আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরিষাবাড়ীতে আ’লীগে ৬ বিএনপির ১ জাপার ৩ প্রার্থী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, ২১শে আগস্ট ২০২৩


আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরিষাবাড়ীতে আ’লীগে ৬ বিএনপির ১ জাপার ৩ প্রার্থী
সরিষাবাড়ীতে আ’লীগে ৬ বিএনপির ১ জাপার ৩ প্রার্থী

উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা নিয়ে ১৪১ জামালপুর -৪ সরিষাবাড়ী আসন। এ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৩ জন এবং নারী ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪ জন ভোটার রয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে দেশ জুড়ে। ঠিক তার ব্যতিক্রম নয় জামালপুরের সরিষাবাড়ীতেও। তাই  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪১ জামালপু-৪ সরিষাবাড়ী আসনে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই  বইছে নির্বাচনি হাওয়া। রয়েছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা।  ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত ৬  জন বিএনপির ১ জন,জাতীয় পার্টির ৩ জন, কমিউনিস্ট পার্টির ১ জন  প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে ।  


তারা হলেন, তেজগাঁও থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মানিত সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, সম্মানিত সদস্য প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল, সভাপতি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন বাদশাহ, সহ সভাপতি আনিছুর রহমান, বর্তমান এম্পি ডা: মুরাদ হাছান,  বিএনপির ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম,  জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মামুনুর রশীদ জোয়ার্দার, মোখলেছুর রহমান বস্তু, আবুল কালাম আজাদ, কমিউনিস্ট পার্টির মুস্তফা বাবুল।  স্বাধীনতার পর এ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে ১৯৭৩ মালেক , ১৯৭৯ সালে বিএনপির আব্দুস সালাম তালুকার , ১৯৮৬ সালে নৌকা প্রতিক কমিউনিস্ট পার্টিও শাহনেওয়াজ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টিও সাইফুল ইসলাম মন্জু ,  ১৯৯১ সালে বিএনপির আব্দুস সালাম তালুকার,১৯৯৬ মাওলানা নুরুল ইসলাম , ২০০১ এ বিএনপির আনোয়ারুল কবীর তালুকদার শাহজাদা, ২০০৮ ডা. মুরাদ হাছান, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টিও মামুন অর রশিদ জোয়ার্দার, ২০১৮ সালে ডা. মুরাদ হাছান  নির্বাচিত হয় । 


নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল, অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, ডা. মুরাদ হাছান নৌকা প্রতিকের প্রত্যাশায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থী প্রিন্সিপাল মো. আব্দুর রশীদ ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর চীফ নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব সাহসিকতার সাথে সফল ভাবে পালন করতে সক্ষম হবার মধ্য দিয়ে। তৃণমূল নেতাকর্মী সমর্থকদের নিকট আস্হা ও ঐক্যের মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি - সাধারন সম্পাদক , চেয়ারম্যান ,মেয়র ,পৌর আওয়ামী লীগ ,অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী সমর্থক গন ঐক্যবদ্ধ হয়ে  প্রিন্সিপাল রশীদের নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন দাবীতে জনমত গঠনের জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। 


এই আসনের সাধারন জনগণের মধ্যেও তার গ্রহনযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি । উপজেলা আওয়ামী লীগের সিংহ নেতারাও  অধ্যক্ষ রশীদের মনোনয়ন দাবীতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এদিকে গত সংসদ নির্বাচনে এ নৌকা প্রতিক নিয়ে ২য় বার বিজয় লাভ করে ডা. মুরাদ হাসান । 


এই সদস্যরা যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ টিআর, জিআর, কাবিখার বরাদ্দ লুটপাট চালিয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর নির্বাচনি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে  ২০২১ সালের ২০ মে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রলায়নে দায়িত্ব লাভ করে। চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে কুরুচিপুর্ণ কথোপকথন ভাইরাল সহ বিভিনন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর মন্ত্রি পরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন । তারপর থেকেই আওনা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ , উপজেলা আওয়ামীলীগ এবং জেলা আওয়ামীলীগের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয় । তারপর থেকৈই এ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী তুঙ্গে উঠে। ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতির নিকট সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করলেও জেলা আওয়ামীলীগ কিংবা উপজেলা আওয়ামীলীগে তার স্থান পায়নি। ডা. মুরাদ হাসানের বাবা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আওয়ামী লীগ করতে গিয়ে তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। 


