিভাগটিতে পঠিত হয় অন্যান্য অনুষদ যেমন: বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের বেশ কিছু বিষয়, যে বিষয়গুলো অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী অন্যান্য অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিষয় সম্পর্কেও প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে এসাইনমেন্ট তৈরির মাধ্যমে কর্পোরেটের জন্য একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে তৈরি হয়।


কারা পড়বে এই বিভাগে?


যে শিক্ষার্থী ব্যক্তি, পারিবারিক, পেশা ও জাতীয় জীবনসহ সর্বক্ষেত্রে দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চান এবং যারা নিজেকে উচ্চতর স্তরে দেখতে চান তাদের জন্যই ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এছাড়াও যারা তত্ত্বীয় জ্ঞানের সঙ্গে বাস্তব জ্ঞান অর্জন ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, স্বাধীন পেশা যাদের পছন্দ ,সমাজকে যারা নেতৃত্ব দিতে চায়, সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে চান, সফল উদ্যোক্তা হতে চায় এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে তারাই পড়বে ব্যবস্থাপনা বিভাগে। যে সকল শিক্ষার্থী  এইচএসসিতে বাণিজ্য গ্রুপ থেকে পড়াশুনা সম্পন্ন করেছেন, তারাই এই বিভাগের বেশি সংখ্যক সিট দখল করে থাকেন, তবে এর বাইরেও বিজ্ঞান এবং মানবিকের জন্যেও অল্প সংখ্যক সিট বরাদ্দ আছে। 


কেন পড়বে এই বিভাগে?   


ব্যবস্থাপনা বিভাগে বৈচিত্র্যময় কোর্সের সমাহার রয়েছে। যুগোপযোগী এসব কোর্সের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকেন। শিক্ষাজীবন থেকেই এদের মধ্যে একধরনের পেশাদারিত্বের লক্ষণ দেখা যায়। ফলে চাকরিদাতারা যে ধরনের স্মার্ট ও দক্ষ কর্মী খুঁজেন, তার প্রত্যেকটি বিষয়ই পাওয়া যায় এই বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্নকারীদের মধ্যে কারণ চার বছরের বিবিএ প্রোগ্রামে অসংখ্য অ্যাসাইনমেন্ট, ফিল্ড ওয়ার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর, প্রেজেন্টেশনে অংশ নিতে হয় শিক্ষার্থীদের এবং শেষ বর্ষে তাদেরকে কোন একটি কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে হাতে কলমে কাজ শিখতে হয়। অর্থাৎ জব মার্কেটে যাওয়ার আগে তাদের একটি মানসম্মত প্রস্তুতি গ্রহণ হয়ে থাকে। এছাড়াও এই বিভাগের ১ বছরের এমবিএ প্রোগ্রামে অধ্যয়ন শিক্ষার্থীকে আরও মজবুত করে দেয় এবং চাকরী ক্ষেত্রে আরও দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করে। প্রশাসনিক, ব্যবস্থাপনিক পরিকল্পনা এবং নির্ধারনে দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং এমবিএ পাঠ্যক্রম বিভিন্ন বিষয়গুলি শামিল করে যা শিক্ষার্থীদেরকে অনেক বিষয়ে স্পেশালাইজড জ্ঞান প্রদান করতে সক্ষম করে। এটি তাদেরকে আলোচনামূলক লেখা, প্রতিবেদন, রিসার্চ কাজ, ক্রিয়েটিভ চিন্তা, সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণের দক্ষতা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।


আরও পড়ুন: কেন ভর্তি হবেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে


চাকরির ক্ষেত্র-


ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের পরিধি ও চাকরির বাজার ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। দেশ-বিদেশে সরকারি ও বেসরকারি সব চাকরিতেই ব্যবস্থাপনার শিক্ষার্থীদের প্রবেশের সুযোগ ও অগ্রাধিকার রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি রয়েছে ব্যাংকে চাকরির সুযোগ। এছাড়াও বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ থাকছে এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রায়োগিক ব্যবস্থাপক, পণ্য ব্যবস্থাপক, প্রকল্প পরিচালক ও ব্যবস্থাপক, স্টকব্রোকার, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তা, সরবরাহ এবং বিতরণ ব্যবস্থাপক, বিপনন নির্বাহী, জুনিয়র পরিচালক, বিক্রয় নির্বাহী, সিস্টেম বিশ্লেষক, ইউএক্স, ব্যবস্থাপক / পরিচালক, ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক এবং ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা হিসেবে চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছে।


ভবিষ্যৎ কেমন?  


বর্তমান বিশ্ব অনেকাংশেই টিকে আছে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর আর প্রতিষ্ঠান সুশৃংখল ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষ লোকজন প্রয়োজন। তাই চাকরির বাজারে ব্যবস্থাপনা বিভাগ তার চাহিদা সর্বদাই সচল রাখতে পারবে। এই বিভাগটি প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিভাগ এবং এই বিভাগে অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী জানতে পারবে কিভাবে একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যা তাদের একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যেহেতু একজন ব্যবস্থাপকের অনেক বেশি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, ধৈর্য্যশীল ও দূরদর্শী হতে হয় যার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের কার্যত সফলতা ও ব্যর্থতা, সেই পথটিই সুগম করে দেয় এই বিভাগটিতে অধ্যয়ন। সুতরাং সকলদিক বিবেচনায় সন্দেহাতীতভাবেই এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ উন্নত এবং সমৃদ্ধ হবে যদি তারা নিজেকে ঠিক পথে পরিচালিত করে কাঙিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে।    


লেখক: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।


অনুলিখন: মোছা.জান্নাতী বেগম শিক্ষার্থী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।


জেবি/ আরএইচ