দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পদ্মাসেতু হয়ে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার অপেক্ষায়


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪১ অপরাহ্ন, ২৬শে অক্টোবর ২০২৩


দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পদ্মাসেতু হয়ে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার অপেক্ষায়
বেনাপোল এক্সপ্রেস। ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২ নভেম্বর ঢাকা থেকে বেনাপোলের মধ্যে পদ্মাসেতু হয়ে চলাচল করবে যাত্রীবাহী ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেন।


এরই মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাল্টে গেছে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ঢাকার যাতায়াতব্যবস্থা। আগে বেনাপোল থেকে দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকা যেতে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের সময় এক থেকে দুইদিন। 


পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় যাচ্ছে মাত্র ৪-৫ ঘণ্টায়। পক্ষান্তরে ভারতে রপ্তানিযোগ্য পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে বেনাপোল পৌঁছাচ্ছে একই সময়ে। যাত্রী পরিবহনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। যাত্রীবাহী বাসে বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছাতে আগে সময় লাগত ৮ থেকে ১৫ ঘণ্টা।


পদ্মা সেতুর বদৌলতে ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রীরা এখন ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকায়। বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যা। বেনাপোলের সঙ্গে যশোর হয়ে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ চালু হলে পরিবহনের অগ্রযাত্রায় যোগ হবে আরেকটি নতুন অধ্যায়। যশোরের চেঙ্গুটিয়া থেকে নড়াইল পর্যন্ত রেলসড়কের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।


সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন। সম্পূর্ণ রেলপথ নির্মাণ না হওয়ায় বিকল্প পথে অর্থ্যাৎ মাওয়া থেকে ফরিদপুর-রাজবাড়ী-পোড়াদহ হয়ে ট্রেন যাবে যশোর। বেনাপোল থেকে ঢাকা যাবে একই পথে।


আপাতত যশোর থেকে পোড়াদহ হয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় একটু বেশি লাগবে। তবে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকার রেল প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে পাল্টে যাবে বেনাপোল বন্দরের চিত্র।


ব্যবসাবাণিজ্যে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা মনে করেন রেলব্যবস্থা চালু হলে সময় বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।


ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিনির্ভর যশোর অঞ্চলের কৃষি খাত আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। যশোর-সাতক্ষীরা অঞ্চলের মাছের পাশাপাশি গদখালী ও ঝিকরগাছার ফুল, বিভিন্ন ধরনের সবজি, নারকেল, কাঁঠালসহ কৃষিজাত পণ্য সহজেই পৌঁছে যাবে ঢাকায়। দ্রুততম সময়ে কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হলে উপকৃত হবে এ অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক।


বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ শামছুর রহমান বলেন, ‘গার্মেন্টসহ রপ্তানিযোগ্য পণ্য পরিবহনে অধিকতর সুবিধা আসছে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে। দ্রুততম সময়ে রেল যোগাযোগ চালু হলে বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে, সেই সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় গত এক বছরে ব্যবসাবাণিজ্যের পরিধি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি মালামাল বহনের জন্য ওয়াগন জুড়ে দিলে অল্প টাকায় কম সময়ে আমদানি মালামালের পাশাপাশি কৃষিনির্ভর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফুল, মাছ দ্রুততম সময়ে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।


বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেনডেন্ট মো. আব্দুল আওয়াল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,আগামী ২ নভেম্বর থেকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ (৭৯৫) ট্রেনটি নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে। ওইদিন ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। ট্রেনটি (৭৯৫/৭৯৬) উভয় পথে ঝিকরগাছা, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, দর্শনা হল্ট, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।


আরএক্স/