জুড়ীতে ল্যাপটপ চুরির অপরাধে ছাত্রকে মারধর শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৩


জুড়ীতে ল্যাপটপ চুরির অপরাধে ছাত্রকে মারধর শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে। ছবি: জনবাণী

মৌলভীবাজারের জুড়ীর শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে ল্যাপটপ চুরির অপবাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তার পিতা নৈশপ্রহরীকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। আহতরা বর্তমানে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করে মারধরের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির অপসারণেরও দাবি জানায়। 


এদিকে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।


স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২৯ অক্টোবর দূর্গাপূজার ছুটি শেষে বিদ্যালয় খুলে। ওই দিন বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষকের অফিস টেবিলের ডয়ারে একটি ল্যাপটপ পেয়ে তিনি অধ্যক্ষকে অবগত করেন। পরে খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে একটি ল্যাপটপ মিসিং। 


ল্যাপটপ কিভাবে ল্যাব থেকে সহকারি প্রধান শিক্ষকের টেবিলে আসল সে বিষয়টি অনুসন্ধান করে ল্যাপটপের স্ক্যানে জিসান নাম পাওয়া যায়। গত বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিচার বসিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ চুরির অপরাধে মারধর করা হয়। এতে সে গুরুত্বর আহত হয়ে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  চিকিৎসাধীন রয়েছে। 


শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ সহকারি প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ১৯ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। বন্ধের আগে ল্যাব অপারেটর দেখেন সব কিছু ঠিক আছে। যখন ২৯ তারিখ বিদ্যালয় খুলা হয়, তখন আমার টেবিলের ডয়ারে একটি ল্যাপটপ দেখি। 


ল্যাপটপ থাকার কথা ল্যাবে এটি এখানে কেন? সাথে সাথে আমি পিন্সিপাল স্যারকে অবগত করলাম।  তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন ল্যাবে একটি ল্যাপটপ নেই। পরে তিনি তাৎক্ষণিক শিক্ষক ও গভর্নিং কমিটিকে নিয়ে বসলেন। সবাই মিলে তদন্ত করে ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড পাওয়া যায়। কিন্তু ল্যাবের কোন ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড ছিল না। 


প্রথমে জিসান স্বীকারোক্তি দেয় নি, তার পর চেয়ারম্যান তাকে কিছু বেত্রাঘাত (মারধর) করেন। গভর্নিংবডি ও শিক্ষকদের উপস্থিতে সে ল্যাপটপ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। গভর্নিংবডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বাবা মবুল্লা'কে নৈশ্যপহরী কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 


প্রত্যক্ষদর্শী শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম (২৩) ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গত ২৯ তারিখ ল্যাব থেকে হারিয়ে যায় একটি ল্যাপটপ। পরে এটি পাওয়া গেছে সহকারি প্রধান শিক্ষকের রুমে একটি ডয়ারে। 


সেই ল্যাপটপের লকে পাসওয়ার্ড'র অপশনে নাম সু করেছিল জিসান। এটার উপর ভিত্তি করে গভর্নিংবডি বিচার করেছেন। এখানে দোষি করা হয়েছে জিসানকে। সে এ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর ছেলে এবং ২০২৪ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থী।  


তাকে এবং তার বাবা নৈশপ্রহরী মবুল্লা'কে খুব বেশি মারধর করা হয়েছে। তার অবস্থা গুরুত্বর হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এর আগে একাধিক চুরির ঘটনায় স্কুলের সেলিম স্যার চুরির সাথে সম্পৃক্ত থাকার পরে কোন বিচার হলো না। সে এমন কি দোষ করলো যে, তাকে নির্মম ভাবে অত্যাচার করা হলো। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। 


জিসানের মা মোছাঃ কোহিনুর বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। সে যদি ল্যাপটপ চুরি করতো তাহলে বাসায় নিয়ে আসতো অথবা বিক্রি করে ফেলতো। 


সে ল্যাব থেকে সহকারি প্রধান শিক্ষকের অফিসে কেন রাখতো। ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও প্রধান শিক্ষক তারা আমার ছেলেকে এবং তার বাবাকে ষড়যন্ত্র করে বেদড়ক পিটিয়েছে। 


পেটানোর কারণে আমার ছেলের লজ্জাস্থান মারাত্মক আঘাত পেয়েছে, সে প্রসাব করতে পারছে না। তার অবস্থা আশংকাজনক। সে দোষী হলে দেশে আইন আছে, তাকে আইনের  আওতায় দিয়ে দিতো। তারা কেন নির্মমভাবে পেটাতো।


গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ূম বলেন, দুপুর ২টার দিকে আমার কাছে খবর আসে যে, শিলুয়া স্কুলে একজন চুর ধরা পড়েছে। সে সময় ৭ নং ওয়ার্ডের আব্দুল মেম্বার সহ আমরা সেখানে উপস্থিত হই। 


গিয়ে দেখি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন লেমন সহ বেশ কয়েকজন জিসান নামের একটা ছেলে ও তার বাবা উপস্থিত। তখন জিসানের বাবা আমাকে বলেন আমার ছেলেকে বাঁচান। আমার ছেলে অপরাধ করেছে আপনে আমাদের ক্ষমা করে দেন। 


তখন তার বাবা ল্যাপটপ চুরির ঘটনা স্বীকার করলেও ছেলে করতে নারাজ। পরে তাকে বাহিরে নিয়ে বুঝানোর পরে বিষয়টি স্বীকার করে। এর পরে সে ল্যাপটপটি আবার রেখে দেয়। স্বীকার করার পরে দুই ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও শিক্ষক তাকে বেত দিয়ে আঘাত করেছেন। 


এ ব্যাপারে শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ তাজুর রহমান শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ইউসুফ জিসানকে মারধর করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গভর্নিংবডির সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও ২ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য উপস্থিতি ছিলেন। জনপ্রতিনিধিরা তারা অনেক কৌশল জানেন। কৌশল অবলম্বন করে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ল্যাপটপ চুরির বিষয়টি স্বীকার করানো হয়েছে। 


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, আমি শুনেছি একটি ছেলেকে ল্যাপটপ চুরির দায়ে পেটানো হয়েছে। ইউএনও স্যার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্ত করে বিষয়টি দেখব।


আরএক্স/