চাঁদা নিয়ে বিরোধ,

পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:৩৫ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৫


পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে
সংগৃহীত ছবি।

রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ নৃশংসতায় ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার পেছনে ছিল পরিকল্পিত চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের ষড়যন্ত্র। মূলহোতা মাহমুদুল হাসান মহিন ও তার সহযোগীরা ‘মব লিঞ্চিং’-এর নাটক সাজিয়ে এই হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহের ওপর লাফিয়ে উল্লাস করে তারা আতঙ্ক ছড়ান।


পুলিশ জানায়, গত ৭ জুলাই বিকেলে চকবাজারের রজনী বোস লেন থেকে সোহাগকে টেনে-হিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে আনা হয়। এরপর ১৯ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল নির্মমভাবে তাকে ইট ও কনক্রিট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।


চাঁদা না দেওয়ায় খুনের পরিকল্পনা

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নানা কারণে মহিন প্রায়ই সোহাগের কাছে চাঁদা চাইতেন। সোহাগ নিয়মিতই তা দিতেন। তবে সম্প্রতি চাঁদার পরিমাণ ‘ফিক্সড’ করতে চাওয়ায় দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। একপর্যায়ে মহিন ও টিটন গাজী সিদ্ধান্ত নেন সোহাগকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার।


মহিন পুলিশকে জানান, সোহাগ ছিলেন একরোখা স্বভাবের। অনেকেই তাকে পছন্দ করতেন না। এই সুযোগেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমে দোকানে হত্যার পরিকল্পনা থাকলেও পরে জনতার মধ্যে ঘটনার ধোঁয়াশা তৈরি করতে তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


প্রমাণ নষ্টে ‘মব’ নাটক

পুলিশ জানায়, আসামিরা বিভিন্ন মব লিঞ্চিং-এর ঘটনা দেখে উৎসাহিত হন এবং এটিকে জনগণের হাতে আইন তুলে নেওয়ার ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে চান। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোহাগকে মিটফোর্ডের সামনে এনে শতাধিক মানুষের সামনে হত্যা করা হয়। ‘ও বাঁচলে আমরা শেষ’ বলে মহিন সবাইকে উসকে দেন।


গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন, মো. টিটন গাজী ও তারেক রহমান রবিনসহ কয়েকজন রিমান্ডে রয়েছেন। রবিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অস্ত্র সংগ্রহ ও হত্যায় অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছেন। তদন্তে আরও প্রভাবশালী নাম আসতে পারে বলেও ধারণা পুলিশের।


ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক, পুলিশের আশ্বাস

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মহিনের মতো আরও কয়েকটি চাঁদাবাজ গ্রুপ এলাকায় সক্রিয়। সোহাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তারা আতঙ্কে আছেন। তবে পুলিশ আশ্বস্ত করেছে, সবার নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


আনসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন

ঘটনার সময় আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেননি বলে অভিযোগ উঠলেও আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক জানিয়েছেন, হাসপাতালের বাইরে তাদের দায়িত্ব ছিল না। তাই দায়ী করার সুযোগ নেই।


ডিএমপির কর্মকর্তারা জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে ডিবি, থানা পুলিশ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। অপরাধীদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।


আরএক্স/