কিন্তু মুরাদ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের  ১৯৯৬-৯৮ কমিটির ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিল। পরবর্তীকালে সে ছাত্রলীগে যোগদান করে ১৯৯৭-৯৮ সালে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৯৯-২০০০ সালে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।  তবে এ আসনে পিছিয়ে নেই আরেক প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল ।


 তিনি প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ টি প্রচারণা ও জনসংযোগ করে যাচ্ছেন । তার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক , উপজেলা আওয়ামীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি এবং সাবেক এমপি । অন্য তিন প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন বাদশা , আনিছুর রহমান এলিন , আব্দুস সামাজ আজাদ তারাকে কোন প্রচারণা কিংবা জনসংযোগে দেখা যায় না । এ আসনটি আওয়ামীলীগের ঘাটি হলেও দলীয় চরম কোন্দল ও দ্বিধাবিভক্তির কারণে এবার দলের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে চরম মাসুল দিতে হতে পারে বলে স্থানীয় আ’লীগ নেতারা মনে করছেন । 


তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আসনটি পুনরুদ্দারের চেষ্টা চালাবেন জেলা বিএনপির সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম ।বিএনপির সাবেক মহাসচিব ,সাবেক মন্ত্রী মরহুম ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা শামীম তালুকদার একক প্রার্থী । তার জনপ্রিয়তাও কারো থেকে কম না ।


অন্য দিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে (এরশাদ ) আসন ছেড়ে দেওয়ায় মামুনুর রশীদ জোয়ার্দার নির্বাচিত হয়েছিলেন । তবে সেই এমপি মামুনুর রশীদ জোয়ার্দার মনোনয়ন চাইবেন জাপা থেকে । 


এ ছাড়াও উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ,ছাত্র সমাজের মোখলেছুর রহমান বস্তু মনোনয়ন চাইবেন। বিএনএফ প্রার্থী সাংবাদিক মোস্তফা বাভুল শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে আগামী নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে একাধিক সুত্রে জানা যায় ।


এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান শাহজাদা বলেন , আগামী সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাছিনা যাকে নৌকা প্রতিক দিবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে ।   কেমন প্রার্থী চান প্রশ্নের জবাবে তিনি  আরো জানান , সৎ যোগ্য ,দেশ প্রেমিক এমন ব্যাক্তি ভাল হলে হয় ।


এ বিষয়ে সাবেক এমপি ডা. মুরাদ হাছানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা জানান , আমি প্রতিবারই এ আসনে মনোনয়ন চাই । এবারো চাইব । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমি এই আসনে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করব ।


এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ জানান ,  প্রিন্সিপাল রশীদ বলেন, আমি সব সময় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে আসছি। দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের সাথে আমার সব সময় যোগাযোগ আছে। তৃনমুল পর্যায়ের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ রাখা ,সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন জনগণের মাঝে প্রচারের জন্য মাঠে কাজ করে আসছি। প্রায় ৫০০ মানুষের চাকুরির ব্যবস্হা করেছি, দরিদ্রদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি ,দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের সুখ দুঃখে পাশে থাকি। 


২০০১ এর পর এবং ১/১১ সময়ে নেতাকর্মী সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে ভূমিকা রেখেছি। প্রতিদন্দিতামূলক নির্বাচনে জনজনপ্রিয়তা বিবেচনায় মনোনয়ন দিলে আমি শতভাগ আশাবাদী , নৌকার মনোনয়ন আমার হাতেই তুলে দিবেন।


তবে জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম জানান, সরকার পতনের যে এক দফা আন্দোলন এটার মধ্যেই আমরা আছি । 


নির্বাচনে তখনই যাব যখন অধীনে নিরপেক্ষ,নির্দলীয় তত্তবধায়ক সরকার দাবী আদায় হবে তারপরই আমরা নির্বাচনের কথা ভাবব । নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবং ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে পারলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন ।


আরএক্স/