সেদ্ধ ডিম বিক্রি করে আর সংসার চলে না


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৪৬ অপরাহ্ন, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৩


সেদ্ধ ডিম বিক্রি করে আর সংসার চলে না
ছবি: জনবাণী

কাঠের তৈরি বাক্সের ওপর গ্যাসের চুলা।রাতের বেলা পাশের খুঁটিতে জ্বলে কেরোসিনের কুপি। চুলার ওপর মাঝারি আকৃতির একটি পাতিল। পাতিলের ভেতরে সেদ্ধ হচ্ছে হাঁস-মুরগির ডিম। আর পাতিলের ঢাকনার ওপরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আগে সেদ্ধ করা কিছু ডিম। সেখান থেকেই ক্রেতাদের খোসা ছাড়িয়ে একটার পর একটা ডিম সরবরাহ করছেন ডিম বিক্রেতা ফাইজুল ইসলাম (৪৫)। এভাবে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আনোরমারি কলেজ বাজারে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ডিম বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন তিনি।


ফাইজুল ইসলামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ উপজেলার বদি মাঝাপাড়া এলাকায়। এক ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে।একমাত্র ছেলেটাও বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন নিজের বউকে নিয়ে ২ জনের সংসার তাঁর।


শুক্রবার বিকালে কথা হয় ফাইজুল ইসলামের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে সেদ্ধ ডিম বিক্রি শুরু করেন তিনি। প্রতিদিন বিকেল ৪ টার পর দোকান শুরু করে চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে বিকেলে দোকান নিয়ে বসলেও মূলত বিক্রি শুরু হয় সন্ধ্যার পর। শুরুর দিকে তিনি শুধু দেশি মুরগি আর হাঁসের ডিম বিক্রি করতেন। এখন যুক্ত হয়েছে ফার্মের মুরগির ডিম।


গত বছরগুলোতে যখন ডিমের দাম কম ছিল, তখন প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ডিম বিক্রি হতো ফাইজুল ইসলামের। তিনি বললেন, তাতে দৈনিক আয় হতো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো। সেই টাকা দিয়ে সংসার খরচ করেও প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেঁচে যেত তাঁর।


বর্তমানে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম বিক্রির সংখ্যা কমে গেছে। তিনি দিনে ১০০ থেকে ১২০টি ডিম বিক্রি করতে পারেন। তাতে গ্যাস, মরিচ, পেঁয়াজ আর তেলের খরচ বাদ দিয়ে দিনে ১০০ টাকা থাকে। সেখান থেকেই পরিবারে দৈনিক দেড় কেজি চাল আর অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে হয়। দিন দিন জিনিসের দাম বাড়ায় এখন এই আয় দিয়ে তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।


দিন দিন সিদ্ধ ডিমের ক্রেতা কমে যাচ্ছে বলে ফাইজুল ইসলামের ভাষ্য। তিনি বলেন, ‘আগে মানুষ বাজার করার পর ডিমের দোকানের সামনে এসে একটা ডিম খেয়ে যেত। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় বাজার করতেই টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ডিম কিনে খাওয়ার ইচ্ছা জাগে না। আর যেখান থেকে পাইকারি দরে কাঁচা ডিম কিনি, সেখানে ডিমের দাম ওঠানামা করায় ব্যবসায় শান্তি নেই। এখন বয়স হয়েছে, অন্য কাজও তো আমাকে দিয়ে হবে না। ডিম বিক্রি করেই যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।


জেবি/এসবি