উৎসব ছাড়াই চুয়াডাঙ্গায় বই বিতরণ, নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
আফজালুল হক, চুয়াডাঙ্গা: শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়ে বিদ্যালয়গুলোতেও কোন অনুষ্ঠানকিতা ছাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে বই বিতরণ কার্যক্রম। শীতের সকালে উৎসবের আমেজেই শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছে। বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা তারা। নতুন বই বুকে জড়িয়ে বাড়ির পথ ধরেছে শিক্ষার্থীরা। ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন বই হাতে পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও খুশি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হলেও করোনার সংক্রমণের কারণে গতবারের মতো এবারও উৎসব করে বই দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেয়া হবে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিস।
শনিবার (০১ জানুয়ারী) সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের ঝিনুক মাধ্যিমক বালিকা বিদ্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার সঙ্গে থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণে অংশ নেন। সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসা চত্বরে বই বিতরণে অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভুইয়া। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মাধ্যিমক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার সাহা, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উত্তম কুমার কুণ্ডু, চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হাজী মীর জান্নাত আলী সহ সকল শিক্ষকবৃন্দ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থী চাহিদা অনুযায়ী ৬ লাখ ১৬ হাজার ৫৫১ বই আমরা পেয়েছি। আজ থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। তিনদিনের মধ্যে বই বিতরণের কার্যক্রম শেষ হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা মাধ্যমিক অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী (৩৫%) বই আমরা পেয়েছি। ১৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৭৫ এর মধ্যে পেয়েছি ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৪ বই। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বই চলে আসবে। বই উৎসবের উদ্ভোদনী অনুষ্ঠান ছাড়ায় শনিবার থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে বই দেয়া শুধু করেছি। ধাপে ধাপে দেয়া হবে। নতুন বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, সবার হাতে নতুন বই। কেউ বুকে আগলে রেখেছে, কেউ ব্যাগে সযত্নে রেখেছে।
সবাই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আহসান শাফিন সাথিন তাহা বই খুলে এক পলক দেখে নিতে ভুল করেনি। বছরের নতুন বই পেয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় চুয়াডাঙ্গা ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আহসান শাফিন সাথিন তাহা। সে বলে, প্রথম দিনেই বাবার সাথে স্কুলে এসেছি। ‘বছরের শুরুতে নতুন বই পেয়ে অনেক খুশি লাগছে।’
নতুন বইয়ের আনন্দ নিয়ে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা রিজিয়া খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে। তারা জানায়, বছরের প্রথমদিনই হাতে বই পাওয়ার আনন্দটা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। নতুন বই পেয়ে বছরের শুরু থেকেই পড়া শুরু করে দিবো। নতুন বইয়ের ছবি ভীষণ ভালো লাগে।
আহসান আলম নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান,আমার ছেলের সাথে স্কুলে এসেছি। নতুন বই পেয়ে অনেক খুশি।আমাদের সময়ে বই ফ্রিতে পাওয়া যেত না। বাবা বাজার থেকে বই কিনে আনতেন। এখনকার শিক্ষার্থীদের বইয়ের জন্য আর অপেক্ষা করতে হয় না। সরকার দিনই বিনামূল্যে সবার হাতে বই পৌঁছে দিচ্ছে। বছরের শুরুতে নতুন বই পেয়ে শিশুদের উৎসবের বছরের শুরুতে শিশুদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কারণ বছরের প্রথমেই নতুন বই হাতে পেয়ে বাচ্চারা আগ্রহের সঙ্গে পড়া শুরু করে। শিক্ষকরাও পাঠদানে উৎসাহী হোন। বছরের প্রথমে বই পাওয়ায় বছর শেষ হওয়ার আগেই সিলেবাস শেষ করা যায়।
শারমিন হক নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার দুই মেয়ে গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকেই অনেক উচ্ছ্বসিত। সকাল সকাল তারা রেডি হয়ে আমাকে সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছে বই নিতে। নতুন বই পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছে। তাদের মধ্যে একটা ঈদ ঈদ আনন্দ চলছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান বলেন, করোনার জন্য বই উৎসবের অনুষ্ঠানিতা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বই দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অতি উতসাহীত হয়ে বই গ্রহন করছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পৌছে দেয়ার কার্যক্রম চলছে।