শ্রীপুরে স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজে আসেনি সেই গ্রামীণ এম্বুলেন্স গুলো
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
মহিউদ্দিন আহমেদ, শ্রীপুর: প্রান্তিক মানুষগুলোর স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল একটি করে এম্বুলেন্স। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা পরিকল্পনার অভাবে ও ব্যবহার না করায় এগুলো এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের উপজেলা চত্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রামীন অ্যাম্বুলেন্স গুলো হস্তান্তর করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসনক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ্যাম্বুলেন্স গুলো নিজস্ব অর্থে কিনেছিলেন তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তখন বলা হয়েছিল গ্রামের অসহায় দরিদ্র রোগী ও প্রসূতি মায়েদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার সুযোগ তৈরি লক্ষ্যে এগুলো প্রদান করা হচ্ছে। এর সার্বিক তত্ত্বাবধান করবেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ গুলো। বিশেষভাবে তৈরি ব্যাটারি চালিত এসব অ্যাম্বুলেন্স গুলো নিয়ে স্থানীয় দের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের অবহেলা উদাসীনতা এখন সবই প্রায় পরিত্যক্ত। অধিকাংশ গুলোই প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ডিস্প্লেতে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর কিছুর স্থান হয়েছে স্থানীয় ভাঙ্গারীর দোকানে ।
তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, তিনি নিজ তহবিল থেকে তিনি এসব অ্যাম্বুলেন্স গুলো ক্রয় করেছিলেন ।তার উদ্দেশ্যে ছিল উপজেলা জুড়েই স্বাস্থ্য কেন্দ্রিক একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। দেখা গেছে গ্রামের দরিদ্র মানুষ সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল তাকে যেন অন্তত বিনা খরচে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেওয়া যায়। ৮টি এমবুলেস কিনতে ১৬লাখ টাকার অধিক ব্যয় করতে হয়েছে। তিনি যতদিন দায়িত্বে ছিলেন ততদিন এসব বিষয়ে নজরদারি করছেন। পরের বছর তার মেয়াদ শেষ হয় । পরে নির্বাচনে আর তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। এর পরই মূলত নজরদারির অভাবে এই অ্যাম্বুলেন্স গুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে এসব গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স গুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়, কোনটির ব্যাটারি নেই, আবার কোনটির চাকা নেই । অধিকাংশইর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। এগুলো যেন এখন অনেকটা গলার কাঁটা।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, হঠাৎ করেই ডেকে নিয়ে এসব অ্যাম্বুলেন্স গুলো হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু তা পরিচালনার জন্য কোন চালক যেমন ছিল না, তেমনি তেমনি এগুলো দেখভালের জন্য আমাদের তেমন কোন লোক নেই। দিনের পর দিন এগুলো ব্যবহার না করা ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ পরিকল্পনা করে এমন কাজ করলে এতগুলো টাকা নষ্ট হতো না।
রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, এগুলো একটি ভালো উদ্দেশ্যই হয়তো তারা আমাদের দিয়েছিল। তবে এসব কাজের জন্য যা প্রয়োজন তা আমাদের ছিল না। এভাবেই আর ব্যবহার হয়নি তা। তবে কিছুদিন ছিল পরে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। তবে তিনি বিষয়টি দেখে সে অনুযায়ী করণীয় ঠিক করবেন। তবে এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডক্টর প্রণব দাস বলেন, উদ্যোগটা ভালো ছিল। তবে এসব অ্যাম্বুলেন্স যদি আমাদের সাথে সমন্বয় করে প্রদান করা হতো তাহলে এমন বেহাল অবস্থায় তৈরি হতো না। পরিকল্পনাবিহীন কাজে সফলতা তেমন আসেনা।