কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ১৮ একরের ক্যাম্পাসে শীতের হাতছানি


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৫২ অপরাহ্ন, ১১ই ডিসেম্বর ২০২৩


কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ১৮ একরের ক্যাম্পাসে শীতের হাতছানি
ছবি: জনবাণী

“আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে নাকো’ আর সে-তোমার সুখে পড়ত বাঁধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে, আসবে নাকো” শীতকে ঘিরে অভিশাপ কবিতায় এমনিই লিখেছেন প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। শীতের রিক্ততা কখনও কখনও মানুষের নিঃসঙ্গতা জাগিয়ে তোলে। মনে করিয়ে দেয় অতীতে হারিয়ে অনেকের মুখ। যারা নেই, শীতের রাতে তারা জীবন্ত হয়ে স্মৃতির পটে!শীতের সকাল ঢাকে কুয়াশার চাদরে। দীর্ঘরাতের ক্লান্তি ঝেড়ে জেগে ওঠে প্রকৃতি। পাখি। ঘাসের আলজিহ্বায় জমে থাকে টলোমলো শিশির।


আরও পড়ুন: সাফল্য ধরে রেখেছে ঢাকা কলেজ


ইট-পাথরে ঘেরা যান্ত্রিক শহর ঢাকা তবে  কখন শীত আসে আর কখন চলে যায় তা শহরবাসী খুব একটা টের পান না। টুপটাপ শিশির ঝরার শব্দে মৃদু শীতলতা নিয়ে শীতের আগমন ঘটেছে অনিন্দ্য সুন্দর সবুজ ক্যাম্পাস রাজধানীর বুকচিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ১৮ একরের ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ঢাকা কলেজ  ক্যাম্পাসে।


এই ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ। যেখানে প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়া যায় দ্বিধাহীনভাবে। গাছপালা, পুকুর এবং খেলার মাঠ, ফুলের বাগান, টেনিস গ্রাউন্ড, বকুল চত্বর, বিজয় চত্বরসহ প্রাণ প্রকৃতির অভয়ারণ্যের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ঢাকা কলেজ। এছাড়াও এখানে মাঝেমধ্যে বানরেরও দেখা মেলে।


প্রকৃতিতে শীতের আমেজ মাত্র লাগতে শুরু করেছে ক্যাম্পাসে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে এখন শীতের আমেজ বিরাজ করছে। পাতাঝরা বৃক্ষেও লেগেছে তার ছোঁয়া।


ঢাকা কলেজে শীতের আগমনের জানান দেয় যখন গোধূলীর সোনালি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই হালকা কুয়াশার চাদরে আকড়ে ধরা প্রকৃতির দিকে তাকালে। তখন ক্যাম্পাসের আবাসিক ছাত্ররা ব্যাডমিন্টন খেলা,শর্ট পিচ ক্রিকেট খেলা,ভলিবল খেলায় মেতে ওঠে। আবার অনেককে  শীতের গরম কাপড়ে রাজ্জাক মামার দোকানে চায়ের কাপে চুমুকের সাথে আড্ডা দিতে দেখা যায়। ভোরের প্রাকৃতিক শ্বাস নিতে, শরীর ও মন সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে খেলার মাঠে নিয়মিত ব্যায়াম করতে দেখা যায় অনেককেই।


আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীর রহস্যময় মৃত্যু


শীতের পিঠা নিয়ে সাউথ হলের আবাসিক ছাত্র রিফাত জনবানীকে বলেন,আমার বাসা ঝিনাইদহ। কলেজ বন্ধ না হলে বাসায় যাওয়া সম্ভব হয় না,আর এবার পরীক্ষাও আছে আমাদের। তাই আমরা যারা পরিবারের সবাইকে রেখে এই ক্যাম্পাসে থাকি, মায়ের হাতের শীতের পুলি পিঠা খাওয়ার ভাগ্যটা হয়ে ওঠে না। তাই কলেজের গেটের সামনে মামাদের ১৫ টাকার ভাপা পিঠা খেয়েই শীতের স্বাদ মেটাই। যার মানে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আরকি।


উত্তর ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র আমিনুল ইসলাম হিমু বলেন, প্রতিটি ঋতুই নিজস্ব সৌন্দর্যে মহিমান্বিত। তবে বাংলায় শীতের আগমন যে জনমনে এক মাদকতা তৈরি করে তা বলাই যায়। ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরিয়ে এখন শীতের হিমেল হাওয়া ধীরে ধীরে গ্রাস করছে চারদিক। সন্ধ্যা হওয়ার পর পরই হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন পুরো ক্যাম্পাস , অনুভূত হচ্ছে শীত। দেশের প্রতিটা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে শীতে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম। পাতা ঝরা এই শীতে কোন কোন ক্যাম্পাসে দেখা যায় পরিযায়ী পাখি।

 

তবে প্রতিটা ক্যাম্পাসে বিকেলের হালকা কুয়াশা আর পিঠার দোকান থেকে ভেসে আসা ঘ্রাণ এবং মাটির চুলার ধোঁয়া শীতকে উসকে দেয় দ্রুত আসার জন্য। ষড়ঋতুর এই বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এক শীতে ক্যাম্পাস জীবনের শুরু করে, আবার কোন এক শীতে পড়ালেখা শেষে ফিরে যায় পরবর্তী জীবনের গন্তব্য খুঁজতে। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর শীত আসবে, পরিযায়ী পাখি আসবে, কুয়াশা আসবে, রাস্তার মোড়ে পিঠার দোকান বসবে কিন্তু ক্যাম্পাসে কাটানো শীতের মুহূর্ত একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আর পাওয়া যাবে না। এ জীবনকে সবার উপভোগ্য করে তোলা উচিত।


আরএক্স/