অবসান হলো দীর্ঘ তিন দশকের দুর্ভোগ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:১১ অপরাহ্ন, ১৩ই ডিসেম্বর ২০২৩


অবসান হলো দীর্ঘ তিন দশকের দুর্ভোগ
ছবি: জনবাণী

পাবনার বেড়ার পাম্পিং ষ্টেশন থেকে পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির রাম খারুয়া পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক সম্প্রসারণ পুনর্র্নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। 


জানা যায়,  দীর্ঘ ৩ দশক পর সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছেন বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ। সড়কটি নির্মিত হলে পাবনা  সিরাজগঞ্জ দুই জেলার মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধিতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হবে। এতে বেড়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা, শাহজাদপুর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগের দীর্ঘ তিন দশকের দুর্ভোগের যেমন অবসান হবে তেমনি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। 


আরও পড়ুন: দেশের সর্ব কনিষ্ঠ প্রার্থী সাংবাদিক পারভীন খাতুন


বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৮০ সালে বেড়া পাম্পিং স্টেশনে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কটি পাকা করা হয়। বেড়া পাম্পিং স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির রাম খারুয়া পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার  ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। 


গত বর্ষা মৌসুমে  নদীর প্রবল স্রোতে বাঁধের স্লোপ ভেঙে যাওয়ায় অবৈধভাবে দখল করে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কের ঢালুতে শতাধিক বসতি গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে সড়কটি সম্প্রসারণ ও পুনর্র্নির্মাণ কাজ একেবারে শেষ প্রান্তে। দীর্ঘ  প্রায় তিন দশক সড়কটি সংস্কার না করায় বেড়া পাম্পিং ষ্টেশন থেকে রাম খাড়ুয়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার অংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। 


সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় কৃষকরা কৃষিপণ্য হাট-বাজারে আনা-নেয়া করতে না পারায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। এলাকার অসুস্থ রোগীকে এ সড়ক দিয়ে হাসপাতালে নিতে পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়। এলাকার স্কুল - কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিপর্যস্ত এ সড়কে দীর্ঘ পথ হেঁটে তাঁদের শিক্ষাঙ্গনে ঠিকমতো যেতে পারেনি। 


সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও  জানায়, ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামের মেসার্স সালেহ অ্যান্ড মেসার্স বেলাল কনস্ট্রাকশন (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে সড়ক পুনর্র্নির্মাণ কাজ ৯৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সড়কটি চালু হলে বেড়া থেকে বাইপাসে বাঘাবাড়ির দূরত্ব ৫ কিলোমিটার কমবে। 


আরও পড়ুন: পাবনা-২ আসনে সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী


সেই সাথে সময় ও জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি, বেড়ার প্রাণকেন্দ্র সিঅ্যান্ডবি  মোড় ও বাঘাবাড়ি তিনমাথা মোড়ে অসহনীয় যানজট থেকে রেহাই পাবেন যাত্রীরা। স্থানীয় ইউপি সদস্য তুষার আহমেদ সাচ্চু বলেন, ৩০ বছর ব্যবহারের অনুপযোগী সড়কটি নির্মাণ করায় যাতায়াত, কৃষিপণ্য পরিবহণ ও অসুস্থ মানুষকে খুব দ্রুত হাসপাতালে আনা নেয়ায় ব্যাপক পরির্তন সাধিত হবে। 


আগে কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নেয়া ছিল খুব কষ্টসাধ্য কাজ। তাই কৃষকরা বাড়িতেই বেপারিদের কাছে কম দামে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। এতে তারা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতো, এবং অসুস্থ রোগীকে খাটিয়ায় তুলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হতো। এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাওয়ায় অত্যন্ত আনন্দিত। 


স্থানীয় বাসিন্দা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক প্রকৌশলী আব্দুর রউফ জানান, সড়ক পাকাকরণে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাব গ্রেড, ইমপ্রুভ গ্রেড, সাব বেজ, বেস টাইপ-১, কার্পেটিং, সিল কোট ও ম্যাকানিক্যাল কম্পেকশন ডিজাইন ও এস্টিমেট অনুযায়ী সঠিকভাবে করায় কাজের মান অনেক ভালো হয়েছে। ট্রাকচালক আব্দুর রহমান, সিএনজি চালক লুৎফর, বোরাক চালক খবির উদ্দিন বলেন, বেড়া ও বাঘাবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে অনেক যানজট হয়। 


পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কাজে আমাদের অনেক সময় বাঁচবে, জ্বালানি কম লাগবে আরামে যাতায়াত করতে পারব। স্থানীয় ব্যবসায়ী আকমল হোসেন বলেন, আগে এই সড়কে যাতায়াত করা অনেক কষ্টকর ছিল। আমরা এখন বিভিন্ন যানবাহনে  অনায়াসে মালামাল পরিবহন সহ যাতায়াতে অনেক সহজ হবে। সময় কম লাগবে, পথ কম হবে। বাঘাবাড়ি তিন মাথা ও বেড়া সিঅ্যান্ডবি এলাকায় অনেক যানজট পড়তে হয় এখন সেটা লাঘব হবে। 


বেড়া-বাঘাবাড়ি সড়ক সম্প্রসারণ ও পুনর্র্নির্মাণ তদারকিতে নিয়োজিত বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: সাদেকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান,  আশির দশকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ৩০ বছর পর নতুন করে পুনর্র্নির্মাণ ও মেরামত করা হচ্ছে। ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার এই সড়ক বাঘাবাড়ি থেকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। 


তিনি আরও বলেন, সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর, খোয়া, সিসি ব্লক, বিটুমিনসহ অন্যান্য উপকরণ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটারি থেকে পরীক্ষায় পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত বন্যায় বাঁধের ধসেপড়া স্লোপে সুরক্ষার জন্য নতুন চওড়ায় ৩৫০ মিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ করা হয়েছে।


পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, এডিপিভুক্ত প্রকল্পের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে এটি দীর্ঘ ৩০ বছর জরাজীর্ণ অবস্থায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে এটি পুনর্র্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভারী যানবাহন চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা। 


আরএক্স/