জৌলুস হারিয়েছে বেড়ার প্রসিদ্ধ কোষা নৌকা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:১৪ অপরাহ্ন, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩


জৌলুস হারিয়েছে বেড়ার প্রসিদ্ধ কোষা নৌকা
ডিঙি নৌকা

নৌকা একটি সু-প্রাচীন লোকজ শিল্প , বহু মানুষের জীবন-জীবিকার উৎসব মুখ। যমুনা হুড়াসাগর নদী বেষ্টিত পাবনার বেড়া উপজেলায় এক সময় কোষা বা ছোট (ডিঙি) নৌকার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। মৎস্যজীবী এবং গৃহস্থদের সঙ্গে এ নৌকার এক নিবিড় সম্পর্ক যুগযুগ ধরে।  কিন্তু কালের বিবর্তনে ক্রমাগত জৌলুস হারানো নদ-নদী খাল-বিলের  করুণ অবস্থা আর যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের ফলে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতি অন্যতম মৎস্য ধারক কোষা( ডিঙি) নৌকা।


জানা যায় , দুই থেকে তিন দশক আগেও উপজেলার কাজিরহাট , কাশিনাথপুর, নগরবাড়ি, ঢালার চর , নাটিয়াবাড়ি, রাকসা, কৈটোলা, পাঁচুরিয়া, হাটুরিয়া -নাকালিয়া , পেচাকোলা  মোহনগঞ্জ, ডাকবাংলায় এ কোষা নৌকার ব্যাপক প্রচলন সহ তৈরিতে বিখ্যাত ছিল।


এ নৌকা বেচা-কেনার হাট হিসেবে জেলার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাট হচ্ছে বেড়ার প্রাণকেন্দ্র সিঅ্যান্ডবি চতুর হাট,কাশিনাথপুর হাট । এই হাটে থেকে শুধু স্থানীয়রাই নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চল বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া,চলনবিল নাটোরের ক্রেতারা এসেও কোষা নৌকা কিনে নিয়ে যেত। তবে রাস্তাঘাট বৃদ্ধি ও নদ-নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে নৌকার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। 


ফলে ছোট নৌকার চাহিদাও আগের মতো আর নেই। এতে নৌকার নির্মাণ শ্রমিক তথা কারিগরদের সুদিনও আর নেই। তবে এ জেলার নিম্নাঞ্চলে এখনো কোষা নৌকার ব্যবহার হয় বলে এখানকার কিছু কিছু  কারিগররা এখনো কোনোরকমে টিকে রয়েছেন। জৈষ্ঠ্য মাসের শুরু থেকেই কোষা নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন কারিগররা। 


কঁড়ই, সিসা, মেহগনি, আম কাঠের একেকটি কোষা নৌকা তৈরিতে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। প্রতি শনিবার, মঙ্গলবার  সিঅ্যান্ডবি চতুর হাটে কোষা নৌকা বিক্রি হয়। ভালো কাঠ না থাকায় কড়ই ও সিসা কাঠ দিয়ে কোষা নৌকা তৈরি করছেন অনেক মিস্ত্রী। তারা রাত দিন পরিশ্রম করে ২ জন ৩/৪টি কোষা নৌকা  তৈরি করতে পারে। 


চতুর হাটের কোষা নৌকা কারখানা মালিক ওয়াহেদুল হক বলেন, এখানকার কোষা নৌকার বেশ কদর থাকায় পাবনা জেলার ছাড়াও আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও ক্রেতারা নৌকা কিনতে আসেন। এ বছর কোষা নৌকার চাহিদা একেবারেই কম। আকার ভেদে এক একটি নৌকা ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার চাকায় বিক্রি হয়ে থাকে কিন্ত এবার ভরা মৌসুমেও তেমন বেচা-কেনা হয়নি বা হচ্ছে না তাই এখন লোকসানেই কোষা নৌকা বিক্রি করছি। 


আমি এ পেশায় আছি প্রায় ২০ বছর যাবৎ, আগে আমার দোকানে প্রায় ১৫- ২০ জন কারিগর কাজ করত অথচ এ বছর মাত্র চারজন কারিগর দিয়ে কাজ করছি। উপজেলার মালদাহ পাড়া গ্রামের কোষা নৌকার কারিগর লক্ষণ সূত্রধর জানান , এ নৌকা সাধারণত ৪.৫ মিটার থেকে ৬ মিটার লম্বা এবং ২.১থেক ২.৪ মিটার চওড়া হয়ে থাকে। 


এটি একজন মাঝি বৈঠা দিয়ে খেয়াঘাটে স্বল্পযাত্রী পারাপার বা স্বল্পদূরত্বে  যাত্রী বহন , নদ-নদী , খাল-বিল থেকে কাটা ধান গো-খাদ্যর ঘাস বয়ে আনা মাছধরা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হয়। আরেক কারিগর বৌদ্ধ সূত্রধর জানান , এখন কোষা নৌকার প্রচলন নেই বললেই চলে, যার ফলে বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় কোনোরকমে জীবন-যাপন করছি। নৌকার কারিগররা আরো জানান ,  সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা এবং কম সুদের ঋণ পেলে এই ঐতিহ্যকে টিকে রাখা হয়তো  সম্ভব হবে।


আরএক্স/