যৌন নির্যাতনের আরেক নাম বিমান বাংলাদেশ


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬:১৪ অপরাহ্ন, ১১ই জুলাই ২০২৫


যৌন নির্যাতনের আরেক নাম বিমান বাংলাদেশ
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# দুর্নীতি ও মানব পাচারের চিত্র ফাঁস করল অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ

# মৃত্যুই যেন নিরাপদ মনে হয়: ভুক্তভোগী নারী

# বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এ আরও ৫০ জন নতুন নারী ক্রু সদস্য যোগ দিতে যাচ্ছেন।


বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরে চলমান ভয়ানক অনিয়ম, যৌন নির্যাতন, মাদক প্রয়োগ, চোরাচালান এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বিস্ফোরক এক ভিডিও প্রকাশ করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক হ্যাকার সংগঠন “অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ”। ৫২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে এমন সব তথ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক যৌন নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেই নয়, বরং পুরো সিস্টেমের নৈতিকতার দিকেও গভীর প্রশ্ন তোলে। এই ভিডিওটি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরসহ নির্ভরযোগ্য কয়েকটি মাধ্যমে আগেই পৌঁছেছে এবং প্রাথমিকভাবে ভিডিওতে উল্লিখিত অভিযোগের সাথে বাস্তব ঘটনার মিল পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।


অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ দাবি করেছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিওর অনেক অংশ সম্পাদনা করে প্রকাশ করছে কোনো মুখ, কোনো নাম বা শনাক্তযোগ্য তথ্য দেখানো হয়নি। তারা বলছে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভিকটিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে যেসব নারী ক্রু সদস্য এখনো সেবাদানে নিয়োজিত আছেন বা নতুনভাবে যোগ দিতে যাচ্ছেন।


সংগঠনটি জানায়, এমন এক পর্যায়ের ভয় তাদের কাছে ধরা দিয়েছে, যা কেবল চাকরি হারানোর নয় বরং জীবন হারানোর। তারা বলেছে, “এটা এমন এক ধরনের ভয়, যা মানুষকে মনে করায় মৃত্যুই হয়তো কথা বলার চেয়ে নিরাপদ।”


তারা আরও দাবি করেছে, একাধিক নারী কর্মীকে পাইলট ও কর্মকর্তা দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, মাদক প্রয়োগের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে, এমনকি পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে রয়েছে কল রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজ, অভ্যন্তরীণ মেসেজিং, ব্যাংক লেনদেন, হোটেল বুকিং এবং ফ্লাইট সংক্রান্ত গোপন নথি।


বিশেষ একটি ঘটনা উল্লেখ করে তারা জানিয়েছে, এক নারী ক্রু সদস্য ষধুড়াবৎ-এর সময় এক ক্যাপ্টেন কর্তৃক জোরপূর্বক তার রুমে নিয়ে যাওয়ার শিকার হন। ভিকটিম নিজেই অনুরোধ করেছেন এটি প্রকাশ না করতে, কারণ এতে তিনি সহজেই শনাক্ত হয়ে যেতে পারেন এবং হয়রানির মুখে পড়তে পারেন। সংগঠনটি সেই অনুরোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঘটনা গোপন রেখেছে।


অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথের ভাষায়, তারা কোনো শো অথবা নাটক তৈরি করছে না। তারা শুধুই একটি বার্তা দিতে চায় এই অন্যায় থামবে না, যতক্ষণ না সমাজ নিজেই দাঁড়িয়ে বলে, ‘এবার আর না।’


ভিডিওতে সরাসরি নাম প্রকাশ করা না হলেও সংগঠনটি বলেছে, অপরাধীদের একটি অভ্যন্তরীণ তালিকা তারা তৈরি করে রেখেছে এবং প্রয়োজনে নির্মমভাবে, আগাম কোনো সতর্কতা ছাড়াই সেই নামগুলো প্রকাশ করবে।


অন্যদিকে, ভিডিও প্রকাশের আগেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে এটি কেবল “সাইবার নিরাপত্তা” রক্ষার্থে, অনেকেই বলছেন এটি আসলে ভিডিও ফাঁস প্রতিরোধের চেষ্টা।


সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে প্রবল আলোড়ন শুরু হয়েছে। অনেকেই এ ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় রাষ্ট্রীয় কেলেঙ্কারি বলে অভিহিত করছেন। এখন পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ বা সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।


অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ তাদের বিবৃতির শেষে বলে, “হ্যাঁ, আমরা লড়াই চালিয়ে যাব আপনার সাহায্য থাকুক বা না থাকুক। কিন্তু আপনার বিবেককে চিরকাল ইন্টারনেটের অপরিচিত মানুষের ওপর ছেড়ে দিতে পারেন না।”


