দুই হাতের কব্জী দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করলেন মোবারক


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


দুই হাতের কব্জী দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করলেন মোবারক

ফুলবাড়ী প্রতিনিধি: জন্ম থেকে শারিরীক প্রতিবন্ধী মোবারক আলী (১৬)। তার দুটি হাতের আঙ্গুল না থাকলেও  বয়েছে দুই হাতের কব্জী। শিক্ষা জীবনের শুরুতে দ্বিতীয় শ্রেণি পযর্ন্ত পড়াশুনা করতে মোবারক পা দিয়ে লেখালেখি করতেন। পরে  পায়ের পরিবর্তে দুই হাতের কব্জী দিয়ে লেখালেখি  ব্যবহার করতে করতে এক পর্যায়ে কব্জী দিয়ে লেখার উপযোগি করতে শুরু করেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পর থেকে  তিনি হাতের কব্জী দিয়ে লিখতে শুরু করেছেন এবং এখনো কব্জী দিয়ে লিখে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অদম্য মেধাবী শারিরিক প্রতিবন্ধী মোবারক আলী হাতের কব্জী দিয়ে লিখে ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (পাইলট) কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলেন। তিনি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৮৪ পেয়ে বাবা-মার স্বপ্ন পুরণ করেছে।  

মোবারক আলী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেষা কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকার দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে।এর আগে তিনি ২০১৮ সালে কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হাতের কব্জী দিয়ে লিখে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়েছিলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও পরিবারের  অভাব অনটন থাকার পরেও কঠোর পরিশ্রম করে সামনের দিনগুলোতে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। 
 
মোবারক আলী জানান,সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন পড়াশুনা করে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার স্বপ্নও দেখছেন তিনি। মোবারক আলী আরও জানান, আমার বাবা একজন দিনমজুর। তার পক্ষে আমার পড়াশুনার খরচ যোগান দেওয়া খুবেই কষ্টের হয়েছে। তারপরেও আমি চেষ্টা করে যাবো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য।

মোবারক আলীর বাবা এনামুল হক জানান, তারাও মোবারক আলীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। সে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করছে। আমার আর্থিক সামর্থ না থাকায় মোবারকের চাহিদা সবসময় মেটাতে পারি না। তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো মোবারক যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে তার জন্য সব সময় দোয়া ও ভালবাসা থাকবে। 

সহপাঠি শরিফুল ইসলাম বলেন, মোবারক হাতের কব্জী দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেকের চেয়ে সুন্দর ও ঝকঝকে। সে মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও সে দক্ষ। তার অনেক গুণ রয়েছে। 

মোবারক আলী মা মরিয়ম বেগম জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড় । সে নিজের কাজ গুলো প্রায় সব নিজেই করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তার পড়েও তাকে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । সকলে তার জন্য দোয়া করবেন।

কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, মোবারক প্রতিবন্ধি হলেও যথেষ্ঠ মেধাবী আছে। তার  ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়, উচ্চতর গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানে ‘এ প্লাস’, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, রসায়ন,আইসিটি ও প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে  ‘এ’,  এবং গণিত বিষয়ে ‘এ মাইনাস’, দুটি বিষয়ে বি ও একটি বিষয়ে ডি পেয়েছেন।