মার্কিন যুদ্ধনীতি এবং ইউরোপিয়ান জোট
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট। বর্তমান সদস্য সাতাশ। ইউরোপ মহাদেশ তো বটেই, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব রাজনীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে অন্যতম প্রধান নিয়ামক শক্তি,পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল এ ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শান্তি ও মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্ববাসীর কাছে ইতিমধ্যে অন্যতম এক আস্থার প্রতিশব্দ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য স্থাপনে সংস্থাটির ভূমিকা অনস্বীকার্য।ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিঃসন্দেহে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিপত্তিশালী সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পুরো ইউরোপ মহাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রবল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো দুই প্রভাবশালী পরাশক্তির উত্থান এ সময় গোটা ইউরোপকে দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক বলয়ে পৃথক করে ফেলে। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অতি ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন শক্তির উত্থান কার্যত পুরো ইউরোপ মহাদেশে নতুন সংকটের সৃষ্টি করে। ফলে ১৯৫১ সালে ইউরোপীয় কোয়াল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি গঠিত হয়, যা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সৃষ্টির প্রথম ধাপ। INQ ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও ন্যাটোর দ্বন্দ্ব যত ঘনীভূত হচ্ছে তত উদ্বেগ বাড়ছে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ নিয়েও৷ ইউরোপের জ্বালানি নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন ন্যাটো প্রধানও৷ইউরোপ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি করে৷ মূলত, দুইটি পাইপলাইনের মাধ্যমে এই গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া৷ ইয়ামাল-ইউরোপ লাইনটি বেলারুশ, পোল্যান্ড হয়ে পৌঁছে গেছে জার্মানিতে৷ নর্ড স্ট্রিম ওয়ান বাল্টিক সাগর হয়ে সরাসরি এসেছে জার্মানিতে ৷ গত কয়েক বছর ধরে জোটের বিভিন্ন দেশ তাদের গ্যাসের উৎস বহুমুখী করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে৷ তবে এখনও রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা পুরোপুরি হ্রাস করা যায়নি৷
বর্তমানে ইউরোপের গ্যাসের চাহিদার ৩৫ শতাংশ বা এক তৃতীয়াংশ মিটিয়ে থাকে রাশিয়া৷এমন অবস্থায় ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বন্দ্বে জ্বালানি সংকটে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে ইইউ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ও অন্যদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের মাঝে মতাদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে যে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা, মূলত তা থেকেই ন্যাটো ও ওয়ারশ জোটের জন্ম। মার্কিনি নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সঙ্গী হয় পশ্চিম ইউরোপীয় পুঁজিবাদী দেশগুলি। আর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো মিলে গঠন করে ওয়ারশ জোট। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন মুছে ফেলে ওয়ারশ জোটকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির এই চুক্তিটি ১৯৫৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। ৩০ বছর আগে ওয়ারশ জোটের বিলুপ্তি ঘটলেও, ন্যাটো জোট দিনে দিনে পূর্ব ইউরোপে তার পরিধি বিস্তৃত করছে। ন্যাটো তার সদস্য সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি করেছে। মোট ৩০ সদস্যভুক্ত এই জোটের অনেক সদস্য রাষ্ট্র এক সময় সোভিয়েত জোটভুক্ত ওয়ারশ জোটের সদস্য ছিল।গত শতাব্দীর দুটি মহাযুদ্ধ থেকে যুদ্ধ যাতনা কাকে বলে তা ইউরোপের জনগণ ভালো করেই জানে। আর আমেরিকা বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধ করলেও যুদ্ধের যে যাতনা এবং নির্মমতা সেই অভিজ্ঞতা নিজ দেশের জনগণের নেই বললেই চলে। ইউরোপের মাটিতে শেষ যুদ্ধ হয়েছ ১৯৯২-১৯৯৪ সালে, সাবেক যুগোস্লাভিয়ার মাটিতে যা বলকান যুদ্ধ বলে পরিচিত। এর পর দীর্ঘ সময় বিশ্বের নানা স্থানে যুদ্ধ হলেও ইউরোপে ঐক্য শান্তির রাজনীতি প্রাধান্য পেয়েছে। ইউরোপ মহাদেশে এই স্থিতিশীল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণে মার্কিনিদের উৎসাহের বিষয় নিয়ে ইউরোপে সমালোচনা হচ্ছে। একই ভাবে সমালোচনা হচ্ছে-১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রায় ৩০ বছর পর, রাশিয়া কেন তার প্রাক্তন ভূখণ্ড ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির ওপর প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠছে।
