কমলগঞ্জে যৌতুক লোভী স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:১৫ অপরাহ্ন, ১০ই আগস্ট ২০২৩
তানভীর চৌধুরী, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে কমলগঞ্জের কালেঙ্গা গ্রামের নাইম মিয়ার বিরুদ্ধে। যৌতুকের দাবী মেটাতে না পারায় প্রায় সময় স্বামী নাইমের নির্যাতনের শিকার তার স্ত্রী রহিমা বেগম। গৃহবধু রহিমার সারা শরীর জুড়েই স্বামীর নির্যাতনের চিহ্ন দৃশ্যমান। এ ঘটনায় স্বামী নাইম মিয়ার বিরুদ্ধে গত ৬ আগস্ট মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩নং আমল আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন গৃহবধূ রহিমা। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে হুমকির মুখে পড়েছে রহিমার মাসহ তার বাবার বাড়ির লোকজন। মারধোরের পাশাপাশি মামলা তুলে নিতে দেওয়া হচ্ছে প্রান নাশের হুমকি।
মারধরের ঘটনায় মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাতে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন গৃহবধূ রহিমার মা নার্গিস বেগম।
স্থানীয়রা জানায়, চার বছর পূর্বে কালেঙ্গা গ্রামের রেহান আলীর মেয়ে রহিমা বেগমকে বিয়ে করেন একই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে নাইম মিয়া। বিয়ের ৬ মাস যেতেই যৌতুক হিসাবে ৫ লাখ টাকা দাবী করে স্বামী নাইম। এতে রহিমা রাজি না হলে নাইম মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় সময় রহিমাকে কটুকথা এবং নির্যাতন করতেন।
এনিয়ে স্থানীয় ভাবে একাধিক বার সালিশ বৈঠক হলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার বাবা মেয়ের জামাই নাইমকে ৮০ হাজার টাকা দেন। এরপর থেকে কিছুটা শান্তিতে ছিল। কিন্তু গত ২৩ জুন স্বামী নাইম মের স্ত্রী রহিমার কাছে যৌতুক হিসাবে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে।
তখন রহিমা তার গরীব বাবা কাছথেকে টাকা এনে দিতে পারবেনা বলে জানালে গৃহবধূ রহিমাকে তার স্বামী নাইম মারধর করে দুই বছরের কন্যা সন্তান সহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
পরে রহিমা নিরুপায় হয়ে তার সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি গিয়ে তার বাবাকে ঘটনা জানালে তিনি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার প্রার্থী হন। বিচার না পেয়ে আদালতে মামলা করেন গৃহবধূ রহিমা। এদিকে বিচার প্রার্থী হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় নাইম। সে তার ভাইদের নিয়ে রহিমার পিত্রালয়ে গিয়ে রহিমা ও তার মাকে মারধর করে তাদের ঘরে ভাংচুর চালায়।
তাদের নির্যাতনে গৃহবধূ রহিমা ও তার মা আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। আলাপকালে রহিমার মা নার্গিস বেগম বলেন, যৌতুকের জন্য আমার মেয়ের জামাই আমার মেয়েকে নানা সময়ে নির্যাতন করত। তাই মেয়ের শান্তির কথা চিন্তা করে মেয়ের জামাইকে ৮০ হাজার টাকাও প্রদান করেছি। এরপরও নির্যাতন থেমে থাকেনি।
বিচারের জন্য আমার মেয়েকে নিয়ে মানুষের দারে দারে ঘুরছি। মেয়ের জামাই জেলা পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তার বাসায় কাজ করায়, কেউ বিচার করে দেয়নি। পরে সুবিচারের আশায় আমার মেয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। আর মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। আদালতে মামলা দায়ের করায় মেয়ের জামাই ও তার স্বজনরা মামলা তুলে নিতে আমাদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। এতে আমার মেয়ে, নাতিনসহ আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাইম মিয়া বলেন, আমাকে ও আমার পরিবারকে ফাঁসাতে স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন ঘটনাটি সাজিয়েছেন। কমলগঞ্জ থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন,গৃহবধূকে নির্যাতনের কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি। তবে নার্গিস বেগম নামে এক মহিলা তাকে মারধর করার একটি অভিযোগ দিলে তা আইন আমলে নেওয়া হয়েছে।
আরএক্স/