প্রকল্প পরিচালক তৌহিদুলের পেটে ১০ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৪ অপরাহ্ন, ২৩শে জুলাই ২০২৫

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ নামের জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি এখন দুর্নীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাতের কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগের তীর সরাসরি অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ারের দিকে। মাত্র ২ মাস ৭ দিনে দায়িত্বে থেকে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর প্রকল্প পরিচালক এএসএম শফিউল আলম তালুকদার বদলি হয়ে যান জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ডে। তার জায়গায় ২৩ এপ্রিল ২০২৫ সালে অতিরিক্ত দায়িত্বে আসেন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার। প্রকল্পটি ২৪ মে একনেকে পুনঃপাস হওয়ার পর থেকেই নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে।
ডিপিপি অনুযায়ী ফিল্ড অফিসার নিয়োগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং সিলেকশন কমিটির অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অথচ এসব নিয়ম উপেক্ষা করে তৌহিদুল আনোয়ার প্রায় ৫০ জন ফিল্ড অফিসার, ফিল্ড সুপারভাইজার, মাস্টার ট্রেইনার নিয়োগ দিয়েছেন গোপনে, কোনো বৈধ সভা ছাড়াই। অভিযোগ আছে, এ নিয়োগের মাধ্যমে তিনি প্রায় ৮ কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যে হাতিয়ে নেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ফাইলপত্রে দেখা যায়, জুন মাসে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে জানুয়ারি ২০২৫ থেকে যা চরম অনিয়ম। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছেন প্রশাসনিক উপ-প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম এবং বাজেট ও অর্থ বিভাগের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রশিদ আল মামুন।
অভিযোগ আছে, প্রকল্প পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ারের পিএস মো. রাশেদুল ইসলাম শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত নামে-বেনামে ৪০০টির বেশি ভূয়া একাউন্ট তৈরি করে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এরপর থেকে তিনি অফিসে আর আসেন না। এই অর্থ উত্তোলনে প্রকল্প পরিচালক নিজেই স্বাক্ষর করে ৬৪ জেলার উপ-পরিচালকদের বেতন প্রত্যয়ন চিঠি পাঠান। এ বিষয় পিএস মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার স্যারের নির্দেশ সব কিছু করা হয়েছে। এই দায় নিতে হলে স্যার নিবেন। আপনি তার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন।
শুধু নিয়োগই নয়, বদলি প্রক্রিয়াতেও ব্যাপক লেনদেনের অভিযোগ আছে। বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের অন্য জেলায় পোস্টিং দিয়ে তৌহিদুল আনোয়ার আরও প্রায় ২ কোটি টাকা বাণিজ্য করেন বলে জানা গেছে। কোনো বৈধ কমিটি বা সভা ছাড়াই এসব আদেশ জারি হয়।
এই অনিয়মের কারণে তৌহিদুল আনোয়ারকে ৩০ জুন বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক পদে বদলি করা হয়। তবে বদলিতে সন্তুষ্ট নয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মচারীরা। ২ জুলাই তারা ঢাকার আগারগাঁও, বায়তুল মোকাররম ও চট্টগ্রাম অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন। তাদের দাবি, শুধু বদলি নয় তৌহিদুল আনোয়ারকে বরখাস্ত করতে হবে।
এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাজ্জাদুল হাসানকে ২৮ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার স্বাক্ষরেই বিতর্কিত নিয়োগকৃতদের চেক ইস্যু হয়। বর্তমানে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে আছেন যুগ্ম সচিব এস এস তরিকুল ইসলাম, যিনি ১৭ জুলাই আগারগাঁও অফিসে অফিস করেছেন।
সূত্র জানায়, এই দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হবে যদি সংশ্লিষ্ট নিয়োগপত্র, বদলি আদেশ, বেতন-ভাতার চেক ও হিসাবের নথিপত্র তলব করা হয়। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব উদ্দীন প্রামানিক, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহম্মদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান ও সচিব মো. ইসমাইল হোসেন।
বর্তমানে তৌহিদুল আনোয়ার ও তার সহযোগীরা অনেকটাই নীরব। তবে তাদের অনিয়মের ছায়া পড়েছে সদ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের উপরও। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার দৈনিক জনবাণীকে বলেন, আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবো। আপনাকে দেখে নিবো। আপনি কিভাবে ঢাকায় সংবাদিকতা করেন। জীবনের ভয় থাকলে নিউজ বন্ধ করুন। না হলে এই বয়সে জীবন হারাবেন।
আরএক্স/