করোনার প্রবল প্রতাপে যখন ইউরোপের জবুথবু অবস্থা, তখন সঙ্গে শুরু হয়েছে নতুন এক উপসর্গ। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার যুদ্ধ যুদ্ধ হুংকার। করোনা মহামারি কারণে সারা বিশ্ব জুড়েই অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকট। আর এই জরুরি আপত্কালীন সময়ে ইউক্রেনকে নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধের তোড়জোড়, ইউরোপীয় দেশগুলির সরকারগুলোর মাঝে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেন ইস্যুতে সামরিক তৎপরতার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও বেড়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে একই সময়ে জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ছুটেছে ওয়াশিংটন আর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ছুটছে মস্কো। একই সময়ে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক গেছেন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়ভে। এরপর চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ গেছেন কিয়েভ ও মস্কোতে। আপাতদৃষ্টি তে মনে হচ্ছে, যুদ্ধের চেয়ে যুদ্ধের দামামা বা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করবার প্রবনতাই প্রবল। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন ন্যাটো জোটের পূর্ব ইউরোপে দিকে সম্প্রসারণের সঙ্গে ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েনকে ন্যায্যতা দিয়েছেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়ার চেষ্টাকেও তাদের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন।হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের ইমেরিটাস অধ্যাপক অটো লুচটারহ্যান্ড, দ্য জাইট পত্রিকাটিতে বলেছেন, সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুমকি বা রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা ইউক্রেনকে ঘিরে ফেলা, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। অন্যদিকে জার্মানির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োসকার ফিশার সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়া সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় পুরো ইউরোপকে ঘিরে ক্ষমতার বলয় তৈরির চেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভূখণ্ডে একটি রাশিয়ান প্রভাবিত অঞ্চল পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় ব্রত হয়েছেন। বিগত সময়গুলিতে আফগানিস্তান, কুয়েত বা ইরাকের যুদ্ধে যেতে অসম্মতির জন্য ইইউ বা ন্যাটো জোটের বড় সদস্য দেশ জার্মানি ও ফ্রান্স যুদ্ধবাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিকট তিরস্কৃত হয়েছে।
বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধে যাওয়ার মার্কিনি যুদ্ধবাজ নীতি এবং অস্ত্র নির্ভর অর্থনীতির বিষয়টিতে ইউরোপের সরকারগুলি ভালো চোখে দেখে না। ব্যতিক্রম হলো পোল্যান্ড বা হাঙ্গেরি বা রোমানিয়ার মতো রক্ষণশীল সরকার বা বাল্টিক অঞ্চলের তিন দেশ লাটভিয়া, এস্তোনিয়া ও লিথুনিয়া। এখন ইউক্রেনও ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় দেশ জার্মানি কেন ইউক্রেন ইস্যুতে ততটা সরব নয় বা রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করছে না, তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। জার্মানির জন্য গলার কাঁটার মতো বিঁধে আছে রাশিয়া-জার্মানি গ্যাস পাইপ লাইন বা নর্থস্ট্রিম ২ নামক প্রকল্প। ইউক্রেনে সংকটে জার্মানির জন্য যুক্ত হয়েছে গ্যাস রাজনীতি। দুটি বিশ্বযুদ্ধের চরম বীভৎসতা আর বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় নেতারা যতটা সম্ভব নিজ ভূখণ্ডে যুদ্ধকে এড়িয়ে চলার কৌশল গ্রহণ করেছে।মার্কিনি যুদ্ধনীতি থেকে বেরিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্বার্থে জোটের দুই বড় দেশ জার্মানি ও ফ্রান্স ইইউ জোটের আত্মপরিচয় সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তারা মহাদেশীয় শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে চাইলেও, ভূ-রাজনীতি তাতে বাঁধা সাঁধেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপের নিরাপত্তাকে কতটুকু হুমকিতে ফেলবে, তা নিয়ে গতকাল ফ্রান্সের স্ট্রসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে আলোচনা হয়। সেখানে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বক্তব্য দেন। একবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে যুদ্ধ বাধবে-অল্প কিছুদিন আগেও এ ধারণা কল্পনায় আনা যেত না। কিন্তু এখন তা আর কল্পনাতীত কিছু নয়। