ফুলবাড়ীতে গরুর লাম্পি স্কিন রোগে এক মাসে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:২৩ অপরাহ্ন, ২৮শে জুলাই ২০২৩
গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের কারনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গরুর মালিকরা দুর্চিন্তায় পড়েছে।
আক্রান্ত পশু নিয়ে দিশেহারা হয়ে ছুটছেন পল্লি চিকিৎসক ও প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে। চিকিৎসা দেওয়ার পড়েও মারা যাচ্ছে অনেকের গরু। ভয়ে চিকিৎসা না দিয়ে বাধ্য হয়ে পানির দামে বিক্রি করছেন রোগাক্রান্ত গরু। এর মধ্যে গত এক মাসে অর্ধশতাধিক গরু মারা গেছে এ রোগে ।
জানা গেছে ফুলবাড়ী উপজেলার পাড়ার মহল্লায় লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। পাড়ার মহল্লায় ভাইরাস ও ছোঁয়াচে এ রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে ছোট বড় গবাদি পশু। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গরুর মালিকরা এ নিয়ে দুশ্চিন্তা পড়েছেন।চিকিৎসা দেয়ার পরে ও থামছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে অনেকেই কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে হতদরিদ্র পরিবারে সদস্যরা গরু কিনেছেন বেশি লাভের আশায়। আবার অনেকেই এনজিওর কিস্তির টাকা নিয়ে গরু কিনেছেন মোটা তাজা করার জন্য । এ সব মানুষের স্বপ্ন এখন কাল হয়েছে লাম্পি স্কিন রোগে। বিপাকে পড়েছে ওই সব গরুর মালিকরা । ধার দেনার টাকা কি ভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তাঁরা।
এদিকে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে,উপজেলায় ৬৩ হাজার ৪৪ গরু পালন হচ্ছে এ উপজেলায় । তার মধ্যে ডেইলি খামারে রয়েছে ৭শটি । তা ছাড়াও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গরুর মালিকরা বিভিন্ন ভাবে দেশিজাত গরু পালন করছে।
এ সব খামারী ও দেশি গরু পালনকারীদের মধ্যে অনেকের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক গরু মারা গেছে । তবে সরকারী ভাবে ভ্যাকসিন বরাদ্দ নেই এখানে। ফলে বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিন বাজার থেকে নিয়ে এসে আক্রান্ত গরুকে চিকিৎসা দিচ্ছেন সরকারী ভ্যাটেনারী সার্জন ও পল্লী চিকিৎসগণ। চিকিৎসরা জানিয়েছেন তাপমাত্রা ও প্রচন্ড গরমের কারনে লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে । আবহাওয়া অনুকূল হলে রোগটি নিয়ন্ত্রনে আসা সম্ভব।
এদিকে যে সব এলাকায় গরু মারা গেছে তার মধ্যে উপজেলার কবির মামুদ এলাকার ওমর আলীর ছেলে নজরুল ইসলামের একটি,আবেদ আলীর ছেলে মমিনুল ইসলামের একটি, সমছের আলীর ছেলে নুরআমিন হকের একটি, নছের আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেনের একটি, ইদ্রিস আলীর ছেলে তাজুল ইসলামের একটি ,সোনা মিয়ার ছেলে লাকু মিয়ার একটি , বিদ্যাবাগিশ গ্রামের সুরত আলীর ছেলের হবিবর রহমানের একটি,আহাম্মোদ আলীর ছেলে সোবেদ আলীর একটি , কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে মহসিন আলীর একটি, যুতিন্দ্রনাথ ছেলে শৈলান চন্দ্রের একটি ,আসমত আলীর ছেলে আলতাফ আলীর একটি, বজরেখামার এলাকার আজগার আলীর ছেলে রতন আলীর একটি , কাশিপুর ইউনিয়নের মিস্ত্রিটারী এলাকার আজিতুল্লার ছেলে সৈয়দ আলীর একটি ,মাঠের পার এলাকার তবারক আলীর ছেলে মনসের আলীর একটি , শ্যাম্পুর এলাকার আবু বক্কর আলীর ছেলে বুধা মন্ডলের একটি গরু মারা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কাশিপুর ইউনিয়নের মিস্ত্রিটারী এলাকার আজিতুল্লার ছেলে সৈয়দ আলীর জানান, চামড়ায় প্রথমে গুটি বের হয়ে ফোসকা পড়ে, পরে জ্বরের কারণে কাঁপুনি ও খাবার ছেড়ে দেয় । তার পর গরুর মৃত্যু হয়। এ ভাবে আমার একটি গরু মারা গেছে । ভয়ে আর একটি গরু ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
একই অভিযোগ করে কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের আলতাফ আলী জানান এনজিওর কিস্তির টাকা নিয়ে গরু কিনেছেন মোটা তাজা করার জন্য । বেশি দামে বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবো। সেই গরু আমার মারা গেছে। এখন কিভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবো তা, নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনক জানান, গরু আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ফ্রিজিয়ান জাতের গরুর বাছুর বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভ্যাকসিন না থাকায় এ ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। আক্রান্ত গরু আলাদা করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। চিকিৎসা দেয়ার অব্যাহত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আরএক্স/