উপদেষ্টা বানানোর ঠিকাদার কৃষকলীগ নেতা সবুজ


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০১:০৪ পিএম, ২৮শে আগস্ট ২০২৫


উপদেষ্টা বানানোর ঠিকাদার কৃষকলীগ নেতা সবুজ
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যেন তিনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন উপদেষ্টা বনোনোর। অভিযোগে বলা হয়, তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদ পাওয়ার প্রলোভনে একজন সমন্বয়ককের ভাই পরিচয়ে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেন সবুজ। পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মোহাম্মদ আজিজ শিকদারের ছেলে। উজিরপুরের হাকিম সেরনিয়াবাতের জামাতা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কামাল হোসেন সবুজের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ডিপ টিউবয়েল দেওয়ার নাম করে ১’শ ব্যক্তির কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া তিনি উজিরপুর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নিয়াগ বানিজ্য, মাদ্রাসার নতুন ভবনের ঠিকাদারের কাছ থেকে ২৫ লাখ চাঁদা আদায় করেছি। তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজীসহ সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।  

 

আনোয়ার খান নামে এক ভুক্তভুগি বলেন, আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি এখন ডিপটিউবয়েল পাই নাই। এভাবে আরো অনেকের কাজ থেকে টাকা আত্মসাত করেছেন। 


অভিযোগ বলছে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বানানোর কথা বলে ১০ লাখ টাকা নগদ এবং চারটি চেকের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা নিয়েছেন উজিরপুর কৃষকলীগ নেতা কামাল হোসেন সবুজ। এই ঘটনা এ বছরের জানুয়ারিতে সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই অভিযোগ দেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। অভিযোগে বলা হয়, অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা, যিনি এনআইসিআরএইচ-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদ পাওয়ার আশায় উজিরপুর কৃষকলীগ নেতা কামাল হোসেন সবুজকে এক সমন্বয়কারীর ভাই পরিচয়ে নাম করে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়েছেন।  সবুজ নিজেদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যুমনা থেকে আগত হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।


অভিযোগ অনুযায়ী, ডা. মোস্তফা ১০ লাখ টাকা নগদ এবং ২০০ কোটি টাকার চারটি চেক প্রদান করেছেন। এই লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জড়িত, যিনি নিজেকে সমন্বয়ক আরেফিনের ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। আরিফুল ইসলাম ও কৃষকলীগ নেতা কামাল হোসেন সবুজ সরাসরি ডা. মোস্তফার চেম্বার থেকে চেকগুলো সংগ্রহ করেন। যদিও আরেফিন সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না, তিনি ফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে এই ডিল নিশ্চিত করেছেন বলে জানা গেছে। তদন্তের অগ্রগতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, ডা. শেখ গোলাম মোস্তফার ব্যাংক হিসাব, আর্থিক লেনদেন এবং সমন্বয়ক গ্রুপের সঙ্গে তার যোগাযোগের রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারী দল চেকগুলোর সত্যতা এবং লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য যাচাই করছে।


দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির একটি গুরুতর ঘটনা। আমরা এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও কঠোর তদন্ত পরিচালনা করছি।”


এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এই ঘটনাকে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির একটি চরম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।


একজন নাগরিক বলেন, ‘ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসার জন্য যে প্রতিষ্ঠানের উপর আমরা নির্ভর করি, সেখানে এ ধরনের দুর্নীতি কল্পনাতীত।’


আরেক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, অস্ত্রধারী কৃষকলীগ নেতা কামাল হোসেন সবুজসহ সমন্বয়কদের জড়িত থাকার বিষয়টি এই ঘটনাকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি।


তবে, একজন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দুদকের তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


এদিকে, স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।


দুদক এবং টিআইবির প্রতিক্রিয়া: দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতিতে যারা জড়িয়ে পড়েন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তারা যাতে আরো অপরাধ না করতে পারে, তার জন্য যথাযথ শাস্তি ও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।” তিনি আরও যোগ করেন যে, এ ধরনের দুর্নীতি মোকাবেলা করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।


টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামা বলেন, এই ধরনের দুর্নীতি রোধে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, আর্থিক লেনদেনের কঠোর নজরদারি এবং প্রশাসনিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দুদকের তদন্তের ফলাফল দ্রুত প্রকাশ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অস্ত্রধারী সমন্বয়কদের জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। 


এই ঘটনা জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সুনামের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে এবং দেশের স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার প্রশ্ন তুলছে। তদন্তের ফলাফল এবং সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এই বিষয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করবে।


আরএক্স/