হারিয়ে যাচ্ছে শরতের কাশফুল


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:০২ অপরাহ্ন, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৩


হারিয়ে যাচ্ছে শরতের কাশফুল
কাশফুল

কাশফুল নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুন  লিখেছেন, 'ক্ষেতের আলে নদীর কূলে, পুকুরের ওই পাড়টায়, হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়। উচ্চ দোলা পাখির মত কাশ বনে এক কন্যে,তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোঁপার জন্যে।


শরৎ রানী যেন কাশের বোরখা খানি খুলে, কাশ বনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে।গ্রামীণ জনপদে দেখা যায়না কবির সেই কল্পিত কাশবন।কাশবনে নববধূর আনাগোনা। 


ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস নিয়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপ-ঝাড়,রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি দেখা যেত।


এখন আর নীলফামারীর  জলঢাকা উপজেলায় কাশফুল চোখে পড়েনা।নদীর দু’ধারে,আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন।


উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুরপাড় ও বুড়ি তিস্তা নদী,তিস্তা নদীর পাড়ে  সাদা হয়ে থাকতো কাশফুলে। পালকের মতো নরম এবং সাদা ফুলের কাশফুল এখন আর পড়েনা চোখে।


শরৎকালে রোদ-মেঘের খেলায় কাশবনের ফুলগুলো নদীর ঢেউয়ের মত দোল খেতো। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো একটার সঙ্গে আরেকটা। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো।মনে হতো এ যেন নীল আকাশে সাদা বকের খেলা। তখন ভিন্ন রকম আনন্দে মন ভরে যেতো। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। 


শরৎ মানেই কাশফুলের সাদা হাসি।গ্রামের নববধূরা অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়ে নরম কাশফুল মাথার খোঁপায় পড়তে কাশবনে ছুটে যেত দলবেঁধে।মাথার খোঁপায় পড়তো নরম পালকের মত সাদা কাশফুল। কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। 


চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাটা, ডালি, দোন তৈরি করে আর কৃষকরা ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।বর্তমানে কৃষি প্রযুক্তির দাপটে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কাশবন উজাড় হচ্ছে। 


বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে।সাধারণ মানুষের বিনোদন- প্রকৃতিকে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।


উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও বিশিষ্ট সমাজসেবক আমিনুর রহমান বলেন জলঢাকা উপজেলা পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর তীর ও চর জায়গা স্থানে,বুড়ি তিস্তা নদীর তীরে,ধুমনদীর তীরসহ  খাল-বিল, ক্ষেতের আল ও পুকুরপাড় সহ গোলমুন্ডা  ইউনিয়নের চরাঞ্চলে  কাশবনে ভরপুর ছিল। 


প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমে যাওয়া এবং উপলদ্বি না থাকায় কাশবন ও কাশফুল প্রায় বিলুপ্তির পথে। 


আরএক্স/