জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বন্ধে উপায় খুঁজছে বিশ্ব


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:১২ অপরাহ্ন, ৬ই ডিসেম্বর ২০২৩


জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বন্ধে উপায় খুঁজছে বিশ্ব
ছবি: জনবাণী

বশির হোসেন খান, আরব আমিরাত (দুবাই) থেকে: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন পর্যায়ক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধের উপায় খুঁজছে বিশ্ব। শেষ পর্যন্ত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বন্ধ করতে সম্মত হবে, নাকি এ বিষয়ে একটি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে; সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।


সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৮) পঞ্চম দিনে এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা করেছে। কপ২৮ সম্মেলনের সম্ভাব্য চূড়ান্ত চুক্তির একটি খসড়া প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা। চুক্তিতে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয় রয়েছে।


আরও পড়ুন: কপ-২৮ আসরে বড় প্রত্যাশা 


খসড়া চুক্তিতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। প্রথমটি হলো সুশৃঙ্খলভাবে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বন্ধ করা; দ্বিতীয়টি হলো অপ্রতিরোধ্য জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদনকে পর্যায়ক্রমে বন্ধের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানানো; আর তৃতীয়টি হলো বিকল্প জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বন্ধের বিষটি এড়াতে হবে। প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা বিকল্পগুলোর বিষয়ে বিবেচনা করবেন। 


কপ২৮-এর মূল আলোচনায় প্রধান কয়েকটি জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা তেল ও গ্যাসের পক্ষে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেনের ব্যবহার কমানোর মতো জলবায়ুবান্ধব পদক্ষেপগুলোর ওপর জোর দেন তারা।


এদিকে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) গ্লোবাল কার্বন বাজেট প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে এবং ধ্বংসাত্মক চরম আবহাওয়ার জন্য দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন এ বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। আর এতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে ভারত ও চীনে কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার। 


প্রতিবেদনে বিশ্বের ৯০টি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা অংশ নিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ৩৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।


এদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে ‘গ্লোবাল কুলিং’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুবাইয়ে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৮)। বৈশ্বিক উষ্ণতা রুখতে সম্মেলনের ষষ্ঠ দিন গতকাল ৬০টি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে ফ্রিজ, এসি থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে অঙ্গীকার স্বাক্ষরের বিষয়ে সম্মত হয়। বাংলাদেশ এর পক্ষে থাকলেও অঙ্গীকার স্বাক্ষরের ব্যাপারে এখনও সম্মতি দেয়নি।


কুলিং ইকুইপমেন্টের বিদ্যুৎ খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ২০৫০ সালের কার্বন নির্গমনে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ হ্রাস পাবে, এনার্জি গ্রিডের ওপর চাপ কমবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে। 


গ্লোবাল কুলিং অঙ্গীকারের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে সম্মেলনে উপস্থিত পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ‘ফ্রিজ-এসিসহ ঠান্ডা তৈরি করে এমন জিনিসপত্রে দুই ধরনের গ্যাস অর্থাৎ এইচএফসি ও এইচসিএফ গ্যাস ব্যবহার হয়। এগুলোর কারণে পৃথিবীর ওজনস্তর ফুটো হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ৬০টি দেশ এই দুটি গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে ঐকমত্য হয়েছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে এখনও সম্মতি না দিলেও এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’


সম্মেলনের সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী-শিশুর স্বাস্থ্যগত প্রভাব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে পরিবেশদূষণ রোধে সিএসও হাবে এক আলোচনা সভায় জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প ব্যবহারের দাবি উঠেছে।


শ্রমিকদের জীবিকা নিরাপত্তা সমন্বিতভাবে নিশ্চিতের দাবি জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে। এগুলো বিবেচনার জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে পরিবেশ নিয়ে কর্মরত বাংলাদেশের দুটি নাগরিক সংগঠন। আলোচকরা সবুজ প্রযুক্তি প্রসার পরিকল্পনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবিকা নিরাপত্তা সমন্বিতভাবে বিবেচনার দাবি জানান।


এদিকে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন।


জিসিএ এলএলএ চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার পেল বাংলাদেশ জলবায়ু সম্মেলনে ইনোভেশন ইন ডেভেলপিং ফাইন্যান্স ক্যাটেগরিতে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) লোকাল লেড অ্যাডাপটেশন (এলএলএ) চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশ।


আরএক্স/