জলাশয় দখলে চায়না দুয়ারী কারেন্ট জাল


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:১৯ অপরাহ্ন, ৩১শে আগস্ট ২০২৩


জলাশয় দখলে চায়না দুয়ারী কারেন্ট জাল
চায়না দুয়ারী কারেন্ট জাল

সাম্প্রতিক সময়ে টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তিস্তা নদীর অববাহিকাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানের খাল-বিল, পুকুর নদীতীরবর্তী নিচু এলাকা ও ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর সেখানে পাওয়া যাচ্ছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। 


এ সুযোগে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা সেচ  ক্যানেল, পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই ও খগাখরিবাড়ি, ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ তিস্তার নিম্নাঞ্চল, ডিমলা ইউনিয়নের বুড়ি তিস্তা, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের হরিশের বাঁধ, পূর্ব বাইশপুকুর, মধ্য বাইশপুকুর, নাউতারা নদী, সৌল্লার ঘাট, তিস্তা ব্যারেজের সীলট্রাবসহ উপজেলার গ্রামঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়গুলো নিষিদ্ধ কারেন্ট এবং চায়না দুয়ারী জালে সয়লাব। 


স্থানীয় এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, বর্ষণের এ পানিতে এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্য আরোহনকারী নির্বিচারে নদীর নিম্নাঞ্চল ও জলাশয়ে কারেন্ট এবং চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসব অবৈধ জালে মা-মাছ থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব ধরনের মাছসহ ব্যাঙ, সাপ, কুঁচিয়া, কাঁকড়াসহ অন্যান্য জলজপ্রাণী ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ কারণে জলজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনছে। তাই  আগামী দিনে হয়তোবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে কোন জলজ প্রাণী?


উল্লেখ্য ২০০২ সালের সংশোধিত মৎস্য সংরক্ষণ আইনে কারেন্ট জাল উৎপাদন, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এ আইনটি মানছে না এক শ্রেণির অসাধু জাল ব্যবসায়ীগণ। স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে প্রশাসনের নাকের ডগায় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে অবাধে নিষিদ্ধ এসব কারেন্ট জাল বিক্রি হলেও যেন দেখার কেউ নেই! ফলে প্রশাসনের নজরদারির  অভাবে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ এ কারেন্ট ও চায়না দুয়ারী জালের রমরমা ব্যবসা চলছে বলে জানায় সচেতন মহল।


খালিশা চাপানি ইউনিয়নের মধ্য বাইশপুকুর গ্রামের কামাল আহমেদ নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তিনি জানান, বাইশপুকুর এলাকায় যদি ঘুরে দেখেন, তিস্তা নদীর তীর ও জলাশয়ে শত শত চায়না দুয়ারী জাল পাবেন। আমারও ২টি জাল রয়েছে। খোঁজ করলে এখানে অনেকের বাড়িতে ১০/১২টির বেশি জাল পাওয়া যাবে। কারেন্ট জাল কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিমলা বাবুরহাট থেকে কিনে এনেছি। একটি জালের মূল্য ৭ হাজার আরেকটির মূল্য ১২ হাজার টাকা। 


একই গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন,  আগে নদীর পাড়ে অনেক মাছ পাওয়া যেত কিন্তু এখন আর সে রকম মাছ নেই। ২/৩ বছর থেকে চায়না ম্যাজিক টেপাই এর কারণে সকল প্রকার মাছ, পোকামাকড়, ব্যাঙ, সাপ, কুচিয়া ইত্যাদি মারা পড়ছে। এ কারণে মাছ নতুন পানিতে ডিম ফুটাতে পাড়ছে না। আর ডিম ফুটাতে না পারলে কিভাবে মাছ বৃদ্ধি পাবে? তিনি আশঙ্কা করেন আগামী ২/৩ বছর পর দেশী প্রজাতির মাছ দেখতে পাব কিনা সন্দেহ আছে! 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক জানান, মাঝে মধ্যে অনেকে আসেন ঘুরে ফিরে যান। এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হলো আইপিএস (ব্যাটারি) দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে মাছ শিকার করা। বড় মাছ তো মরছেই তার সাথে সকালবেলা নদীর তীরে গেলে ছোট মোলা মাছ মরে ভেসে বেড়ায়। এছাড়াও বড়  সমস্যা হলো চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল। এগুলোর দিয়ে সকল ধরনের জলজপ্রানী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন যদি কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন না করে তাহলে দেশি প্রজাতির মাছ শুধু স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে।


দোহল পাড়া এলাকার ষাটঊর্ধ্ব বৃদ্ধ হযরত আলী, সমাজকর্মী বেলাল হোসেন, সুশীল সমাজের আব্দুর রহিম বলেন, প্রতি বছর এভাবে জলাশয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট ও চায়না দুয়ারী জাল পাতা হলেও মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান ছাড়া আর কিছুই হয় না। তাছাড়া এখন তো প্রকাশ্য হাট-বাজারে এসব নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বিক্রি হলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ কারণে অতি সহজেই এসব অবৈধ  জাল মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। 


এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের ডিমলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছাঃ শামীমা আক্তার বলেন, ইতিপূর্বে একাধিক জায়গায় বেশ কিছু চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল ধ্বংস করেছি। গত কয়েকদিন মৎস্য সপ্তাহ গেল তাই একটু ব্যস্ত ছিলাম। আপনি যেহেতু জানালেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এসেছেন তার সহযোগিতায় এখন থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হবে।


আরএক্স/