বিনা’র গবেষণায় সাফল্য, বরইয়ের নতুন জাত উদ্ভাবন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বিনা’র গবেষণায় সাফল্য, বরইয়ের নতুন জাত উদ্ভাবন

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) দীর্ঘ পাঁচ বছর গবেষণার পর টক-মিষ্টি স্বাদের নতুন বরইয়ের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাজারে পাওয়া যায় এমন সব বরই শেষ হওয়ার পরেই ছোট বীজ আর মাংসল সমৃদ্ধ এই বরই পেকে যাবে। স্বাদের জন্য বরইটি আকৃষ্ট করবে সবাইকে। এতে বাণিজ্যভাবে চাষ করা ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে।

বরইটির গবেষণা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা এটিকে বিনাবরই-১ নাম নির্ধারণ করে রেখেছেন। এখন জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পেলেই বাণিজ্যিকভাবে চাষের আওতায় আনা হবে। সুমিষ্ট স্বাদের এই জাতটি ছড়িয়ে দিতে নানা পরিকল্পনা করছেন গবেষকরা।

বিনা'র উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. রফিকুল ইসলামের তত্বাবধানে এই জাতটির উদ্ভাবক বিনা'র উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম মিঠু। এছাড়া সহযোগী গবেষক ছিলেন মো. নাজমুল হাসান মেহেদী।

সূত্রে জানা যায়, উদ্যেতত্ব বিভাগের অধিনে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের বরইয়ের নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। গবেষণার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রত্যেন্ত অঞ্চলসহ ভারত থেকে বিভিন্ন কুলের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়। এই জার্মপ্লাজম প্রথমে ইনস্টিটিউটে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জার্মপ্লাজম সেন্টার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কাশিয়ারচর গবেষণা মাঠে লাগানো হয়৷ এরমধ্যে ১০টি কুলের (বরই) জাতকে এ্যাডভান্স লাইন হিসেবে গণ্য করা হয়।

এরমধ্যে ভারতের একটি জাতকে নাভি (দেরীতে ফলন হয়) জাত হিসেবে চিন্হিত করে ২০১৫ সাল থেকে পুরোদমে গবেষণার পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে সাফল্য আসে। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে ২০২০ সালে প্রথম এক বছর বয়সী একটি গাছ থেকে ২ কেজি ও দুই বছর বয়সী গত বছরের ২৮ এপ্রিল একই গাছ থেকে ৪০ কেজি বরই উৎপাদন হয়েছে।

সরেজমিনে বিনা'র ভেতরে বঙ্গবন্ধু জার্মপ্লাজম সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, উদ্ভাবিত নতুন জাতটিতে থরে থরে ছোট-বড় অসংখ্য বরই ঝুলে আছে। সবগুলোই কাঁচা। গাছগুলো মাঝারি আকৃতির। চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়া ডালপালা মাটিতে নুয়ে পড়ছে। কিছুকিছু বরই একেবারেই ছোট। দেখে বুঝা যায়, বাজারে উঠা বরইগুলো শেষ হলেই পুরোদমে এ বরই পাকবে। তখনই এটির কদর বাড়বে সর্বত্র।

কথা হয় জাতটির উদ্ভাবক বিনা'র উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম মিঠু'র সাথে।

তিনি দৈনিক জনবাণীকে বলেন, বর্তমানে বাজারে দেশীয় কুলের পাশাপাশি বলসুন্দরী, কাশ্মিরি, ভারতকুল, বাউকুল, বারীকুলসহ বিভিন্ন জাতের বরই পাওয়া যায়। এসব কুল (বরই) শেষ হওয়ার পরও অনেকে সুমিষ্ট জাতের বরই খেতে চায়৷ এসব দিক চিন্তা করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করি। এজন্য বাংলাদেশের প্রত্যেন্ত অঞ্চলসহ ভারত থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ শুরু হয়। ভারতের জাতটি গবেষণায় সাফল্য আসে। এটি হাইব্রিড না।

এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, টক-মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি বীজ খুবই ছোট। একটি বীজের ওজন গড়ে ২ গ্রাম। যা অন্য জাতের চেয়ে খুব ছোট। একটি ফলের ওজন ৭৪ গ্রাম। বড় হওয়ার পর পরই পাকার সময় হলদে ও সোনালী রঙ্গ ধারণ করে। প্রতিদিন মেয়েদের ৭৫ মিলিগ্রাম ও ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন সি শরীরে জমা না থাকার কারনে প্রতিদিন খেতে হয়। উদ্ভাবিত নতুন জাতের এই বরইয়ের প্রতি গ্রামে ৫৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। গাছ লাগানোর পথম বছরে ২ কেজি ও পরের বছর ৪০ কেজিসহ সময়ের ব্যবধানে ফলন বৃদ্ধি পেয়ে একপর্যায়ে ৩০০ কেজি পর্যন্ত ফলন উৎপাদন করা সম্ভব। দেশীয় গাছগুলো গতবছর বেঁচে থাকে, এটিও ঠিক তত বছরই বেঁচে থাকবে।

তিনি বলেন, বাজারে আমরা যে বরইগুলো সাধারণত এখন পাই সেগুলো মার্চ-এপ্রিলেই শেষ হয়ে যায়। নতুন জাতটি জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে লাগানো হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-ফুল আসবে এবং মার্চ-এপ্রিলে ফল তোলা শুরু হবে। আর যদি মার্চ-এপ্রিলে লাগানো হয়, তাহলে এপ্রিল-মে মাসে ফল তোলা যাবে। তিন-চারটি ধাপে এ বরইটা গাছে ধরে। যেমন- কোনোটা একটু বড়, কোনোটা মাঝারি, কোনোটা ছোট। বড় বরইগুলো তোলার পর ছোটগুলোও বড় হতে থাকবে। এভাবে তিনমাস পর্যন্ত বারই হারভেস্ট করা যায়।

চাষাবাদ সম্পর্কে জাতটির উদ্ভাবক ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম মিঠু আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের সব জায়গায় চাষ করা যাবে। তিন থেকে চার মিটার দূরত্ব রেখে চারা লাগানো যাবে। এ জাতের ফলে তেমন রোগবালাই হয়না। তবুও ফুল আসার আগ মূহুর্তে কীটনাশক ও ছাত্রাকনাশক একবার স্প্রে করলে ভালো। এছাড়া ফুল হওয়ার পর হরমোন জাতীয় প্লানোপিক্স, প্লানোটন বা প্রোরা জাতীয় হরমোন করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. রফিকুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, বরইয়ের স্বাদটাকে পুরো দেশি ভ্যারাইটি। খেতে বেশ সুস্বাদু। যারা খেয়েছে সবাই পছন্দ করেছে।

তিনি বলেন, জাতটির নাম দিয়েছি বিনাবরই-১। আগামী মাসের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এরপর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর স্বাদ পেয়ে আকৃষ্ট হবে ক্রেতারা, লাভবান হবে চাষিরা।

এসএ/