পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন বানিজ্য মন্ত্রী
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:১৫ অপরাহ্ন, ২৫শে আগস্ট ২০২৩
পঞ্চগড়ে কাঁচা চা পাতার দাম নিয়ে কোন ভাবেই বির্তক থামছেই না। দাম না পাওয়ায় অনেকে ইতোমধ্যে বাগান কেটে ফেলেছে। গেলো জুনে পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। তবে দেরিতে হলেও আগামি সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে সেই নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ার দিনক্ষন ঠিক করা হয়েছে।
এ নিয়ে ২২ আগষ্ট পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘‘উত্তরাঞ্চলের চা শিল্পের সম্পৃক্ত ’’ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম।এসময় জানানো হয় বানিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক ভাবে শুভ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য কয়েকটি উপকমিটি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি হবে বর্ন্যাঢ্য আয়োজনে।
চা চাষীরা বলছেন নিলাম কেন্দ্র না থাকায় তারা উৎপাদিত চায়ের প্রতিযোগিতামূলক দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন নিলাম কেন্দ্র চালু হলে এর কতোটুকু সুফলতা বা দাম বৃদ্ধি হবে কি-না ‘চা কেনা সিন্ডিকেট ভাঙ্গবে কি-না তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি।
চা অঞ্চল পঞ্চগড়ে চা চাষীরা দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।পঞ্চগড়ে ২০০০ সালে ৪৫৪ একর পতিত সমতল ভূমিতে চা চাষের মধ্য দিয়ে দেশে সে সময় তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পঞ্চগড়ে চা চাষের সূচনা হয়।
এদিকে চা চাষের পরিধি বেড়ে ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে বলে বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে পঞ্চগড় জেলাতে চা চাষ হয়েছে ১০ হাজার ২৩৯ একর জমিতে বলে জানান চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন।
উত্তরাঞ্চলের বড় ৩০টি চা বাগান, মাঝারি ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার। চা বাগানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ চাপাতা আহরণে কাজ করছে।দিকে গত বছর এসব চা বাগান থেকে ৯ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৩২ কেজি চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করে প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৮ কেজি চা উৎপাদিত হয়।চলতি বছর প্রায় সাড়ে ৯ কোটি কেজি চা পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্থানীয় চা বোর্ড, যা ২৫টি চা কারখানায় প্রক্রিয়াকরণ করে প্রায় দুই কোটি কেজি চা তৈরি হবে।
এতে ৩২০ কোটি টাকায় আয়ের আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আগের বছরে চা বিক্রি করে আয় হয়েছে ২৮০ কোটি টাকা বলে জানা পঞ্চগড় চা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। চা গাছ পরিচর্যার কারণে দু'মাস চা পাতা তোলা বন্ধ থাকার পর মার্চে শুরু চায়ের নতুন মৌসুম। এখন সরব হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের কারখানাগুলো। মরগেন টি ইন্ডাস্ট্রিজ’র এক্্িরউটিভ ডিরেক্টর নওজেশ আলী চিশতি জানান, ডিসেম্বর পর্যন্ত কারখানা চলবে। মার্চের তারিখ কারখানা চালু করা হয়েছে। তারা কাচাঁ চা পাতা ১৪ টাকা কেজি দরে কিনছেন।
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কালদাস পাড়ার চা চাষী ওসমান গনি জানান, তিনি ১ একর জমিতে চা চাষ করেছেন। বৃহষ্পতিবার তার সাথে কথা হয় ‘ তিনি বলেন মরগেন টি ইন্ডাস্ট্রিজে তিনি চা পাতা বিক্রয় করেন। প্রতি কেজি ১৪ টাকা দরে। এনেছিলেন ২১৪০ কেজি কাঁচা চা পাতা। কর্তন করে তিনি পেয়েছেন ১৭০০ কেজির দাম। ওসামন গনি বলেন প্রতি কেজি চা পাতা তুলতে শ্রমিককে দিতে হয় তিন টাকা ৫০ পয়সা। যদি ২০ টাকা কেজি পাওয়া যেতো তবু কিছুটা লাভ হতো। দাম নাই বাগানের যত্ন নেই না। এসময় তাকে বিমূর্ষ দেখা যায়। পঞ্চগড় সদর উপজলোর চা চাষী কায়সার হামিদ প্রধান সজীব বলেন ‘ পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র হলে কাঁচা চা পাতার দাম পাওয়ার কথা। কারন চিটাগাং নিলে ভাড়া লাগে সেই ভাড়া বেঁচে যাবে। তিনি দশ একর জমিতে চা চাষ করেছেন। বুধবার তিনি প্রতি কেজি কাচাঁ চা পাতা বিক্রি করেছেন ১৫ টাকা কেজি। তিনি এমন দাম এ নিয়ে সমস্যায় আছি।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের মোট উৎপাদিত চা পাতার ১৯ শতাংশ চা পাতা পঞ্চগড়ে উৎপাদিত হয়। জমিতে চা বাগান ঘিরে সবুজের সমারোহ লক্ষ্যণীয়। দেশের আগত পর্যটকদের আকর্ষন করছে এই বিস্তৃর্ণ চা বাগান।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান আগামী মাস সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে। আশা রাখি এটির উদ্বোধন হলে চা চাষীরা তাদের ন্যায্য দাম পাবে।
আরএক্স/