সাবেক যুব সচিব মেসবাহ উদ্দিনের আর্শিবাদে মাসুদের টেন্ডার সিন্ডিকেট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৫ অপরাহ্ন, ১লা জুলাই ২০২৫

# সাবেক দুই সচিবের ছায়ায় কোটি টাকার আইটি সাম্রাজ্য
# মেসবাহ উদ্দিন আমলা থেকে ঠিকাদার
# নগদহাট: আরেক কোম্পানিতে নতুন চক্র
# অপেশাদার প্রতিষ্ঠান, অথচ সর্বোচ্চ স্কোর
# টেন্ডারে সচ্ছতা থাকতে হবে
- ড. ইফতেখারুজ্জামান নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
যেখানে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার কথা বলা হয়, সেখানে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন গল্প। মাসুদ আলমের ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের পেছনে যে শক্তি কাজ করেছে, তা শুধু রাজনৈতিক নয় প্রভাবশালী আমলাতান্ত্রিক চক্রও ছিল এই সিন্ডিকেটের অংশ।
তথ্য বলছে, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেসবাহ উদ্দিন ছিলেন এই চক্রের মূল কুশীলব। তিনি সচিব থাকাকালে ৪৬.৭ কোটি টাকার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের নকশা তৈরি করেন। ঠিক এক বছর পর তাঁর ঘনিষ্ঠ মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান সে প্রকল্প পায়। এরপর অবসরে গিয়ে মেসবাহ নিজেই সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও শেয়ারহোল্ডার হন। যা ‘রিভলভিং ডোর করাপশন’এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া মেসবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অতীতে ‘জুলাই গণহত্যা’ মামলায় সম্পৃক্ততা এবং বিচারবিভাগীয় ক্যুর চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। ফলে মাসুদকে কাজে সহায়তা করা এবং ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়া শুধু নৈতিক নয়, আইনগত দিক থেকেও গুরুতর অপরাধ।
মাসুদের আরেক কোম্পানি নগদহাট বাংলাদেশ লিমিটেড। এর সঙ্গে জড়িত আছেন সাবেক সচিব আখতার হোসেনের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার। কোম্পানি রেজিস্ট্রারে দেখা যায়, এ কোম্পানির মালিকানায় যুক্ত ছিলেন আরেক সাবেক সচিব মো. নাসির উদ্দিন। এই পুরো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাসুদের প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি সরকারি কাজ পাচ্ছে টেন্ডার শর্ত না মেনে, রাজনৈতিক আশীর্বাদে এবং প্রশাসনিক ছত্রছায়ায়। ২৯৭ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্পে অংশ নেয় মোট ২০টি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অদ্ভুতভাবে বাছাই হয় মাসুদের প্রতিষ্ঠান। কেননা, কারিগরি ও আর্থিক স্কোরে সবচেয়ে এগিয়ে রাখা হয় তাদেরই যাদের টেন্ডার শর্তই পূরণ হয়নি।
তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ আইটি ইনস্টিটিউট, এসইও এক্সপেইট, নিউ হরাইজনস সিএলসি। কিন্তু কী কারণে তাদের বাদ দেওয়া হলো, তার স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে নতুন বাংলাদেশে পুরনো সিন্ডিকেটই এখন রূপ বদলে ফিরছে। তারা শুধু প্রকল্প নয়, নিয়োগ, পোস্টিং, মিডিয়া ও পুরস্কারের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখছে।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টেন্ডারে সচ্ছতা থাকতে হবে। না হলে প্রকৃত ঠিকাদাররা বাদ পরে যাবে। সেই ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থাকে।
আরএক্স/