কাশফুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রকৃতিতে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৩


কাশফুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রকৃতিতে
কাশফুল। ছবি: জনবাণী

রবি ঠাকুর তার শরৎ কবিতায় লিখেছিলেন ‘আজি কি তোমার মধুর মূরতি, হেরিনু শারদ প্রভাতে’এমন কবিতার পংক্তিমালায় কার মন ছুয়ে না যায়? দিশেহারা হয়ে ছুটে যায় মন, কোথায় আছে এমন ধবল সাদা কাশবন?


এসেছে শরৎ। তাইতো কাশফুল ফোটে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে প্রাণ প্রাকৃতিতে। নদীর ধার, পুকুরে পাড় কিংবা বিস্তীর্ণ বালুচরে বড্ড অবহেলায় ফোটে কাশফুল। লাগেনা কোনো যত্ন -আত্তি। তারপরও দূর থেকে কাশের বনে তাকালে মনে হয়, শরৎ এর সাদা মেঘ যেন নেমে এসেছে ধরণির বুকে। একটু বাতাস পেয়ে দলে দলে কাশফুল যখন এদিক-ওদিক মাথা নাড়ায়, তখন মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। কাশফুল অগোচরে হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায় সব বয়সীদের মনে। ইট পাথরের যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে ক্ষণিক প্রশান্তির খোঁজে আসছেন কাশফুলের সংস্পর্শে।

 

গাঢ় সবুজের মাঝে শুভ্র কাশফুলের চাদরে ঢাকা রূপসী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ  চা গবেষণা কেন্দ্রের মোড় পেরিয়ে খানিকটা এগোলেই পথের ধারেই মিলবে কাশবনের সমারোহ। আঁকাবাঁকা পথের দু’ধারে সারি সারি চা বাগান কিংবা সন্ধ্যায় ঝলমলে আলোর মাঝে পর্যটকরা মন ভরে উপভোগ করেন বৈচিত্র্যময় অপার সৌন্দর্য।


শুভ্র কাশবনে ছেয়ে আছে পাহাড়ি ছড়া। ঘন চা বাগান এলাকা। এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়ার দু’পাশেই উঁচু নিচু টিলা। ঋতু ভেদে চা বাগানগুলোতে প্রকৃতির রঙ বদলায়। শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে ভানুগাছ সড়কের পাশে বেলতলী-সংলগ্ন ভুড়ভড়িয়া ছড়ার পাশে এই কাশফুলের বালুচরের অবস্থান। ভানুগাছে যাওয়ার রাস্তা ধরে সামনে এগুলেই চা বাগানের ছড়ার পাশে দেখা মিলবে কাশফুলের বালুচর। প্রতিবছর আগস্টের শেষের দিক থেকে অক্টোবরের প্রথম দিকে এ ফুল ফোটা শুরু হয়। তাই বছরের দুই মাস এখানে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে বাগানগুলো। চা বাগানসহ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা জুড়েই দিনে কিংবা রাতে পর্যটকরা মন ভরে উপভোগ করেন এ সৌন্দর্য।


সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী লোকজন এখানে এসেছেন। কেউ কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কাশফুলের গাছগুলোর ভেতরে ঢুকে পড়েছেন অনেকেই। অনেকে আবার মুক্ত বাতাসে পুরো বালুচর ঘুরে বেড়াচ্ছেন।


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘প্রতিবছর আগস্টের শুরু কিংবা শেষের দিকে কাশফুলগুলো ফুটতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর মাসে এসে সাদা কাশফুলে ছেয়ে যায় পুরো দুই কিলোমিটার এলাকা। সেপ্টেম্বরের শেষে কিংবা অক্টোবরের প্রথম দিকে ফুলগুলো ঝরে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ কাশবনে মানুষের ভিড় লেগে যায়।’


কাশফুল দেখতে আশা দর্শনার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঋতু পরিক্রমায় বাংলার প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। রাশি রাশি কাশফুল ছড়াচ্ছে শ্বেত শুভ্র নৈসর্গিকতা। যা মুগ্ধ করছে প্রকৃতি প্রেমীদের।’


কাশফুল ও চায়ের রাজ্য দেখতে আসা সিলেট মহিলা কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অনাজিলা ধোহা বলেন, ‘কলেজ বন্ধ থাকায় এই সময়টা বের করতে পেরেছি। আমি শুধু একা এখানে আসিনি আমার পরিবারের সদস্যরাও আসছেন। জায়গাটি অনেক সুন্দর। কাশফুলের মুগ্ধতায় এখানে আসা। এই কাশফুল গুলোর সঙ্গে ছবি তুললে ছবিগুলোও অনেক সুন্দর হয়। তাই এখানে আসা।’


শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক এস কে দাশ সুমন বলেন, ‘চায়ের রাজধানী হিসেবে শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি দেশেবিদেশে। এখানে চা-বাগানের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা অনেক জায়গা আছে। চার-পাচঁ বছর ধরে কাশফুলের বালুচরটি সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটকেরা এখানে আসেন প্রকৃতি দেখতেই। তাঁদের কাছে কাশবন ও কাশফুলের সৌন্দর্য বাড়তি মাত্রা যোগ করে।


আরএক্স/