 যে কোনো মুহুত্বে ভিডিওটি প্রকাশের কথা রয়েছে। অগণিত মানুষের চোখ এখন সেই সময়ের দিকে, যেখানে হয়তো ভয়ের চাদর সরিয়ে সত্যের মুখ দেখা যাবে।  


আমরা আগেও ভয়ের মুখোমুখি হয়েছি। আমরা দেখেছি হুইসল-ব্লোয়ারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, অ্যাকটিভিস্টদের শিকার করা হয়েছে, নিরপরাধ মানুষদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে শুধু সঠিক কাজ করার জন্য। কিন্তু এমন ভয় আমরা আগে কখনো দেখিনি। এটা আলাদা ছিল। এটা কেবল চাকরি বা সুনাম হারানোর ভয় ছিল না। এটা এমন এক ধরনের ভয় ছিল, যা মানুষকে মনে করায় মৃত্যুই হয়তো কথা বলার চেয়ে নিরাপদ। আমরা তাদের ভয়কে বুঝি। তাই আমরা এইবার সীমিত, প্রচণ্ডভাবে সম্পাদিত (রেডাক্টেড) প্রমাণের একটি ক্ষুদ্র অংশই শেয়ার করেছি। কোন মুখ নয়। কোন শনাক্তযোগ্য তথ্য নয়। শুধু এতটুকু যাতে বাংলাদেশের মানুষ সেই বিশাল বরফখণ্ডের চূড়াটুকু দেখতে পায় এতদিন সবার চোখের সামনেই লুকিয়ে ছিল।


এই ভিডিওতে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভাষা সংযত রেখেছি। আমরা যে ঘটনাগুলো ডকুমেন্ট করেছি, তার অনেকগুলো এতটাই নির্দিষ্ট, এতটাই ভয়ানক, যে আমরা সেগুলো প্রকাশ্যে প্রকাশ করিনি কারণ আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমদের সুরক্ষা দিতে পারি না।


উদাহরণস্বরূপ, আমরা একটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা বাদ দিয়েছি যেখানে এক নারী ক্রু সদস্যকে এক ক্যাপ্টেন ষধুড়াবৎ-এর সময় গলাধরে তার রুমে নিয়ে গিয়েছিল।


ভিকটিম বিশ্বাস করেন, এটি প্রকাশ করা মানেই তাকে সহজেই শনাক্ত করা যাবে এবং বাস্তব জীবনে তাকে সহ্য করতে হতে পারে সহিংসতা, এমনকি আরও খারাপ কিছু। আমরা তার জীবন কিংবা তার মতো অন্যদের জীবনকে নাটকীয় প্রভাব তৈরির জন্য জুয়া খেলতে পারি না। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু শিকারিদের নামও এই মুহূর্তে প্রকাশ করিনি। কিন্তু ভুল বুঝবেন না: তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ তালিকায় ইতিমধ্যেই রয়েছে। এবং তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব নিঃসন্দেহে, নির্মমভাবে, আগাম কোন সতর্কতা ছাড়াই। 


স্পষ্টভাবে বলছি: আমরা আশা করি না আপনি, বা আপনার গণমাধ্যম, বা আপনার জনগণ এটা সিরিয়াসলি নেবেন। স্পষ্টভাবে বললে, আমরা বাংলাদেশের সামষ্টিক উদাসীনতা, রাজনৈতিক প্রহসন, এবং ভিকটিমদের চুপ করিয়ে দেওয়ার প্রবণতায় হতাশ। আমরা পুঁজিবাদী ও রাষ্ট্রনায়কদের আঁকা কাল্পনিক সীমানায় বিশ্বাস করি না। আমাদের কাছে সীমান্তের কোন মূল্য নেই। আমাদের কাছে শুধুই বিচার গুরুত্বপূর্ণ। এবং যারা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব তাদের পাশে দাঁড়াতে কারণ নিপীড়িতদের উপেক্ষা করা আমাদের স্বভাব নয়। হ্যাঁ, এই দানবদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব আপনার সাহায্য থাকুক বা না থাকুক। কিন্তু আমরা চিরকাল এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারি না।


আপনার বিবেককে চিরকাল ইন্টারনেটের অপরিচিত মানুষের ওপর ছেড়ে দিতে পারেন না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এ আরও ৫০ জন নতুন নারী ক্রু সদস্য যোগ দিতে যাচ্ছেন। আমরা প্রার্থনা করি আমাদের ভিডিও অন্তত এতটুকু ভয় ছড়াতে পারুক, যাতে এই শিকারিরা নতুন প্রজন্মের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস না পায়। কারণ এই ব্যাধি? এটা থামবে না— তক্ষণ না আপনার নিজের সমাজ রুখে দাঁড়ায়। 


এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. মো. সাফিকুর রহমান এর মুঠো ফোনে কল দিতে তিনি রিসিপ করেনি। এমকি ক্ষুর্দে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর পাওয়া যায়নি।


আরএক্স/