জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু একটি বড় বিপর্যয়: শিক্ষামন্ত্রী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:৫৩ অপরাহ্ন, ১১ই জুলাই ২০২৩


জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু একটি বড় বিপর্যয়: শিক্ষামন্ত্রী
ছবি: বিএসএমএমইউ মিডিয়া সেল

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, প্রতি বছর কমপক্ষে ১২ হাজার নারী জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন, এটা একটি বড় বিপর্যয়। এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না এবং এর দায় আমরা এড়াতে পারি না। কারণ একটু সচেতন হলে, একটু দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখলে এবং প্রয়োজনীয় তথ্যটি সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারলে এই মৃত্যু এড়ানো যায়। জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ যোগ্য এবং এর জন্য ভ্যাক্সিনও রয়েছে। 


মন্ত্রী বলেন, যথাযথ স্ক্রিনিংসহ আরলি ডায়াগনোসিস এর মাধ্যমে আগেভাগে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এর সমাধন আমাদের নিজেদের কাছেই রয়েছে। নিজে নিজেও স্তন পরীক্ষা করা সম্ভব। রয়েছে বিনামূল্যে ভায়া টেস্ট ও সিবিই টেস্টের সুবিধা। তারপরও এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মায়েদের সুস্বাস্থ্যসহ জীবন রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 


মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আয়োজিত জরায়ু-মুখ ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 


ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যা ভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং কর্মসূচির উদ্যোগে চিকিৎসক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে আয়োজিত এই কর্মশালায় শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধরণের উন্নতি হয়েছে, শিক্ষায় রূপান্তর ঘটেছে, যাতায়াত ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, নারীর ক্ষমতায়নসহ সবক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন একেবারে সাধারণ মানুষও স্বপ্ন দেখতে জানেন। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এমনভাবে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অভাবে, একটু সচেতনতার অভাবে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মৃত্যু কাম্য হতে পারে না। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোকে কাজে লাগানো, পাঠ্যপুস্তকে প্রয়োজনীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করাসহ ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। 


মন্ত্রী তার বক্তব্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজের বাসা, বাড়ি-ঘর পরিস্কার রাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সবরণের প্রতিষ্ঠান, অফিসসমূহ পরিস্কার রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। 


সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক  ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাথাপিছু আয়, বিদ্যুৎ উৎপাদান, গড় আয়ু, স্বাস্থ্যখাতসহ সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, সমাদৃত ও স্বীকৃত। 


আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মাসিক সভা


উপাচার্য বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ ও স্তন ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে স্কুল হেলথ ক্লিনিক চালু একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা, স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসাসহ বহুমুখী কার্যক্রম দেশব্যাপী পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে সাফল্যও এসেছে। অতীতের তুলনায় জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার কিছুটা কমেছে। তবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এখনো স্ক্রিনিং কার্যক্রমের আওতায় অনা যায়নি। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে এক্ষেত্রে বড় ধরণের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে। 


উপাচার্য এসময় তার বক্তব্যে সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অগ্রগতি ও সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সর্বোত্তম অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। 

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক  ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বর্তমানে শিশু, তরুণ, তরুণী, ছাত্রছাত্রী সকলে মাত্রাতিরিক্ত সময় ধরে টাচ মোবাইল ব্যবহার করছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে রাত ১০টার পরে ফেইসবুক অবশ্যই বন্ধ থাকা উচিত।   


অন্য বক্তারা এ ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের পরিবর্তে ঘরের তৈরি খাবার খাওয়া, ফলমূল ও শাক-সবজী বেশী খাওয়া, মেয়ে শিশুদের যথাসময়ে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন প্রদান নিশ্চিত করা, কুসংস্কার দূর করা ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।  


কর্মশালায় গ্রুপ ওয়ার্ক উপস্থাপনা ও উন্মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন)  একেএম নূরুন্নবী কবির। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। 


স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ। জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার বিষয়ক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা। 


জেবি/ আরএইচ/