পিরোজপুরে মৌসুমের শেষে আমড়ার বাম্পার ফলন
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:০৬ অপরাহ্ন, ২রা ডিসেম্বর ২০২৩
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে শেষ মৌসুমেও এ বছর আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনেও আমড়ার উপযুক্ত দাম না মেলায় বরাবরই লাভের মুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষীরা।
অপরদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ করে বলেছেন, সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকার আমড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় আগে পিরোজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী নেছারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমড়ার বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। সেই থেকে আমড়ার ভালো ফলনেও এ পর্যন্ত এখানে কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি। ফলে আমড়ার মৌসুম এলেই এনিয়ে চিন্তিত থাকেন আমড়া চাষিরা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বরূপকাঠির আমড়া দেশব্যাপী বরিশালের আমড়া নামে পরিচিত। বলতে গেলে উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের বাড়ির সামনে একটি ২টি আমড়া গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা, জলাবাড়ি, বলদিয়া, দৈহারি, সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে শুরু হয় আমড়া চাষ। আমড়ার মৌসুমে প্রতিদিন ৯০/১০০ টন আমড়া যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ব্যবসায়ীরা জানান, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আমড়া সংরক্ষণের অভাবে প্রতিটি ব্যবসায়ীর অনেক আমড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাংলা সনের ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক এই তিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ, ট্রাকে করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বরিশালের আমড়া বিক্রির উদ্দেশে পাঠানো হয়। চাষিরা আমড়া পেড়ে নৌকায় ভরে ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে আসেন। আবার কোনো চাষি আগাম আমড়া ক্ষেত বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা আমড়া কিনে ক্যারেট ও বস্তায় ভরে নৌ ও স্থলপথে পাঠান দূর-দূরান্তে। সেখান থেকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা আমড়া কিনে ছড়িয়ে দেন সারাদেশে।
আটঘর-কুড়িআনার আমড়া চাষি সুজন কুমার রায় জানান, এ বছর আমড়ার ফলন মোটামুটি ভালো। তিনি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় আমড়া পাঠান। মৌসুমের শুরুর দিকে আমড়ায় খুব লোকসান হয়েছে। শেষ সময়ে আমড়ার দাম একটু বেশি। গতবারের তুলনায় এ বছর আমড়ার দাম কম। শেষ মুহুর্তে আমড়ার দাম বেড়েছে সে অনুযায়ী ফলন পাচ্ছি না। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী আমড়া পাঠাতে হয়। আটঘর কুড়িয়ানার ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, স্বরূপকাঠি আটঘর-কুড়িয়ানার আমড়ার খ্যাতি দেশজুড়ে। এখানকার আমড়া বরিশালের আমড়া নামেই পরিচিত। আমড়া চাষে ইউনিয়নের সহস্রাধিক লোক জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা আর হিমাগারের অভাবে আমড়ার ব্যবসায়ী ও চাষিরা প্রতিবছরই কম-বেশি লোকসান গুণে থাকেন।
জানতে চাইলে নেছারাবাদ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা চপল কান্তি নাথ বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নেছারাবাদ উপজেলায় ভরা মৌসুম পরবর্তী সময়ও প্রচুর আমড়ার ফলন হয়। সরকারিভাবে আমড়া চাষিদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে আমড়ার ফলন আরও ভালো হবে। চাষিরা এই বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জেবি/এজে