সংসারের অভাবে টাকার কাছে হার মানতে হয়েছে আখিঁকে
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৩০ অপরাহ্ন, ১৩ই আগস্ট ২০২৩
গ্রাম থেকে দুধ কিনে এনে ছানা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন বাবা। সেই আয়-রোজগারে চার সদস্যের সংসার চালানোই কঠিন। তবু মেয়ে আঁখি রানী ঘোষের পড়ালেখা থামাননি সুজিত ঘোষ। আখিও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে বাবার কষ্টের প্রতিদান দিয়েছে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আখি এখন ভর্তি হবে কলেজে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার খরচ বাবা সামলাতে পারবেন কি না, সেই দুশ্চিন্তাতেই দিন কাটছে তাদের।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কুমড়াকাপন গ্রামের সুজিত ঘোষের মেয়ে আখি। মা লাকী রানী ঘোষ গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে আঁখি বড়। এ বছর কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
আঁখি বলল, 'মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি লেখাপড়া করি। শিক্ষকরা সহযোগিতা করেন এবং তারা খুব উৎসাহ দেন। আমি জিপিএ-৫ পাওয়ায় মা-বাবা খুব খুশি হয়েছেন। আমার স্বপ্ন, ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে সব সময় অসহায় গরিব মানুষের পাশে থাকব।'
প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লিটার দুধ কিনে এনে ছানা তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন সুজিত ঘোষ। মাসে গড়ে আয় হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সেই আয়ে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাতে হয়। বসতভিটার আড়াই শতক ছাড়া আর কোনো জমিজমাও নেই তাদের। মেয়ের পড়ালেখা কীভাবে চালিয়ে নেবেন, এখন সেই চিন্তাই করছেন সুজিত।
আখি বলে, 'বাবা ছানা বিক্রি করে সংসারের ঘানি টানছেন। ছোট বোন ঋতু আমার স্কুলেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। দুই বোনের পড়ালেখা চালাতে অনেক কষ্ট হয় বাবার। নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশনের টাকা অনেক কষ্টে জোগাড় করেন বাবা। এখন এইচএসসি পড়ার খরচ কীভাবে জোগাড় করবেন, জানি না।
আখির বাবা সুজিত ঘোষ বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই আখি লেখাপড়ায় ভালো। সংসারের অভাব- অনটন থাকলেও ওর লেখাপড়ায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সেই চেষ্টাই করে গেছি। এখন তো খরচ আরও বাড়বে। জানি না মেয়েকে কতটা পড়াতে পারব।
কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনেন্দ্র কুমার দেব বলেন, 'আখি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। আর্থিক অভাবের মধ্যেও তার এমন ফলাফলে আমরা অনেক খুশি। সহায়তা পেলে সে নিশ্চয়ই তার চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে।
আরএক্স/