স্বৈরাচার তানভীরের মুখে সাধুর বাণী


Janobani

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, ১৭ই জুলাই ২০২৫


স্বৈরাচার তানভীরের মুখে সাধুর বাণী
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া ।

অবৈধ উপার্জনে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে গলাগাছ হওয়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম)–এর প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইনের মুখে সাধুর বাণী ঝরাচ্ছেন। অথচ সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশে দিচ্ছেন মামলার হুমকি।


বিআইএমকে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম, অবৈধ নিয়োগ, আত্মসাৎ এবং সম্পদ গোপনের অভিযোগে গত ১৪ জুলাই দৈনিক জনবাণীতে সচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তানভীর হোসাইন গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে দৈনিক জনবাণীর অফিসিয়াল মেইলে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে বলেন, সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি প্রকাশের কারণে আমার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনুরোধ করছি প্রতিবাদলিপি ছাপাতে। অন্যথায় আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।


তানভীরের দাবি, তিনি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপত্র অনুসারে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যে চারটি বহুতল ভবনের মালিকানা তার ওপর আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো সমিতির যৌথ প্রকল্প। তিনি আরও বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই এবং ভবিষ্যতেও থাকার ইচ্ছা নেই।


তবে জনবাণীর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আদাবরে দুটি ছয়তলা ভবন, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে আটতলা ভবন নির্মাণ এবং বনানীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হন তানভীর। দক্ষিণ খান ও সাভারে রয়েছে আরও দুটি প্লট, যা নামজারি প্রক্রিয়াধীন। এই বিপুল সম্পদের উৎস এবং অর্থের উৎস নিয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।


তিনি দাবি করেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মাত্র ৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে ৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় যাদের অনেকেই ছিল না কোনো অনুমোদিত পদের অন্তর্ভুক্ত। এই নিয়োগগুলোতে কোনো লিখিত পরীক্ষা বা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও ছিল না।


নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করলেও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি দলের এক নেতার ছত্রছায়ায় ছিলেন। ৫ আগস্ট সংগঠিত হওয়ার এক বিশেষ দলের কর্মী পরিচয়ে বিআইএম কার্যালয়ে ৪০ কেজি মিষ্টি বিতরণ করেন তিনি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর মেট্রো গলিতে আওয়ামী লীগের এক নেতার সাথে বৈঠকেরও তথ্য মিলেছে।


প্রকল্পের আওতায় বিআইএম’র বাউন্ডারি ওয়াল পূর্ণরায় নির্মাণের পরিবর্তে কেবল পলেস্তরা করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এ কাজটি করে ‘সিকো ইন্টারন্যাশনাল’ নামের প্রতিষ্ঠান যার ইজিপি আইডি ৮৮৫৫৪৬। এছাড়া বিআইএম ভবনের অভ্যন্তরের রাস্তা নির্মাণ করে তানভীর হোসাইনের ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সরদার ট্রেডার্স’, যার ইজিপি আইডি ৮৮৩৬৯৭। এই প্রকল্পে টেন্ডার, কেনাকাটা ও নিয়োগে যেভাবে সিন্ডিকেট করে অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে, তা নিয়ে বিআইএম অভ্যন্তরে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।


২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো বিআইএমের কাছে প্রকল্পের দায়িত্ব ও সম্পদ হস্তান্তর হয়নি। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছেন যাতে কিছু অনিয়ম ও অর্থনৈতিক লেনদেন গোপন রাখা যায়। তানভীর হোসাইন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাঁধে দায় চাপিয়ে নিজে দায়মুক্ত থাকার চেষ্টা করছেন।


প্রতিবেদক রুবেল হোসেন বলেন, আমাদের হাতে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সব তথ্য, নথি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এবং মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র রয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে আমি জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরেছি। অথচ সত্য প্রকাশেই এখন হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।


জনমনে প্রশ্নএতসব প্রমাণের পরও কেন তানভীর হোসাইন এখনো সরকারি পদে বহাল আছেন? কেনই বা তদন্ত হচ্ছে না কোটি টাকার সম্পদের উৎস ও প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে। এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় দেশের জনগণ।


আরএক্স/