“অবাদ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হওয়ার প্রত্যাশা রাজনৈতিক নেতাদের”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি জেলার সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন যারা!
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:২৮ অপরাহ্ন, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৩
“অবাদ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হওয়ার প্রত্যাশা রাজনৈতিক নেতাদের”। পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘প্রাণকেন্দ্র’ বলা হয়ে থাকে রাঙ্গামাটিকে। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা হলেও, এখানে নির্বাচনি আসন রয়েছে মাত্র একটি।
জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্য থাকলেও, রাঙ্গামাটির ক্ষেত্রে বরাবরই ‘ভোট ফ্যাক্ট’ আঞ্চলিক দল। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থনেই পাল্টে যায় ভোটের হিসাব-নিকাশ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এখনও ভোটের উত্তাপ না ছড়ালেও দলগুলো নিজেদের গোছানোর পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে ভাবছে। তবে টানা ছয় বার জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলেও এবারই পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বিগত নির্বাচনের তথ্যানুযায়ী, ১৯৯১ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে টানা ছয় বার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য দীপংকর তালুকদার, এমপি। ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে চারটিতেই বিজয়ী হয়েছেন দীপংকর তালুকদার। বাকি দু’টি নির্বাচনের মধ্যে একটিতে আঞ্চলিক দল ও আরেকটিতে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিজের শেষ নির্বাচন হিসেবে ঘোষণা দিলেও, দ্বাদশেও লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন দীপংকর তালুকদার। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন অনুসারীরা। এদিকে, এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।
জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এতদিন দীপংকর তালুকদারের একক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদ নিয়ে নিখিলের সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সেই সম্মেলনে দীপংকর ফের সভাপতি হন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিখিল কুমার চাকমা দলীয় প্রার্থী হতে জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মূলত রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগ এখন দীপংকর ও নিখিলে বিভক্ত।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারকে সমর্থন জানিয়েছিল প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আরেক ‘হেভিওয়েট’ আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সে সময়ে জেএসএস-ইউপিডিএফের ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ থাকায় রাঙ্গামাটি আসনে একত্রে ভোট করেছিল দুটি আঞ্চলিক দলই। তবে বর্তমানে ফের জেএসএস-ইউপিডিএফের রাজনৈতিক বৈরিতা চলছে। যে কারণে এবারের নির্বাচনে একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ইউপিডিএফ বলছে, রাজনৈতিক দল হিসাবে তারা বরাবরই গণতন্ত্রমূখী।
দ্বাদশ নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রসঙ্গে ইউপিডিএফের বেশকিছু নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, ‘ইউপিডিএফ বরাবরই গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয় তাহলে ইউপিডিএফ জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আমরা কাকে প্রার্থী মনোনয়ন দেব সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের সংসদ নির্বাচনেও বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়াবে আঞ্চলিক দল। তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে ফলাফল নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে মনোনয়ন দৌড়ে বিএনপির তিন শীর্ষ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক কর্ণেল (অব.) মনীষ দেওয়ান ও জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু।
দলটির নেতা-কর্মীরা বলছে, নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ¦ী লড়তে হলে এবং নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ানের বিকল্প নেই। রাঙ্গামাটি ‘পাহাড়ি অধ্যুষিত’ এলাকা হিসেবে স্থানীয় কমিউনিটির ভোট নিজেদের ঝুলিতে ভরতে মনিস্বপনের বিকল্প দেখছেন না তারা।
তবে প্রার্থিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ও অনুসারীরা বলেন, ‘আমরা এক দফা দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। সেন্ট্রালের কড়া অর্ডার আছে, আন্দোলন-সংগ্রামের পরই নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হবে। আপাতত প্রার্থিতা নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা নেই।’
তবে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কোনো নেতার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জেএসএস সমর্থিত একবারের এমপি ঊষাতন তালুকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। বক্তব্য পাওয়া যায়নি জনসংহতি সমিতিরও (এমএন লারমা)।
এদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে আসছে জাতীয় নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কে এম পারভেজ তালুকদার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুঁই চাকমা ও ইসলামী আন্দোলনের জসিম উদ্দিন প্রার্থী হয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে এসব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা নেই। আলোচনা নেই বাঙালিভিত্তিক সংগঠনের প্রার্থী নিয়েও।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ৩৫৪ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৩ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯নং রাঙ্গামাটি আসনে ২০৩ ভোট কেন্দ্রে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দীপংকর তালুকদার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সমর্থিত ঊষাতন তালুকদার পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮ হাজার ৩৬ এবং বিএনপির প্রার্থী মনি স্বপন দেওয়ান পান ৩১ হাজার ৪৩৭ ভোট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭১ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৮ জন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর দ্বাদশ নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত ভোটার বেড়েছে ৫৫ হাজার ১৪৪ জন। তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর ভোটার আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে স্থানীয় নির্বাচন অফিস।
আরএক্স/