ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে আইএমএফ


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, ১৩ই ডিসেম্বর ২০২৩


ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে আইএমএফ
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের জন্য ৬৮২ মিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮২ মিলিয়ন ডলার ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।


মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে এক বার্তা পাঠিয়ে তিনি জানিয়েছেন, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আইএমএফের বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদন পেয়েছে। এই দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ।


আইএমএফ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় এ ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ অনুমোদনের পরপরই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা রয়েছে।


আরও পড়ুন: দ্বিতীয় কিস্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত আজ


ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত জুনভিত্তিক বিভিন্ন সূচকে শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় আসে। মিশনের নেতৃত্ব দেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।


বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিশনকে জানানো হয়, অন্যান্য শর্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। দেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। মিশনটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের সঙ্গে টানা ১৬ দিন বৈঠক করে।


বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত বছরের জুলাইয়ে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তারের সঙ্গে বৈঠক করে রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল।


সেসময় প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ছাড়ার আগে ৯ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আহ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর আয়োজিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে আইএমএফের ঋণ পেতে যাচ্ছি। আগামী ফেব্রুয়ারি (চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি) মাসে ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে। ২০২৬ সালের মধ্যে সব ঋণ পাওয়া যাবে।


অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা এবং চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদন সম্পন্ন করবে। ঋণটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার বছরমেয়াদি। এ ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। মোট ঋণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৬৮ বিলিয়ন এসডিআর, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।


আরও পড়ুন: ব্যাংক হিসাবে নতুন কোটিপতি ৭ হাজার


তিনি আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফ প্রথম কিস্তি ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর অর্থ ছাড় করবে। বাকি ঋণ প্রতি ছয় মাস ৫১৯ মিলিয় এসডিআর হিসেবে ছয়টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে। বর্তমান এসডিআর ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী ঋণের গড় সুদ হার ২ দশমিক ২০ শতাংশ।


অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণের মোট তিনটি অংশ। এর মধ্যে প্রথম অংশের ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয় এসডিআর’র জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। ঋণের বাকি অংশের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৫ দশমিক ৬৪ এসডিআর’র সুদ হার নির্ধারিত হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে এক শতাংশ যোগ করে। আর বাকি ১ বিলিয়ন এসডিআর’র সুদ হার হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে।


তিনি বলেন, সারাবিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ অস্থিরতা যাতে কোনো ধরনের সংকটে ঘনীভূত না হয় তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম।


এরপর ঋণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে চুড়ান্ত আলোচনা করতে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়েনেট মনসিও সায়েহের। তার সঙ্গে ছিলেন আইএমএফ মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ। পাঁচদিনের সফর শেষে ১৮ জানুয়ারি ঢাকা ছাড়েন আইএমএফ ডিএমডি।


আইএমএফ ডিএমডি বাংলাদেশ সফরের পর প্রথম বোর্ড সভাতেই বাংলাদেশের ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়।


জেবে/এজে