অবিরাম বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ঝাঁজ, বেড়েছে ডিম-মুরগি ও সবজির দাম
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:৪০ এএম, ৮ই আগস্ট ২০২৫

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাজারে লাগাতারভাবে বেড়েই চলেছে। টানা বৃষ্টিকে অজুহাত দেখিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল ও বিভিন্ন ধরনের সবজি। এ অবস্থায় দিশেহারা সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর খিলক্ষেত, কারওয়ান বাজার, শাহজাদপুর, বাড্ডা, নতুন বাজার ও রামপুরার বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পেঁয়াজ ও প্রোল্ট্রি মুরগির ডিমের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও প্রতি ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় উর্ধ্বমুখী।
ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, তিনি গত শনিবার খিলক্ষেত বাজার থেকে দেশি পেঁয়াজ কিনেছিলেন ৫৫ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ পর একই বাজারে গিয়ে দেখেন, সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বৃদ্ধিতে হতবাক তিনি।
শুধু পেঁয়াজ নয়, এক সপ্তাহে ফার্মের ডিম, মসুর ডাল, টমেটোসহ কিছু সবজি, ভোজ্যতেলসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। শ্রমজীবীরা পড়েছেন বড় বিপাকে। তাদের ভাষায়, একদিকে বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো কাজ নেই, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন।
বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে পণ্যের সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে মোকামে দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০-৭২ টাকা কেজি দরে। সেখানকার পাইকারি বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকার বেশি বেড়েছে। আগের সপ্তাহে তারা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৫৫-৫৭ টাকায়। এরপর দাম বেড়ে ৬৫-৬৬ টাকায় উঠে যায়, যা এখন আরও বেশি।
তারা আরও জানান, পাবনা ও ফরিদপুরের মোকামে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় মণপ্রতি দাম প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এক মাস আগে পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে।
পেঁয়াজ ছাড়াও ডিম, ডালসহ আরও বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। টিসিবির দৈনিক বাজার তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, মসুর ডাল ও পাম তেলসহ ১২টি পণ্যের দাম বেড়েছে। বিপরীতে আলু ও আটার দাম কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজনে। গত এক মাসে দুই ধাপে ডিমের দাম বেড়েছে। এর আগে দুই মাস ধরে লাল ও সাদা ফার্মের ডিম বিক্রি হতো ১২০ টাকা ডজনে।
শুক্রবার পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকায়, যেখানে সপ্তাহখানেক আগে দাম ছিল ৮৫০–৯১০ টাকা।
ফার্মের মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে এখন ১৭০–১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০–১৭০ টাকা।
খুচরা বাজারে গত রোববার থেকে মসুর ডালের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাঝারি মানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, যা আগে ছিল ১২০ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫–১৫৫ টাকা কেজি দরে, আগে যা ছিল ১৩০–১৪০ টাকা।
আলুর দাম কিছুটা কমেছে—কেজিতে ৫ টাকা কমে কোনো কোনো জায়গায় ২০ টাকা হয়েছে। ভালো মানের আলু কিনতে ২৫–৩০ টাকা লাগছে।
টমেটোর দাম ক্রমাগত বেড়ে ২০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে। গাজরের দামও উঠেছে ১৬০ টাকায়।
বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম এখন ৬০ টাকার ওপরে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০–২৮০ টাকা কেজিতে। একমাত্র তুলনামূলক সস্তা সবজি হচ্ছে পেঁপে, যার দাম ২০ টাকা কেজি।
মাছের মধ্যে ইলিশ এখন সাধারণের নাগালের বাইরে। অথচ এটি ভরা মৌসুম। এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,৬০০–২,৯০০ টাকায়, যা দিয়ে ৫০ কেজি চাল কেনা যায়। ৪০০–৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,০০০–২,২০০ টাকায়। ছোট ইলিশ ১,৪০০–১,৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।