ভোলায় হ্যান্ড পেইন্টিং করে স্বনির্ভর নারী উদ্যোক্তা প্রমিতা এনি
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:১০ অপরাহ্ন, ১০ই জুলাই ২০২৩
ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের মুছাকান্দি গ্রামের নারী উদ্যেক্তা প্রমিতা এনি হ্যান্ড পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছেন।
জানা যায়, সংসারের কাজের ফাঁকে-ফাঁকে ঘরে বসে তৈরি পোশাকে নিপুঁণ হাতে অনুপম চিত্রকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন নান্দনিকতার ছোঁয়া। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের তৈরিকৃত পণ্য অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি করে মাসে আয় করছেন কয়েক হাজার টাকা। নিরলস পরিশ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন উৎপলাক্ষী বাই ইউএন্ডপি নামের নিজের এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এক সময়ে অনেক কষ্ট করা, স্বামী হারা নারী প্রমিতা এখন এক ছেলে ও মেয়ে নিয়ে অতীতের তুলনায় অনেক ভালো আছেন। স্বামী হারানোর পর তার সংসারে এক সময় নেমে এসেছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিজের এই কাজে অনেকটা সফলতা লাভ করে অতীতের তুলনায় তেমনই কোন কষ্ট নেই তার এক ছেলে এক মেয়ের সংসারে।
ইতোমধ্যে প্রমিতার পেইন্ট করা শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, টু-পিস, ওয়ান-পিস, বেডশিট, কুশন কাভারসহ বিভিন্ন পণ্যের বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। ক্রেতাদের অর্ডার করা পছন্দ অনুয়ায়ী নানা ডিজাইনের পোশাক পেইন্ট করে সরবরাহ করে থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাই আগামীতে আরও বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করে একজন সফল উদ্যেক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন কর্মঠ নারী প্রমিতা এনি।
আলাপকালে সংগ্রামী এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ইাদানিংকালে তার কার্যক্রম বেশ ভালো চলছে। অনেকেই তার কাছ থেকে আগাম ডিজাইন দিয়ে পেইন্টিং করিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: ভোলায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া গুচ্ছগ্রাম পরিদর্শন করলেন ড. আশিকুর রহমান শান্ত
সম্প্রতি স্মার্ট নারী উদ্যেক্তা হিসেবে ৫০ হাজার টাকার সরকারি অনুদান পেয়েছেন। এছাড়া বেসরকারিভাবে পেয়েছেন আরো ২৫ হাজার টাকা। এটি তার কাজের আগ্রহ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্রমশই তার কর্ম পরিধী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রমিতা জানান, এক সময় ব্লক-বাটিকের কাজ করতেন তিনি। তখন থেকেই রঙ-তুলির প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে এই বিষয়ে আরো ধারণা নিয়ে ও ইন্টারেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিজেই রঙ-তুলির কাজ শুরু করেন। এখন যে কোন ডিজাইন দেখে সহজেই সেরকম কাজ করতে পারেন তিনি। ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাপড় সংগ্রহ রঙ-তুলির কারুকার্যে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়।
প্রমিতা এনি আরও বলেন, ২০২০ সালের দিকে অসুস্থ্য হয়ে তার স্মামী মৃত্যুবরণ করেন। তারপর অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। ২০২১ সালের প্রথম থেকে ঘুরে দাঁড়াবার লড়াই শুরু করেন। মূলত তখন থেকেই হ্যান্ড পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে উদ্যেক্তা হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেন। শুরুটা কঠিন হলেও এখন অনেকটাই সফলতা পেয়েছেন। এখন তার ছেলে-মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যায়। পণ্য ক্রয় করতে অনলাইনের পাশাপাশি অনেকেই তার বাড়িতে এসে ভিড় করে বলে জানান তিনি।
প্রমিতার প্রতিবেশী বাসন্তি মজুমদার ও স্বস্তি মজুমদার বলেন, প্রমিতার হাতের কাজের মান অনেক উন্নত ও রুচিশীল। তাকে দেখে এলাকার অনেক নারীই এখন এই পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমরা তাকে সব ধরণের সহায়তা করে আসছি।
প্রমিতার এনির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জনিয়ে ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, প্রমিতা যে কাজ করছেন তা অনান্য নারীদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে তিনি যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন তেমনি অন্যদেরও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন। এমন উদ্যোগ অনান্য নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নারীরা আরো বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।
জেবি/ আরএইচ