জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে সংহতি সমাবেশ


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৫০ অপরাহ্ন, ১২ই নভেম্বর ২০২৩


জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে সংহতি সমাবেশ
মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে সংহতি সমাবেশ। ছবি: জনবাণী

বনভূমি উজাড় করে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ না করে অংশীজনের মতামত নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে সংহতি সমাবেশ আয়োজন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। 


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত্বরে 'জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলনে'র ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


সংহতি সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ  মাহা মির্জা বলেন, উন্নয়নের নামে আমরা যে পরিবেশ ধ্বংস করেছি সেটা ভবিষ্যতে মোটেও সুফল বয়ে আনবে না। 


আমরা এমন দূর্যোগের মুখে পড়ব যা আগে কখনো দেখি নাই৷ উন্নয়নের নামে আগ্রাসন বনভূমি ধ্বংস আমাদের ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে যা ঠেকানো সম্ভব না। 


বিষয়টাকে সামগ্রিক ভাবে দেখতে হবে। বনভূমি রক্ষা, পরিবেশ বাচানো এবং উন্নয়ন করার সকল উদ্যগ আমাদের নিতে হবে। প্রাণপ্রকৃতি না বাচলে আমরা নিজেরাই বাঁচতে পারব না। 


গত গ্রীষ্মের যে পরিমাণ তাপমাত্রা আমরা দেখেছি বিগত বছর গুলোতে তার অর্ধেকও দেখি নাই। এই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার মুল কারন গাছপালা ধ্বংসকরন। প্রকৃতির সাথে জ্ঞানের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। 


সেই প্রাচীন কাল সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল এর যুগ থেকে শুরু করে আজ অবধি জ্ঞান অর্জনের জন্য মানুষ প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতো ধ্যান-প্রশান্তি সব কিছুর জন্যই প্রকৃতির কাছাকাছি চলে আসত। 


কিন্তু সেই পরিবেশ যদি ধ্বংস করি সেই ধ্বংস শুধু পরিবেশের হবে না এইটা জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রেও এক অসনি সংকেত। জ্ঞান ও পরিবেশ রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।


সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীনগরে মাস্টারপ্ল্যান করার কথা দিয়েও তা করা হলো না। অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র ভবনগুলো নিমার্ণ হতে থাকলো। ঠিকাদাররাই জাহাঙ্গীরনগরে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। 


এটাকে ঠিকাদার পরিচালিত উন্নয়ন প্রকল্প বলা যেতে পারে। মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে তর্ক বিতর্ক হচ্ছিলো তখন এর নাম পরিবর্তন করে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নাম দেয়া হচ্ছে। আমরা বলছি আইবিএ ভবন দরকার, বিভিন্ন বিভাগের ক্লাসরুম সংকট দূর করা দরকার। এগুলো দরকার বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা দরকার।’


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের প্রকৃতির সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আত্মার সম্পর্ক আছে। এখানকার ছাত্র-যুবসমাজের সকল আন্দোলনে দেশের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে ১৫/১৬ শতাংশ বনভূমি আছে সেখানে জাহাঙ্গীরনগরের প্রকৃতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ঢাকা শহরে বনভূমি, জলাশয় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন আর প্রজেক্টের কাছে সারা বাংলাদেশ এখন জিম্মি হয়ে গেছে। আমরা প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে কোন উন্নয়ন চাই না।’


সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, প্রশাসনের এই পরিকল্পনাহীন এ বিধ্বংসী আচরণের বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে একের পর এক বনাঞ্চল ও জলাভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কিছুদিন আগেই সুন্দরবন এলাকায় গাছ কাটা হয়েছে, আজ সেখানে পুনরায় গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লোকচক্ষুর আড়ালে, রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন জায়গায় গাছ কেটে পরিবেশের যে ক্ষতি করে চলেছে শীঘ্রই তার অবসান না ঘটলে জাহাঙ্গীরনগর তার প্রাণপ্রকৃতি  হারাবে। যত্রতত্র ভবন নির্মাণ না করে পরিকল্পিতভাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা৷