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাবে কি না, তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে জল্পনাকল্পনার পর ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (ইসিএফআর) চালানো প্যান-ইউরোপিয়ান জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরদাতা মনে করছেন, এই একুশ শতকেই একটি যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের একেক দেশের মধ্যে একেক ধরনের ভয় কাজ করছে।
এদিকে পোল্যান্ডের মধ্যে নতুন উদ্বাস্তু প্রবাহের উচ্চতর ভয় কাজ করছে। ফ্রান্স এবং সুইডেনের কাছে সাইবার আক্রমণ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুটি দেশের জাতীয় নির্বাচনে রাশিয়ার সাম্প্রতিক অনলাইন ভিত্তিক হস্তক্ষেপই তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ। অন্যদিকে তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের জ্বালানির অভাব জার্মানি, ইতালি এবং রোমানিয়ার জন্য বড় ভয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।তবে ইউরোপীয়রা বাইরের হুমকি সম্পর্কে যতটুকু ধারণা পোষণ করে থাকে, আদতে তারা তার চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছে। মহান জার্মান কৌশলবিদ কার্ল ভন ক্লজসেভিৎস যুদ্ধকে রাজনীতির ভিন্নতর ধারাবাহিকতা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তার আলোকে ইউক্রেন সংকটের প্রথম দিককার সপ্তাহ গুলোতে ইউরোপের দেশগুলো কীভাবে যুদ্ধ-হুমকির প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল, তা অনুধাবন করলে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে।যুদ্ধ যে ইউরোপে আর কল্পনাতীত বিষয় নয়,সেটিই ইউরোপীয়-দের সম্মিলিত শান্তি রক্ষার জন্য আপস করতে ও এক ছাতার তলায় আসতে বাধ্য করতে পারে। ইউক্রেনের সীমান্তে সেনা জড়ো করার সময় পুতিন বুঝতে পারেননি তিনি অজান্তেই ইইউ সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে একটি ঐক্যের দিকে ধাবিত করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এক নম্বর লক্ষ্য হলো সংকট মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান এবং সময়-উভয়কেই যথাসম্ভব হ্রাস করা। দায়িত্ব গ্রহণের পর বাইডেনের লক্ষ্য ছিল আমেরিকার মধ্যবিত্ত উপকৃত হবে এমন নীতি কার্যকর করা এবং মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ফোকাস ইন্দো-প্যাসিফিক এবং চীন দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের দিকে স্থানান্তর করা। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেন, এটিও আমেরিকার গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। এ কারণে এসব দিকেই বাইডেনের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকার বর্তমান অবস্থান পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের সরকারগুলোর জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে আমেরিকার বিদ্যমান অবনতিশীল রাজনীতি এবং জো বাইডেনের প্রশ্নবিদ্ধ সংকল্প নিয়ে এই দেশগুলো ক্রমে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। তাদের সবচেয়ে বড় ভয় হলো, যদি যুক্তরাষ্ট্রের নির্লিপ্ততার মধ্য দিয়ে রাশিয়ান ট্যাংকগুলোকে ইউক্রেনে ঢুকতে দেওয়া হয়, তাহলে রুশ বাহিনীর পরবর্তী গন্তব্য তালিন, রিগা, এমনকি ওয়ারশও হতে পারে।এদিকে জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া এবং গ্রিসের মতো দেশগুলোর আশঙ্কা, ইউক্রেনের ওপর আঘাত রাশিয়ার সঙ্গে তাদের অধিকতর স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেবে। সব মিলিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে নানা ইস্যুতে মতবিরোধ আছে। তবে ইউরোপে আরেকটি যুদ্ধ প্রতিরোধ করার ইচ্ছা; ন্যাটোর বিশ্বাসযোগ্যতা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং ইউক্রেনকে রাশিয়ার জোয়ালের নিচে বাধ্য করা থেকে বাঁচানোর দায়িত্ববোধ-এ তিন ইস্যুতে তারা মোটামুটি একমত।এটিই এখন আশার কথা। ভালো খবর হলো, ইউরোপীয় সরকারগুলো তাদের নিজেদের ভেদাভেদ দূর করার পন্থা খুঁজছে। যদিও মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় অনেক দেশ রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করছে।যুদ্ধ যে ইউরোপে আর কল্পনাতীত বিষয় নয়, সেটিই ইউরোপীয়দের সম্মিলিত শান্তি রক্ষার জন্য আপস করতে ও এক ছাতার তলায় আসতে বাধ্য করতে পারে।