বিআইএমে স্বৈরাচার তানভীরের কালথাবা


Janobani

মো. বাকি বিল্লাহ

প্রকাশ: ০৩:৫২ অপরাহ্ন, ২৮শে জুলাই ২০২৫


বিআইএমে স্বৈরাচার তানভীরের কালথাবা
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম) এর প্রকল্প পরিচালক স্বৈরাচার তানভীর হোসাইনের কালোথাবায় আতঙ্কিত কর্মকর্তরা। ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ও চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এর আগে প্রেষণে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট-কে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন এই তানভীর হোসাইন। যদিও এই প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ হস্তান্তর করতে পারে নাই প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন। তানভীর হোসাইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হলেও এখানো বহালতবিয়তে রয়েছেন এই কর্মকর্তা।


অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় প্রতিনিয়ত প্রতিবেদককে বিভিন্নভাবে হুমকি ও হেনস্থা করা চেষ্টা করছেন তিনি। এমনকি সংবাদ প্রকাশ না করতে বিভিন্ন প্রভাবশালীমহলদের চাপে আতঙ্কিত এই প্রতিবেদক। এ ছাড়াও তিনি পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনাদের জানা নেই। আমি বিশেষ বাহিনি দিয়ে আপনাকে তুলে আনতে পারি বলে প্রতিবেদককে হুমকি দিচ্ছেন। 


নাম প্রকাশে আনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, স্যার বিআইএমে ঘোষনা দিয়েছেন ”আমি কি টাঙ্গাইল থেকে সো... ছাড়া এসেছি”। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে সাংবাদিক রুবেল হোসেন জানে না। কি করবো ওর জানা নেই। 


এদিকে তানভীর হোসাইনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর বিআইএম তানভীর হোসাইনকে পুরস্কার হিসেবে চট্টগ্রামের উপ পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বৈরাচার তানভীর হোসাইন বিআইএমে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক শিক্ষার্থীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেন যা সে সময় অনেক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়।


বিআইএমকে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম, অবৈধ নিয়োগ, আত্মসাৎ এবং অবৈধ সম্পদ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে গত ১৭ জুলাই দৈনিক জনবাণীতে ডাকযোগে তানভীর হোসাইন সাক্ষরিত একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে বলেন, সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি প্রকাশের কারণে আমার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রতিবাদলিপি প্রকাশ করতে অনুরোধ করছি।   


তানভীরের দাবি, তিনি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপত্র অনুসারে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যে চারটি বহুতল ভবনের মালিকানা তার ওপর আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো সমিতির যৌথ প্রকল্প। তিনি আরও বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই এবং ভবিষ্যতেও থাকার ইচ্ছা নেই। তবে সূত্র দাবি করছে তিনি আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এই প্রকল্পের দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অস্থায়ী বৈঠকখানা ছিলো প্রকল্প অফিসে। এখানে বসে টেন্ডারসহ নানা অবৈধ লেনদেন করতেন সাদ্দাম। সেই সুবাদে প্রকল্প পরিচালক তানভীর কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। এমনকি সংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলেও নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।    


তানভীর দাবি করেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মাত্র ৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে ৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় যাদের অনেকেই ছিল না কোনো অনুমোদিত পদের অন্তর্ভুক্ত। এই নিয়োগগুলোতে কোনো লিখিত পরীক্ষা বা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও ছিল না। নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করলেও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি দলের এক নেতার ছত্রছায়ায় ছিলেন। ৫ আগস্ট সংগঠিত হওয়ার এক বিশেষ দলের কর্মী পরিচয়ে বিআইএম কার্যালয়ে ৪০ কেজি মিষ্টি বিতরণ করেন তিনি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর মেট্রো গলিতে আওয়ামী লীগের এক নেতার সাথে বৈঠকের সত্যতা মিলেছে।


প্রকল্পের আওতায় বিআইএম’র বাউন্ডারি ওয়াল পূর্ণরায় নির্মাণের পরিবর্তে কেবল পলেস্তরা করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এ কাজটি করে ‘সিকো ইন্টারন্যাশনাল’ নামের প্রতিষ্ঠান যার ইজিপি আইডি ৮৮৫৫৪৬। 


এছাড়া বিআইএম ভবনের অভ্যন্তরের রাস্তা নির্মাণ করে তানভীর হোসাইনের ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সরদার ট্রেডার্স’, যার ইজিপি আইডি ৮৮৩৬৯৭। এই প্রকল্পে টেন্ডার, কেনাকাটা ও নিয়োগে যেভাবে সিন্ডিকেট করে অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে, তা নিয়ে বিআইএম অভ্যন্তরে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।


আরএক্স/