সন্দেহ হয় রে, সন্দেহ হয় : প্রধানমন্ত্রী

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে নিয়ে সবার মাতামাতিকে ‘সন্দেহ হয় রে, সন্দেহ হয় রে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
নিয়মতান্ত্রিক ভাবে দেশ পরিচালনা এবং দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে নেওয়ার পরও হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে নিয়ে সবার মাতামাতিকে ‘সন্দেহ হয় রে, সন্দেহ হয় রে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ যতটুকু পাচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগ এবং আমরা ক্ষমতায় আসার পর উন্নতিটা হচ্ছে। এখন এত প্রশ্ন আসে কেন, সেটাই আমার কথা। এখন একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে, সেটাই মানুষের মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না। সেটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়, এই সন্দেহটা আমারও আছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ১৯৭৫-৯৬, ২০০১-০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কি দিয়েছে? মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছে, পারেনি; দুর্ভিক্ষ ছিল। সব সময় উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, দক্ষিণেও। মানুষ তখন এক বেলা খাবার জোটাতে পারত না। ছেঁড়া কাপড় পরে থাকত, বিদেশ থেকে পুরাতন কাপড় এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টিহীনতা প্রতিনিয়তই ছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরোও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তো আমিই তাদের বলেছি। আমরা আব্রাহাম লিংকনের যেটা জানি, গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল– এটা তো আমরাই এস্টাবলিশড করেছি। গভর্নমেন্ট ফর দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি থেকে তো আমরাই রেহাই দিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরও একটা দোষ আছে। আমাদের দেশে কিছু লোক নির্বাচন নিয়ে বেশি কথা বলি। যারা নির্বাচনকে বয়কট করেছে, কলুষিত করেছে, ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। ২০০৮ সালে যখন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলো, যেই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। তাদের আবার বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্য জোট, পরে আরেকটা সিট বেড়ে হয়েছিল ৩০টা। ২০১৪ নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা এবং এমন কোনো অপকর্ম নাই, করেনি। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে নির্বাচন থেকে সরে গেল। সরে গিয়ে নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করল। এখন তাদের মুখে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনি এবং তা সব জায়গায় প্রচার করে বেড়াচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীসহ কত মানুষকে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনীর কত অফিসারকে হত্যা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর কি অকথ্য নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। যারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং ও যত কর্ম-অপকর্ম বাংলাদেশে ছিল সেগুলো থেকে মুক্ত করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেশন জট ছিল, সেটা থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। এসব করে যখন একটা নিয়মতান্ত্রিক দেশ পরিচালনা করছি এবং দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে, তখন হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন– সন্দেহ হয় রে। এটাই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে।
সরকার প্রধান বলেন, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ আমার দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে তখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি– আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব এবং নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো– ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন যেটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেটাকে আলাদা করে দিয়ে, বাজেট আলাদা করে দিয়ে, তাদের আরও শক্তিশালী করা এবং জনগণের মধ্যে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে জনগণের ক্ষমতাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ক্ষমতাকে বের করে আমরাই তো এনেছি। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের জোট আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করে এটা করেছি এবং এর জন্য আমাদের বহু মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সেই কথাটাই মানুষকে বলেছি, আমাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন, সেটা আমরা করেছি। সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও নির্বাচন হয়েছে বলে জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। এখন আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই অর্থনৈতিক উন্নতি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরএক্স/








