হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট বিআইএমের প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন


Janobani

মো. রুবেল হোসেন

প্রকাশ: ১২:০৬ অপরাহ্ন, ২৮শে মে ২০২৫


হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট বিআইএমের প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন
ছবি; পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# প্রকল্প কার্যালয় ছিলো আ.লীগের দলীয় অফিস, ভোল পাল্টিয়ে ক্ষমতাধর

# ৫৪ কোটি টাকার একক কাজ দুর্নীতির টাকা খুজঁতে ২৬ খণ্ডে ভাগ 

# লুটপাটে সম্পদের পাহাড়, পিডি’র বিরুদ্ধে মুখ খুললে বদলি

# দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

- ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি 

# আগামী পর্বে প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইনের নারী কেলেংকারী ঘটনা


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) তানভীর হোসাইন। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টকে শক্তিশালীকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কিন্তু প্রকল্পের শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইনের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের শুরুতে মো. মাহাবুব উল আলম প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকলেও আদতে নাটাই ছিল তানভীর হোসাইনের হাতে। তিনি সে সময় থেকেই সকল অনিয়ম করেছেন দেখভাল করতেন। শেখ পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতো সাহস পেতো না। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, হাসিনা পালালেও দাপট কমেনি এই প্রকল্প কর্মকর্তার। এ বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। 


অভিযোগ সূত্র বলছে, প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন ৫৪ কোটি টাকার একক কাজ ২৬ খণ্ডে ভাগ করেছেন। একক কাজ ছোট ছোট প্যাকেজে ভাগ করে দরপত্র অনুমোদনসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন প্রকল্প পরিচালক নিজেই। একক কাজ ভেঙে ২৬টি প্যাকেজে ভাগ করার ক্ষেত্রে তিনি পদে পদে সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) লঙ্ঘন করেছেন। ২০১৮ সালের জুনে শুরু হওয়া প্রকল্পে তানভীর হোসাইন ছিলেন উপ প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে এরপর ২০২৩ সালে মো. মাহাবুব উল আলম চাকরি থেকে অবসরে গেলে সাবেক কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সুপারিশে প্রকল্প পরিচালকের চেয়ারে বসেন তানভীর হোসাইন।


প্রকল্প কার্যালয় ছিলো আ.লীগের দলীয় অফিস: আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় ছিল আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও যুব লীগের নেতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকত সরকারি এই দপ্তর। প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন পরিচয় দিতেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। যদিও জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টিয়ে তিনি এখন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবির নেতা পরিচয় দিচ্ছেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল হওয়ার কারণে সাবেক কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ছিল বিশেষ সখ্যতা। ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে অর্থ দিয়েছেন প্রকল্প এই পরিচালক। 


লুটপাটে সম্পদের পাহাড়: সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. মাহাবুব উল আলমের সরলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তানভীর হোসাইন। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকর সঙ্গেও ছিলো তার পারিবারিক সম্পর্ক। 


তার বিরুদ্ধে কথা বললেই বদলি: তানভীর হোসাইনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই মামলা-হামলা ভয় দেখান। এমকি টাঙ্গাইলের সাবেক সাংসদ ছোট মনির মাধ্যমে বিআইএমের কর্মকর্তাদের হুমকি দিতেন এই প্রকল্প পরিচালক। আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন। অবৈধ প্রভাবের কারণে আওয়ামী সরকারের আমলে অনেক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ঢাকার বাহিরে বদলির করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 


ভোল পাল্টিয়ে ক্ষমতাধর: কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি আবার কখনো জামায়াতে ইসলামীর নাম ব্যবহার করে সুবিধা নিয়ে কালো টাকার পাহাড় গড়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি রাজধানীর মিরপুরে ৩০৭/১/বি/২ পীরেরবাগে রয়েছে একটি আলিশান ফ্ল্যাট, আদাবরের বাসা-১৭-১৮, রোড-১৭, কমফোর্ট হাউজিং ড্রিম টাওয়ার, বাসা-১৬, রোড-১৬, সুনিবিড় হাউজিং রিলায়েন্স নিবাস, বাসা-১০৫২, রোড-১৭, ব্লক-সি, বায়তুল আমান হাউজিং গার্ডেন টাওয়ার, বাসা নং-১৫০, রোড-১৭, ব্লক-সি, বায়তুল আমান হাউজিং লেক ভিউ নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন।


এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইনের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুর্দেবার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলেনি। 


এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি অনৈতিক, ক্ষমতার অপব্যবহারনির্ভর দুর্নীতি। কেউ বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।


আরএক্স/