ধানের বাম্পার ফলন খুশি বেড়ার কৃষক


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:২১ অপরাহ্ন, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৩


ধানের বাম্পার ফলন খুশি বেড়ার কৃষক
ছবি: জনবাণী

হেমন্তের ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বাংলার মাঠ। সোনালী ধানে ভরে গেছে মাঠ প্রান্তর। সারা মাঠে যেন ছড়ানো রয়েছে সোনা। জমির অধিকাংশ ধানে পাঁক ধরেছে,কৃষক মাঠে ধান কাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আবার কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হয়েছে। 


নিজেদের খাবারের চাহিদার পাশাপাশি গবাদি পশুর জন্য খড় সংগ্রহ করাও জরুরী হয়ে পড়েছে। খড়ের দাম বেশী থাকায় অনেকেই পুরো ধান পাকার আগেই জমির ধান কাটতে শুরু করেছে। 


ধান কাটা,ধান সংগ্রহ ও খড় শুকানো নিয়ে ইতি মধ্যেই কৃষক পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি বাড়ীর মহিলারাও ব্যস্ত সময় পার করছে। এখন আর আগের মত গরু-মহিষ দিয়ে ধান মাড়াই করা হয়না,আধুনিক মাড়াইযন্ত্র দিয়ে খড় থেকে ধান আলাদা করা হয়। বাড়ীর পুরুষরা মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় ধান উড়ানো,শুকানো ও খড় শুকানোর মত কাজ বাড়ীর মহিলারা করছে।

          

বেড়া উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নূসরাত কবীর জানান, এ মৌসুমে বেড়া উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ২শ’৫০ হেক্টর জমিতে। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বেশী চাষ করা হয়েছে। 


আমন মৌসুমে বেড়া উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার ৮শ’৫০ হেক্টর বা ৫৪ হাজার ৮শ’ বিঘা জমিতে বোনা আমন এবং ৪ শ’হেক্টর বা ৩ হাজার ২শ’ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১১হাজার ৯শ’৮৯ মেট্রিক টন। যার মধ্যে বোনা আমন ১০হাজার ৫শ’৪৯ মেট্রিক টন এবং রোপা আমন ১হাজার ৪শ’৪০ মেট্রিক টন। আমন মৌসুমে ব্রী-৭৮,ব্রী-৩৯,ব্রী-৪৯,স্বর্ণা এবং বিনা-৭ও বিনা-১৭ উন্নত জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। 


বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২২ মন উচ্চ ফলনশীল ব্রী-৮৭ জাতের ধানের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এলাকার কৃষক। অনুকুল আবহাওয়া,ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন। বিঘা প্রতি রোপা আমন ধানের গড় ফলন ১৫ থেকে ১৭ মন  এবং বোনা আমন বিঘা প্রতি ৬ থেকে ৭ মন পাওয়া যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। 


শনিবার বেড়া সিএন্ডবি ধানের হাটে ধান বিক্রি করতে এলে কথা হয় উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া গ্রামের রোপা আমন চাষী আ.বারী,আজাহার মোল্লা,কৈটোলা ইউনিয়নের কৈটোলা গ্রামের মো.আনছার আলী,কেরামত আলী বলেন, মাঠে কেবল ধান কাটা শুরু হয়েছে,সামান্য কয়েক মন ধান বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। 


চৌদ্দশ’পঞ্চাশ টাকা থেকে পনেরশ’ টাকা মন দরে রোপা আমন ব্রী-৩৯ বিক্রি করলাম, হাটে আদি জাতের বোনা আমন ধান বিক্রি করতে   আসা হাটুরিয়া পশ্চিম পাড়া গ্রামের কৃষক কবি মন্টু ফকির জানান,তেরশ’ টাকা থেকে তেরশ’ ত্রিশ টাকা মন দরে বিক্রি করেছি। ভালো দাম পেয়েছি এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলনও এবার ভাল হয়েছে। ধানের চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামী মৌসুমে বেশী করে ধানের চাষ করবেন বলে হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান।


উপজেলার ঢালার চর ইউনিয়ন,মাসুমদিয়া ইউনিয়ন,রুপপুর ইউনিয়ন,জাতসাকিনী ইউনিয়ন ও হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বোনা আমন ধানের চাষ বেশী হয়ে থাকে। হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চরসাঁড়াশিয়া গ্রামের আকসেদ আলী,চরনাগদহ গ্রামের তফিজ উদ্দিন,ঢালারচরের ফজলুল হক সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়,রোগ বালাই,পোকা মাকড়ের আক্রমন না হওয়ায় আমন ধানের কাঙ্খিত ফলন হয়েছে।

  

উপসহকারী কৃষি অফিসার ইউনুস আলী জানান,বোনা আমন ধান চাষে কৃষকের তেমন বেশী কিছু খরচ না হওয়ায় কৃষক বোনা আমন ধানের চাষ করে থাকে। সার,কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় বোনা আমন ধান চাষে তেমন খরচ নাই বল্লেই চলে। ফলন ভাল হলে বিঘা প্রতি গড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মন পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়। এ মৌসুমে বর্ষার পানি দেরীতে আসায় এবং অধিক বন্যা না হওয়ায় বোনা আমন ও রোপা আমন ধানের কাঙ্খিত ফলন হয়েছে বলে তিনি মনে  করেন। 

         

বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে বড় উৎকন্ঠায় ছিলাম।  ঘুর্ণিঝড়ের সামান্য প্রভাবেই জমির ধান ওলট পালট হয়ে মাটি-কাঁদায় মাখা-মাখি হয়ে যেতে পারতো,তবে আল্লাহতালার অশেষ মেহেরবানী যে, ঘুর্ণিঝড়ে আমাদের এলাকা তেমন কোন ক্ষতি হয়নি,শুধু সিত্রাংয়ের প্রভাবে বোনা আমন ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে। ধানের ফলনে উপর প্রভাব না পড়লেও ধান কাটতে বেশী শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ছে।


আরএক্স/