লোকসমাগমে কমছে প্রাণীর অবাধ বিচরণ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০২ অপরাহ্ন, ২১শে আগস্ট ২০২৩


লোকসমাগমে কমছে প্রাণীর অবাধ বিচরণ
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবাধে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াত বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক, বানরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র বদলেছে। এখন আর আগের মতো বন্য প্রাণীদের বিচরণ করতে দেখা যায় না। এর মূল কারণ হিসেবে বন এলাকায় অতিরিক্ত লোকসমাগম, বনের গাছ উজাড় এবং বন দখলকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিবেশবাদীরা। এ ছাড়া বনের ভেতর দিয়ে রেল ও সড়কপথে অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল করায় প্রাণীদের অবাধ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগতির যানবাহনের চাপায় প্রাণী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।


স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, বনের প্রাণীদের নিরাপদ রাখতে প্রথমে বনকে নিরাপদ রাখতে হবে। তাহলে প্রাণীরা অবাধে বিচরণ করতে পারবে। এক দশক আগে বনের ঘনত্ব ও প্রাণীর সংখ্যা বেশি ছিল। এখন বনের ঘনত্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসছে প্রাণীর সংখ্যাও। আগে বনের ভেতর প্রবেশ করলে গাছে গাছে উল্লুক, বানর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যেত। এসব দৃশ্য এখন দেখা যায় না। বনে প্রাণীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বন ও টিলা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা ও পর্যটনকেন্দ্র উচ্ছেদ এবং অবাধে বনের গাছ পাচার বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।


বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের ভিড়ের কারণে বন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরণ সীমিত হয়েছে। দল বেঁধে আসা লোকজন অনেক সময় বনের ভেতরে বনভোজনের আয়োজন করে। এতে প্রাণীদের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। তাই বনের ভেতর মানুষের চলাচল সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ সালের দিকে লাউয়াছড়ায় উল্লুকের সংখ্যা কিছু কমে এলেও এখন আবার বেড়ে গেছে।


জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির কমলগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, বনে প্রাণীরা অবাধে বিচরণ করতে না পারলেও মানুষ বাধাহীন চলাচল করছে। বনের জায়গা দখল, বন উজাড়, অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের কারণে প্রাণীর সংখ্যা ক্রমেই কমছে। আগের মতো এখন আর বনে প্রাণী নেই। বনে উঁচু ও বৃহদাকার গাছ কমে যাওয়ার কারণে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক কমে গেছে। বনকে নিরাপদ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে বাকি প্রাণীগুলোও একসময় হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।


লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বনে প্রাণীর সংখ্যা কমেনি আগের মতোই আছে। তবে। উয়াছড়ায় এখন বন্য প্রাণী আগের মতো বিচরণ করতে পারছে না। বনের ভেতর অতিরিক্ত মানুষ চলাচলের কারণে প্রাণীরা লোকালয়ে কম আসে। তবে রাতে ও ভোরে কিছু প্রাণী দেখা যায়।' বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর বন্য প্রাণীরা অবাধে বিচরণ করতে পারছে না। এ জন্য তারা সব সময় বনের গভীরে থাকে। অতিরিক্ত মানুষ চলাচল এবং তারা ভেতরে প্রবেশ করায় প্রাণীরা ভয়ে বনের গভীরে চলে যায়। বনের ভেতর পর্যটক কম প্রবেশের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগে বনের ভেতর দিয়ে মানুষ ও গাড়ি চলাচল কম ছিল, এ জন্য প্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসত। এখন ভয়ে তারা বাইরে আসে না।'


লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।


আরএক্স/