১২ লাখ টাকায় জামায়াত নেতার মেয়েকে চাকরি দিলেন অধ্যক্ষ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, ১৮ই অক্টোবর ২০২৩


১২ লাখ টাকায় জামায়াত নেতার মেয়েকে চাকরি দিলেন অধ্যক্ষ
দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজ। ছবি: জনবাণী

কুষ্টিয়ায় ১২ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে জামায়াত নেতার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার হরিনারায়নপুর ইউনিয়নের দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজের ল্যাব সহকারি পদে সদ্য চাকুরি পাওয়া ঐ মেয়ের নাম সুমি আক্তার। 


তিনি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১ নং ত্রিবেণী ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামীর রোকন জালাল মন্ডলের মেয়ে এবং একই ইউনিয়নের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ফারজুল আলমের স্ত্রী। 


একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আলাদা আলাদা ৩টি বিভাগে ল্যাব সহকারি পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া বাকি ২ জন হলেন- সদর উপজেলার শিবপুর এলাকার কনা আক্তার ও কুমারখালী উপজেলার ধলনগর এলাকার সাজ্জাদ হোসেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ৩ ল্যাব সহকারি গত ৫ অক্টোবর কলেজের স্ব স্ব বিভাগে যোগদান করেছেন। 


বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে জানা যায়, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সুমি আক্তারের পিতা জালাল মন্ডলের নামে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানায় বেশ কয়েকটি নাশকতার মামলা চলমান রয়েছে। 


তাছাড়া ইতিপূর্বে তিনি নাশকতার মামলায় আটক হয়ে কারাভোগও করেছেন। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়েছেন তিনি। নিবন্ধন বাতিল দলটির এই নেতা নিজের মেয়ে এবং নিকট আত্মীয়দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে নিয়োগ দিয়ে জামায়াত ইসলামী সংগঠনকে পুনরায় উজ্জীবিত করার চেষ্টায় রয়েছেন। 


যার ধারাবাহিকতায় ১২ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে নিজের মেয়েকে দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজে ল্যাব সহকারি পদে যোগদান করিয়েছেন। 


এদিকে জামায়াত নেতার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয়রা। 


তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিরা আবারো সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আর তাদের সহযোগীতা করছে কলেজ অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামানের মতো কিছু মানুষ। যারা নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ হিসেবে জাহির করে। 


কিন্তু বাস্তবে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চেতনা বুকে লালন করেন। সেই সাথে তারা এক ঢিলে দুই পাখিও মেরে চলেছেন। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া। 


এধরনের দুমুখো মানুষদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী ও মাহবুবুউল আলম হানিফ এমপি'র দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। 


তারা আরো বলেন, আগরওয়ালা পরিবার এই এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। 


দিলীপ কুমার আগরওয়ালাও একজন দানশীল ও পরোপকারী মানুষ। তাছাড়া তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি মানুষকে দিয়ে থাকেন। আর তার উপর কিনা নিয়োগ বাণিজ্যের দায় চাপানোর চেষ্টা করছে কলেজ অধ্যক্ষ। এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় ষড়যন্ত্র। এই মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 


কুষ্টিয়ার অন্যতম স্বনামধন্য এই কলেজটিতে ৩টি পদে নিয়োগ দিতে সর্বমোট ৩১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কলেজ অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান ও তার সহযোগীরা। তাদের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধিগণ, অভিভাবক সদস্য, দাতা সদস্য ও বিদ্যুৎসাহী সদস্য সকলেই আছেন। ঘুষ বাবদ গ্রহন করা ৩১ লক্ষ টাকার মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা খোদ কলেজের একাউন্টে গ্রহণ করায় বিপাকে পড়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ। নিজেকে বাঁচাতে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির উপর দায় চাপানোর বৃথা চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। 


গত ১৪ অক্টোবর দৈনিক জনবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত " কলেজের একাউন্টে লেনদেন, কুষ্টিয়ায় দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজে নিয়োগে ঘুষ বানিজ্য " শিরোনামের সংবাদটিতে অধ্যক্ষ তার বক্তব্যে বলেছিলেন-"আমি কিছু জানিনা। সব জানে কলেজের সভাপতি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়াল। উনার অনেক বড় ব্যাপার স্যাপাড়। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এমপি সাহেবের সাথে কথা বলেই এই নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া কলেজের জেনারেল একাউন্টে লেনদেনের কোন হিসাব আপনাদেরকে আমি বলতে পারবোনা।" মুহূর্তেই প্রকাশিত সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দৃষ্টিগোচর হয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালের।


তিনি গত ১৬ অক্টোবর দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকায় অধ্যক্ষের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন- "অবৈধ ভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়োগদানের বিষয়ে তিনি অবগত নন। তার অগোচরে নাম ভাঙ্গিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষ এই অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিতে পারেন। তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক। কলেজের সভাপতি হওয়ার পর থেকে তিনি কলেজের উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। তাছাড়া তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত তারা দেবী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছেন। তার মতো একজন দানশীল মানুষের পক্ষে নিয়োগ প্রদান করে অর্থ নেওয়ার কোন সুযোগ বা প্রয়োজন নেই।" 


অন্যদিকে গত ১৬ ই অক্টোবর দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকায়, গত ১৪ অক্টোবর দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকার ৬ষ্ঠ পাতায় প্রকাশিত "দোয়ারকাদাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজ' ৩১ লক্ষ টাকায় নিয়োগ পেলেন ৩ প্রার্থী” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির প্রতিবাদ জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান বলেন,সংবাদটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। 


বিশেষ করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জনাব দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সম্পর্কে আমার দেয়া বক্তব্যটি দেখে আমি প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি। এরকম কোন বক্তব্য আমি দেইনি। তাই প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে। বিশেষ করে কলেজের সন্মানিত সভাপতির ব্যাপারে প্রকাশিত বক্তব্যের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই সংবাদের ব্যাপারে আমার বক্তব্য পরিষ্কার। 


আমার জানামতে কোন রকমের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ কমিটি এই নিয়োগ প্রদান করেনি। সম্পূর্ণ বিধি মেনেই এই নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তারপরও আমরা অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত করে যদি কারো সংশ্লিষ্টতা খুজে পাই তবে সকলের সামনে প্রকাশ করবো।


দোয়ারকাদাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামানের আলাদা আলাদাভাবে এমন প্রতিবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর পত্রিকার নিউজ কাটিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই নিউজ কাটিং সাধারন জনগনসহ স্থানীয় মানুষের চোখে পড়লে বিষয়টি নিয়ে জনগনের মাঝে নানা ধরনের গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছে দুদক যদি বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত শুরু করে তাহলে থলের বিড়াল বেড় হয়ে আসবে। 


জামায়াত নেতার মেয়েকে চাকুরি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 


বিষয়টি নিয়ে হরিনারায়নপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের এত উন্নয়নের পরেও বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন সরকার পতনের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম ও নাশকতা কাজ করে বেড়াচ্ছে। তারপরেও যদি তারা এই সরকারের আমলে উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানে তাদের কোন লোককে নিয়োগ  করে তাহলে তারা অবশ্যই দূর্নীতির মাধ্যমেই এখানে নিয়োগ দিয়েছে৷ তারা ঘুষের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরে এজেন্ডা নিয়োগ করছে। এগুলোর প্রতিবাদ করা উচিত।


আরএক্স/