ঘুরে আসুন অপরূপ নাফাখুম জলপ্রপাত
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
নাফাকুম বান্দরবান
জেলার থানচী উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। ২৫-৩০ ফুট এই জলপ্রপাতটি রেমাক্রী
হয়ে প্রাকৃতিকভাবেই কয়েক ধাপে সিঁড়ির মত করে হেলে দুলে সাঙ্গু নদীতে মিলেছে। ফলে
এর মিলনস্থেল রেমাক্রী কুম ফলসের সৃষ্টি হয়েছে।
কখন যাবেন
বর্ষার সময়
এই জলপ্রপাতটি ভয়াবহ রুপ ধারণ করে, ফলে বর্ষায় নাফাকুমে যাওয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
বর্ষায় সাঙ্গু নদীর স্রোত অনেক বেশি থাকার ফলে ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই বর্ষার শেষ দিকে
শীতের শুরুতে অথবা শীতের শেষ দিকে বর্ষার শুরুতে যাওয়াই ভালো। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর
অথবা মে-জুলাই মাসে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
থানচী বাজারে
কিছু গেস্ট হাউজ ও বোর্ডিং আছে সেখানে রাত্রী যাপন করা যায়, ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-২০০
টাকা। এছাড়া রেমাক্রী বাজারে আদিবাসীদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা আছে। বাসায় জনপ্রতি
১২০-১৫০ টাকা করে রাত্রী যাপন করতে পারবেন। যারা ক্যাম্পিং করতে চান তারা বাজারের আশেপাশে
কোথাও ক্যাম্প করতে পারবেন, যদিও তেমন ভালো জায়গা নেই ক্যাম্পিংয়ের জন্য। শীতকাল
হলে বাজারের ঘাটে শুকনা জায়গায় ক্যাম্প করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
থানচী বাজারে
থাকলে থানচী বাজারেই মোটামুটি মানের খাবার বেশ কিছু হোটেল পাবেন। রেমাক্রী বাজারে থাকলে
খাবারের কথা আগেই বলে দিতে হবে তাহলে তারা খাবার রান্না করে রাখবে। পাহাড়ি মুরগি খেতে
চাইলে গাইডকে বললে সে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে, তবে দাম একটু বেশি নিবে। এক্ষেত্রে
কি কি দেখবেন
বান্দরবান শহর থেকে থানচী যেতে পথে পড়বে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, পিক৬৯, নীলগিরি সহ অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা। থানচী থেকে ট্রলারে স্রোতের বিপরীতে যেতে হবে পাহাড়ি খরস্রোতা সাঙ্গু নদীর উপর দিয়ে। এই বিপরীতে চলতে পথে দেখবেন কোথাও শান্ত শিষ্ট সাঙ্গু আবার কোথাও দেখবেন বিকট ভয়ংকর খরস্রোতা সাঙ্গু নদীর রুপ। যেতে পথে পড়বে রাজা পাথর এলাকা। এই রাজাপাথর এলাকায় দেখবেন বিশাল আকৃতির বহু পাথর যা আদিবাসীদের কাছে দেবতা এবং তাদের কাছে পূজনীয়। ছোট একটি বাজার চোখে পরবে রাজা পাথর এলাকা পাড় হয়ে, নাম তার তিন্দু। এরপরই চোখে পড়বে নাফাকুম জলপ্রপাত এর বয়ে চলা জল আর সাঙ্গুর মিলনস্থল রেমাক্রীকুম। নাফাকুম থেকে ৩-৪ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলেই ঘুরে আসতে পারেন আমিয়খুম জলপ্রপাত। এছাড়া আশেপাশের বিশাল বিশাল পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা মেঘ ও প্রাকৃতিক পরিবেশতো আছেই।
টিপস ও পরামর্শ
• গ্রুপ করে গেলে খরচ অনেক কম হবে।
• আদিবাসী সভ্যতা, সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাঙ্গ করা থেকে বিরত থাকবেন
ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
• অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে সাঙ্গু নদী পাড়ি দেওয়ার
সময় ও নাফাকুম এ যাওয়ার সময় লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন।
• সাঙ্গু নদী একটি খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, তাই অতিরিক্ত সতর্কতা
নিয়ে নদীতে নামুন। পাহাড়ের খাদ গুলো ভালো করে লক্ষ করে পা ফেলুন নদীতে।
• ভারী জামা কাপড় না নেওয়াই ভালো। ব্যাগ যগ ছোট হবে ঘুরতে
ততো মজা লাগবে।
• ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে যথাস্থানে ফেলুন। প্রকৃতির
ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকুন।
• চিপস, চানাচুর, বিস্কুটের প্যাকেট পথে না ফেলে ব্যাগে ভরে
নিয়ে আসুন ও যথাস্থানে ফেলুন।
• চলার সময় নিরবতার সাথে পথ চলুন। হৈ হুল্লুর থেকে বিরত থাকুন।
• ছোট বাচ্চা নিয়ে এই ট্রেইলে না যাওয়াই ভালো। তবে মহিলা/মেয়েরা
অনায়াসে এই ট্রেইলে যেতে পারেন কোন সমস্যা নাই, ভয়ের ও কিছু নাই। তেমন কঠিন কোন ট্রেইল
নয়।
• রেমাক্রী থেকে নাফাকুম যেতে ঝিরিপথে দু তিন জায়গায় হাটু
অথবা কোমর পানি পাড়ি দিতে হতে পারে, নিরাপত্তার জন্য দড়ি রাখতে পারেন সাথে।
• নৌকা নেওয়ার সময় দামাদামি করে নিবেন, ওরা অনেক বেশি ভাড়া
চেয়ে বসবে, তাই দর কষাকষি করে যতটুকু কমাতে পারেন।
• ঝিরি পথে হাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন যেন পা পিছলে
পাথরে পড়ে গিয়ে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।
• নাফাকুমের জলপ্রপাতে সাতার না জানলে ঝাপ দিবেন না। পাথর
ও খাদে আটকে গেলে মারাত্নক বিপদে পড়বেন।
• একা একা কোথাও যাবেন না দল ছেড়ে, পাহাড়ে হারিয়ে গেলে
রাস্তা খুজে পাওয়া দুস্কর, তাছাড়া আপনার একার জন্য দলের বাকী সদস্যরা বিপদে পড়বেন।
• ব্যাকপ্যাক নিবেন সাথে, হাতের কোন ব্যাগ নিবেন না, পানির
বোতল ও শুকনা খাবার রাখুন ট্রেইলে হাটার সময়।
• মশার কামড় থেকে বাচতে অডোমস ক্রীম রাখুন সাথে, এছাড়া প্রাইমারী
ওষুধ, ব্যান্ডিজ সাথে রাখুন।
• থানচীর পর তেমন মোবাইল নেটওয়ার্ক পাবেন না। রেমাক্রী বাজারে
একটি মাত্র ফোনের দোকান পাবেন যেখানে ৫ টাকা মিনিট কথা বলা যাবে।
• থানচীর পর বিদ্যুত নেই তাই সাথে এক্সট্রা পাওয়ার ব্যাংক
রাখুন।
• জলপ্রপাত এর মুখে বসে ছবি উঠানোর সময় অতিরিক্ত সাবধানতা
অবলম্বন করুন। এখানে পা পিছলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
• ট্রেকিং এর সময় সাথে লাঠি,পুল বা বাঁশ জাতীয় কিছু রাখুন,
যার সাহায্য নিয়ে পথ চলতে সুবিধা হবে।