খিলগাঁওয়ে ডিপিডিসির প্রকৌশলী জুবায়ের ফাইল বাণিজ্যে কোটিপতি


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০২:৫৫ অপরাহ্ন, ৩রা জুলাই ২০২৫


খিলগাঁওয়ে ডিপিডিসির প্রকৌশলী জুবায়ের ফাইল বাণিজ্যে কোটিপতি
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# মগবাজারে আলিশান ফ্ল্যাট, ক্ষমতাধর নেতার ছত্রছায়া

# ঘুষ, জিম্মি ব্যবসা আর ভয়ভীতির রাজত্ব

# “দুর্নীতিবাজরা সব সময় ক্ষমতাধর থাকেন” 

   -ড. ইকবাল মাহমুদ সাবেক চেয়ারম্যান, দুদক 

“গ্রাহক হয়রানি করাও দুর্নীতি” 

   - ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি 

# সাবেক এমপির সঙ্গে সখ্যতা, ঘুষ না দিলে ফাইল 

   আটকে রাখেন’ গ্রাহকদের জবানবন্দি


ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) খিলগাঁও ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুবায়ের রহমান যেন আর দশজন কর্মচারী নন তিনি একজন ‘ফাইল বাণিজ্যের জাদুকর’। মগবাজারে আলিশান ফ্ল্যাটের মালিক, কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ আর ক্ষমতার ছায়ায় বেপরোয়া এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরিকে পুজি করে ঘুষের নেশায় মেতেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দেওয়া অভিযোগেই উঠে এসেছে তার এসব কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ। অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরির ‘লোক’ হিসেবে পরিচিত জুবায়ের রহমান বহু বছর ধরে খিলগাঁও ও বাসাবো এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক সুরক্ষা ও উচ্চ পর্যায়ের যোগসূত্রের কারণে তাকে কেউ বদলি করতে সাহস পান না, এমনকি তার অধীনস্থ সহকর্মীরাও মুখ খুলতে ভয় পান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপিডিসির এক প্রকৌশলী জানান, “তার বিরুদ্ধে কথা বলে চাকরি যাবে এই ভয়েই সবাই চুপ। এমনকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও জুবায়ের এখনো একইরকম ক্ষমতাধর।” ফাইল চলাচল মানেই ঘুষ এই নিয়ম যেন চালু করেছেন জুবায়ের। 


অভিযোগ রয়েছে, ফাইল দ্রুত পাশ করাতে হলে ঘুষ দিতে হয়। একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, “একজন নির্বাহী প্রকৌশলী সৎ ছিলেন বলে বাসাবোতে জুবায়ের সুবিধা করতে পারেননি। পরে মোটা অংকের টাকা ঘুষ লেনদেন করে খিলগাঁওয়ে বদলি হয়ে আবার সক্রিয় হন।”


জুবায়ের রহমান এইচটি (হাই টেনশন) লাইনকে এলটি (লো টেনশন) লাইন বানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে গ্রাহক হয়রানি করেন এমন অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগকারীদের ভাষ্য, নির্দিষ্ট একটি সাব-কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে সাবস্টেশন ব্যবসা চালান জুবায়ের। কেউ তার নির্ধারিত কোম্পানিকে বেছে না নিলে নানা জটিলতায় পড়তে হয় গ্রাহকদের। সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরি গ্রেফতারের সময় হাজতে গিয়ে দেখা করেছেন জুবায়ের রহমান। তাকে হাজদ খানায় খাবার সরবরাহ করতেন বলেও এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এমন ঘনিষ্ঠতার জোরেই হয়তো জুবায়ের একাধারে অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণ এবং ঊর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে চলেছেন।


এ ব্যাপারে জুবায়ের রহমান বলেন, সরকার যে টাকা বেতন দেন তা দিয়ে চলতে পারি না। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই,  এমকি কোনো ফ্ল্যাট ও  সম্পত্তির মালিক নই। যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন তা মোটেও সঠিক নন। 


এ দিকে জুবায়ের রহমানের পক্ষ হয়ে এক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “ জুবায়ের বিরুদ্ধে নিউজ করলে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবো।”


এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন,“দুর্নীতিবাজরা সব সময় ক্ষমতাধর থাকেন। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সরকারি কর্মকর্তারা বাড়তি সুবিধা নিলে সেটা দুর্নীতি। গ্রাহক হয়রানিও দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। তাই এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।”


ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, খিলগাঁও ডিভিশনের এই ‘ছায়া প্রকৌশলী’ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দুর্নীতির নীরব শিকড় যেমন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়, তেমনি এক জুবায়েরের মতো কর্মকর্তার অপকর্ম গোটা ডিপিডিসিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এবার জেগে উঠবে। 


আরএক্স/