বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ফাঁসানোর অভিযোগ অভিভাবকদের


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, ১লা আগস্ট ২০২৩


বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ফাঁসানোর অভিযোগ অভিভাবকদের
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়টি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেছেন অভিভাবকরা। 


মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেল ৩টায় বুয়েট শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি করেন  গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এসব অভিযোগ করেন


এরআগে, ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে গিয়ে রোববার রাতে গ্রেফতার হন বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থী।

 

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা  বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে যাওয়া আমাদের সন্তান, আপনজন বুয়েটের ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ৩৪ জন পর্যটককে পুলিশ আটক করে মামলা দায়ের করেছে। হঠাৎ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। আমাদের সন্তানদের অন্যায়ভাবে আটক করা এবং সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে তাদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে আমরা গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছি।”

 

অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আটক শিক্ষার্থী আলি আম্মার মুয়াজের ভাই আলি আহসান জুনায়েদ।


শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এমন ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ারও হুমকির মুখে। আমরা বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে তাদের অনুরোধ করেছি।”

 

জোনায়েদের দাবি, “গ্রেফতার ও উদ্ধারের যে অভিযোগের অবতারণা করা হয়েছে, এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। শিক্ষার্থীরা টার্ম-ব্রেকের ছুটির মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল। তাদের সঙ্গে সদ্য এসএসসি পাস কয়েকজন আত্মীয় ছিল। এ অবস্থায় তারা টাঙ্গুয়ার হাওড়ে গিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে, এমন অভিযোগ হাস্যকর।”

 

তিনি আরও বলেন, “রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি ট্যুরে আছে, হাওড়ে এলাকায় হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ফোনে কল যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ তাদের ফোনে না পেয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি। ওইদিন পর রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকের কাছেই সন্তানরা তাদের নিজের ও গার্ডিয়ানের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নম্বর জানতে চায়। তারা জানায় যে তাদেরকে পুলিশ হাওড়ে নৌকায় ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে।  পুলিশ তাদের বলেছিল অভিভাবকদের আইডি কার্ডের নম্বর নেয়ার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।”


আরও পড়ুন: টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে বুয়েটের ৩৪ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

 

তিনি বলেন, “এ ফোন কলের পর তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উদ্বিগ্ন হয়ে ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। পরে সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারি, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।”

 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা পাননি বলেও অভিযোগ করেন জোনায়েদ। তিনি বললেন, “স্থানীয় ওসি এবং এসপিকে ফোন দেয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে ভিসি স্যারকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারো সাঙ্গেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।”

 

তিনি আরও বলেন, “সোমবার বিকেলে আমাদের হাতে পৌঁছানো মামলার বিবরণীতে জানতে পারি, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদেরকে প্রচন্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।”


জোনায়েদ বলেন, “এমন বাস্তবতায় রবিবার সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বিচ্ছিন্নভাবে বুয়েট ক্যাম্পাসে আসি উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও তার দেখা মেলেনি। পরে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আমাদেরকে জানান যে, তাদেরকেও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এর আগে তারা বিষয়টি জানতেন না।”

 

এ সময় তিনি বলেন, “আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে এবং ভালো সন্তান হিসেবে তাদের নিয়ে গর্ব অনুভব করি। তারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র।”

 

তিনি আরও বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে, শিক্ষার্থীদের পরিবার হিসেবে আমরা মানসিকভাবে বেদনাদায়ক অবস্থা পার করছি। আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। দ্রুত তাদের জামিন প্রদান ও মামলা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিচারবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে বুয়েট প্রশাসন, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীর কাছে নিরাপরাধ সন্তানদের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”


জেবি/এসবি